সেই এলাকা। (চিহ্নিত) পড়ে রয়েছে কাটা গাছের অংশ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
গাছ কাটা অপরাধ। সংরক্ষণ করতে হবে জলাশয়। এমন নির্দেশ প্রায়ই দেওয়া হয় পুর প্রশাসন এবং নবান্ন থেকে। তবুও জলাশয় ভরাট করার প্রবণতা বন্ধে হুঁশ ফেরেনি। অবাধে চলছে গাছ কাটাও। গাঁ-গঞ্জে শুধু নয়, খোদ দক্ষিণ কলকাতার সানি পার্কেও এমনই ঘটেছে। অভিযোগ, মাত্র গত কয়েক দিনে গোটা তিনেক বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ৩/১, সানি পার্কের ঠিকানায়। পুরসভা, বন ও পরিবেশ দফতরের অনুমতি ছাড়া শহরের ভিতরে গাছ কাটা অপরাধ। তা সত্ত্বেও এমন হল কী করে? পুর প্রশাসনের জবাব, পাঁচিলের ভেতরে কে কী করছেন, তা জানা যায় না। খবর পেয়েই পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
৭২ কাঠা জায়গায় সানি পার্কের এই ঠিকানার সব কিছুই এক সময় ছিল ছবির মতো। চারধারে সবুজ বাগান। ছোট থেকে বড় নানা ধরনের গাছগাছালিতে ভরে থাকা ওই পরিবেশে নিত্যদিনই আনাগোনা ছিল হরেক রকমের পাখির। সেই পরিবেশ এখন কি অবলুপ্তির পথে? এলাকাবাসীর কথায়, বছর কয়েক আগে থেকেই একটু একটু করে ধংস হয়ে চলেছে প্রকৃতির সেই সৃষ্টি। ওই ঠিকানায় নজরকাড়া একটি বাড়িও ছিল। তা-ও আর নেই। উল্টো দিকেই এক আবাসনে থাকেন প্রবীণ চিত্রশিল্পী স্বরূপ মুখোপাধ্যায়।
চোখের সামনে গাছ কাটা দেখে মর্মাহত তিনি। বললেন, ‘‘শীত, গ্রীষ্মে বাড়ির বারান্দা থেকে কত ছবি এঁকেছি ওই সব গাছের। প্রকৃতির, বাড়িটার। যা কিছু আসল, সব কিছুই চলে যাচ্ছে। কেবল ছবিগুলো রয়ে গিয়েছে।’’ যেটুকু অবশিষ্ট রয়েছে তা বাঁচিয়ে রাখতে চান তিনি। সরকার, পুর প্রশাসন একটু নজর দিলেই তা সম্ভব বলে মনে করেন স্বরূপবাবু।
আর পরিবেশপ্রেমী নব দত্তের আশঙ্কা, ‘‘গাছ কাটার প্রবণতা যে হারে বাড়ছে তা ভয়াবহ। কোথাও সৌন্দর্যায়নের নামে, কোথাও বা বিল্ডিং গড়া, রাস্তা চওড়া করতে অবাধে কাটা হচ্ছে গাছ। সরকারও তা করছে। তাতে উৎসাহিত হয়ে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে বেসরকারি ভাবেও গাছ কাটা চলছে।সানি পার্কের ঘটনা তাতেই আরও একটা সংযোজন।’’
কেন কাটা হল গাছ? নিজের জায়গায় থাকলেও ইচ্ছে করলেই গাছ কি কাটা যায়?
‘‘কখনওই নয়’’— মন্তব্য, পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমারের। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার অনুমতি না নিয়ে পাঁচিলে ঘেরা এলাকার ভিতরে গাছ কাটা হয়েছে। খবর পেয়েই গত বুধবার পুরসভার লোক সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় কেউ ঢুকতে পারেননি।’’ পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে পুরসভা। কেন কাটা হচ্ছে গাছ? তা হলে ওখানে কি কোনও নির্মাণ হবে? পুরসভার বিল্ডিং দফতরের এক আধিকারিক জানান, ওই ঠিকানায় কোনও বিল্ডিং তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যদিও এলাকার খবর, বছর পাঁচেক আগে সেখানে বহুতল তৈরির পরিকল্পনা হয়। তার জন্য পুরনো বাড়ি ভাঙাও হয়। সবুজ ধ্বংস নিয়ে স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদও হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোয় আটকে যায় সেই প্রকল্প। যদিও তার পর থেকে বেশ কয়েকটা গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ।
মেয়র পারিষদ জানান, শুক্রবারও পুরসভার পার্ক ও উদ্যান বিভাগের উদ্ভিদবিদ্ এবং বিল্ডিং দফতরের কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। যাঁরা ওই ঠিকানায় ছিলেন তাঁরা জানিয়েছেন, গাছ তিনটি ভেঙে পড়ত বলে কাটা হয়েছে। যদিও তা বেআইনি বলেই মনে করছে পুরসভা। দেবাশিসবাবুর কথায়, কোন গাছ ভেঙে পড়তে পারে, তা ঠিক করেন উদ্ভিদবিদ।
কেউ মনে করলেই তা কাটতে পারেন না। স্থানীয় বরোর চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়লেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা নজর রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy