Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

উচ্ছেদে ফিরে এল ‘সানশাইন’

পরদিন, বুধবার করুণাময়ীতে গিয়ে দেখা গেল, পুরসভা ও হকারদের পারস্পরিক দোষারোপে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছে।

অভিযান: দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরে চলছে করুণাময়ী সাফাইয়ের কাজ।

অভিযান: দোকান গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরে চলছে করুণাময়ী সাফাইয়ের কাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০৩
Share: Save:

জবরদখল হটিয়ে পথচারীদের ফুটপাথের অধিকার ফিরিয়ে দিল বিধাননগর পুরসভা। মঙ্গলবার রাতভর চলে এই উচ্ছেদ অভিযান। ডাম্পার, ক্রেন নিয়ে এসে একের পর এক স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান ভেঙে দেওয়া হয় ওই অঞ্চলে। অভিযানের শেষে পুরসভা জানিয়েছে, যে রাস্তা থেকে দোকান সরানো হয়েছে, সেখানে কাউকে বসতে দেওয়া হবে না। এ দিকে, এ নিয়ে এ দিন ভিতরে ভিতরে চাপা ক্ষোভ জমা হলেও বাইরে তার তেমন কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। বিরোধী দলের কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে এর নিন্দা করলেও, হকারদের একটি প্রতিবাদ মিছিল ছাড়া বুধবার রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে মুখ খুলতে দেখা যায়নি কাউকে।

তবে সল্টলেকের সাধারণ বাসিন্দাদের অধিকাংশ পুরসভার এই পদক্ষেপে রীতিমতো খুশি বলে মনে করছে পুরসভার একাংশ। সল্টলেকে উন্মুক্ত ফুটপাথের দাবি দীর্ঘ দিনের। অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ উপলক্ষে গোটা সল্টলেককে সাজাতে রাস্তা ও ফুটপাথ থেকে হকার সরানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময়ে একদল বাসিন্দা হকারমুক্ত ফুটপাথের দাবি তুলেছিলেন। তবে অনেক দিনের মধ্যে এত বড় উচ্ছেদ অভিযান দেখেনি এ শহর। অনেকের মতে, সল্টলেকের এই অভিযান মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৬ সালের অপারেশন সানশাইনের কথা।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে একের পর এক পুলিশের গাড়ি জড়ো হয় করুণাময়ীতে। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান শবরী রাজকুমারের নেতৃত্বে পুলিশ রাস্তার ধার থেকে লোক সরাতে শুরু করে। করুণাময়ী মোড়ের একাংশের আলো নিভিয়ে, গাড়িগুলিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। শুরু হয় দোকান ভাঙা। সেই তালিকায় বেনফিশের দোকান, ওয়ার্ড অফিস সবই ছিল। প্রতিবাদে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে জড়ো হন হকার ও স্থায়ী দোকানদারেরা। তবে বিশাল পুলিশ বাহিনীর কাছে প্রতিবাদ স্থায়ী হয়নি। কয়েক জন দোকানদারকে আটকও করা হয়।

দোকানের ভিড়ে এমন ভাবেই দখল হয়ে ছিল ফুটপাথ (ফাইল চিত্র)।

অভিযানের পরদিন, বুধবার করুণাময়ীতে গিয়ে দেখা গেল, পুরসভা ও হকারদের পারস্পরিক দোষারোপে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছে। উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে এ দিন লাবণি মোড় থেকে মিছিল করেন হকারেরা। তাঁদের অভিযোগ, বর্তমান শাসক দলই এক সময়ে হকারদের নিয়ে আন্দোলন করেছিল। ক্ষমতায় এসে তারাই রুজি কাড়ছে। পুনর্বাসন না দিলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটার এমনকী, আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।

করুণাময়ী মোড়ের কাছে ফুটপাথের দোকানদারদের দাবি, তৃণমূল পরিচালিত গত পুরবোর্ডের অনুমতির ভিত্তিতেই তাঁরা ব্যবসা করছেন স্থায়ী দোকান হিসেবে। সৌন্দর্যায়নের পক্ষে তাঁরাও। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, কোনও নোটিস না দিয়েই দোকান ভাঙা হয়েছে। এতে বহু টাকার জিনিস নষ্ট হয়েছে। পুরসভা সময় দিলে, তাঁরা নিজেরাই জিনিস সরিয়ে নিতেন। পুরসভার দাবি, ওই দোকানগুলির ট্রেড লাইসেন্স নেই। ফলে নোটিস দেওয়ার প্রশ্ন নেই। পুরসভার তরফে দোকানদারদের বারবার সরতে বলা হয়েছিল। এ দিকে হকারদের প্রকাশ্যে সমর্থন করে তৃণমূলের একাংশের দাবি, পুনর্বাসন না দিয়ে দল নীতি ভাঙলে মানুষের বিশ্বাস হারাবে। এ নিয়ে বিধায়ক সুজিত বসুকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত জানান, অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ উপলক্ষে গোটা সল্টলেককে সাজাতে রাস্তা ও ফুটপাথ থেকে হকার সরানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। বারবার বলা সত্ত্বেও তাঁরা সরেননি। কেউ মনে করলে আদালতে যেতে পারেন। আদালত যেমন নির্দেশ দেবে পুরসভা তা করবে। তবে হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সদুত্তর দিতে পারেনি পুরসভা।

অথচ সল্টলেক সাজাতে ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরুর সময়ে বিধাননগর পুরসভা জানিয়েছিল, পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা চলছে। পুরমন্ত্রী ও খাদ্যমন্ত্রীও জানিয়েছিলেন বিকল্প জায়গার বিষয়টি দেখা হবে। কিন্তু তা হয়নি।

উচ্ছেদের প্রতিবাদে হকারদের মিছিল। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে

সিপিএম নেত্রী রমলা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সৌন্দর্যায়ন হোক, ফুটপাথ উন্মুক্তও করা হোক। কিন্তু রাজ্যে কর্মসংস্থানের বেহাল দশা। এই অবস্থায় আগে ব্যবসায়ীদের বিকল্প ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আচমকা এমন ঘটনা অমানবিক।’’ তিনি জানান, সিপিএম এর প্রতিবাদে, বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে পথে নামবে। একই ভাবে সল্টলেকের বিজেপি নেতা প্রভাকর মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা সৌন্দর্যায়নের পক্ষে। কিন্তু কারও রোজগার বন্ধ করে নয়। আগে বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক।’’

হকারদের পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে বিধাননগর টাউন কংগ্রেস নেতৃত্বও। তবে বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ যে এই উচ্ছেদের পক্ষে, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সল্টলেকে বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের নেতা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে পুরসভার এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy