প্রহরা: মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কাছে গার্ডরেল দিয়ে এ ভাবেই আটকানো হয়েছে আদিগঙ্গায় যাওয়ার পথ। ছবি— সুদীপ্ত ভৌমিক।
দাবিদাওয়া আদায়ে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মঙ্গলবার আদিগঙ্গার জলে ‘ঝাঁপ’ দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। সেই ঘটনার পরে নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টো দিকে, অর্থাৎ আলিপুর জেলের পাঁচিল সংলগ্ন রাস্তায় গার্ডরেল বসিয়েছে কলকাতা পুলিশ। যাতে ওই পথ ধরে কেউ আদিগঙ্গায় পৌঁছতে না পারে। সেই সঙ্গে আদিগঙ্গায় নৌকা নিয়ে পুলিশি টহলদারিও শুরু হয়েছে।
একাধিক দাবিদাওয়া নিয়ে স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য আদিগঙ্গা পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। সে দিনই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। কিন্তু ওই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে। আর তখনই নড়েচড়ে বসে পুলিশও।
পুলিশ সূত্রের খবর, আদিগঙ্গায় নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে এ দিন লালবাজারে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির উল্টো দিকে, অর্থাৎ আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের পাঁচিল সংলগ্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই আদিগঙ্গায় যাওয়ার রাস্তা গার্ডরেল দিয়ে আটকানো হয়েছে। আদিগঙ্গার পাড়ে সাতটি পুলিশ পিকেট বসানো ছাড়াও জলে নৌকা নামিয়ে টহল দেওয়াও শুরু হয়েছে। যে দু’টি পুলিশ কিয়স্ক ওই এলাকায় রয়েছে, সেগুলিকেও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসে নিজেদের সমস্যার কথা বলতে না-পারলে আদিগঙ্গায় নেমে পড়ার মতো অভিনব প্রতিবাদ ভবিষ্যতে আরও হবে বলে জানালেন শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘দু’-এক দিনের মধ্যে ফের অভিনব আন্দোলন করব। মুখ্যমন্ত্রী তো বহু সংগঠনের সঙ্গেই কথা বলছেন। উনি যে আমাদের প্রতি মানবিক, তা আমরা জানি। আমরাও ওঁর সঙ্গে আমাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।’’ তবে আদিগঙ্গায় নেমে পড়ার মতো ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থার খামতির দিকটিও তাঁরা তুলে ধরেছেন বলে মনে করছেন মইদুল। তাঁর কথায়, ‘‘এ ভাবে আদিগঙ্গা পেরিয়ে ও পাড়ে তো যে কেউ উঠে যেতে পারে।’’
সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের মধ্যে সাত জন আদিগঙ্গায় ‘ঝাঁপ’ দিয়ে অন্য পাড়ে ওঠার চেষ্টা করেন। তবে আদতে ২১ জনের একটি দলের সে দিন জলে নামার কথা ছিল। সাত সদস্যের মোট তিনটি দল আদিগঙ্গা পেরিয়ে উল্টো দিকে পৌঁছবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু প্রথম দলটি জলে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় বাকিরা আর আদিগঙ্গায় নামার সুযোগ পাননি। মইদুল বলেন, ‘‘শিক্ষামিত্রেরা ২৪০০ টাকা করে মাসিক ভাতা পেতেন। তা-ও সেই বেতন ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে বন্ধ। খুব কম বেতন পান বৃত্তিমূলক শিক্ষকেরা। আনএডেড মাদ্রাসার শিক্ষকেরা কোনও বেতনই পান না। এঁদের কারও পক্ষে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এঁরা সকলে এখন মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’’
তবে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকারের আইন অনুযায়ী শিক্ষামিত্র পদটির অবলুপ্তি ঘটেছে। তার পরে কেন্দ্র এই শিক্ষামিত্রদের জন্য ভাতা বা অন্য কোনও ধরনের অর্থ বরাদ্দ করেনি। তাই আন্দোলন করতে হলে কেন্দ্রের কাছে গিয়ে করুক।’’ যদিও বিক্ষুব্ধ শিক্ষকদের দাবি, বর্তমান সরকার ‘এডুকেশন ভলান্টিয়ার’ হিসেবে ২০১৩ সাল থেকে তাঁদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। শিক্ষকদের মতোই ভোটের কাজ থেকে শুরু করে পড়ানো, স্কুলছুট পড়ুয়াদের স্কুলে ফিরিয়ে আনা-সহ সব কাজই করতে হয় তাঁদের।
আদিগঙ্গায় নেমে পড়ার মতো ঘটনার সমালোচনা করে পার্থবাবু এ দিন আরও বলেন, ‘‘কারও বুদ্ধিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে পরিকল্পনামাফিক এই হামলা মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। এই ধরনের ঘটনা কারা সংগঠিত করছে, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে এমন রাজনৈতিক ফন্দি যাতে আর কেউ না আঁটতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে হামলা করাটা কিন্তু কোনও শিক্ষকের কাজ নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy