প্রতীকী ছবি
বিরল রোগ-সচেতনতা দিবস হিসেবে ধরা থাকে ফেব্রুয়ারির শেষ দিনটিকে। এ বছর পেরিয়ে গেল সেই দিন। রোগাক্রান্তদের নিয়ে তৈরি বিভিন্ন সংগঠন এ বারও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের কাছে চিকিৎসার ব্যয়ভার কমানো এবং সচেতনতার প্রসারে দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন রাখল। তবে সরকার সেই আবেদনে কতটা সাড়া দেবে, সন্দিহান পরিবারগুলি। যার মূল কারণ, বিরল রোগ নিয়ে ২০১৭ সালে তৈরি হওয়া জাতীয় নীতি থেকে অনেকটাই পিছনে হাঁটছে সদ্য সামনে আসা খসড়া জাতীয় নীতি।
২০১৭ সালের জাতীয় নীতিতে ১০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের যে যৌথ প্রয়াসের উল্লেখ ছিল, নতুন নীতিতে তা সম্পূর্ণ উধাও। বিরল রোগীদের অভিভাবকদের একটি সংগঠন ‘রেয়ার ডিজ়িজ়েস অব ইন্ডিয়া’র এক প্রতিষ্ঠাতা প্রসন্ন শিরোল বলছেন, “নতুন নীতিতে সরকারের কোনও আর্থিক প্রতিশ্রুতিই নেই। নেই রোগীদের প্রতি ন্যূনতম সহানুভূতিও।’’
এমন দিশাহীন জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির জন্য অর্থনীতিবিদেরা দায়ী করছেন সরকারের অবহেলাকেই। তাঁদের মতে, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে এ দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১.২৮ শতাংশ বরাদ্দ হয়েছিল স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। ২০১৬-’১৭-তে তা ছিল ১.১৭ শতাংশ। আর ২০১৫-’১৬-তে ১.০২ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকার আশ্বাস দিয়েছে, ২০২৫ সালে জিডিপি-র ২.৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হবে স্বাস্থ্যখাতে। অথচ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, স্বাস্থ্যখাতে আমেরিকা সর্বশেষ বরাদ্দ করেছে জিডিপি-র প্রায় ১৮ শতাংশ! দু’দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের এই পার্থক্যই গড়ে দিচ্ছে বৈষম্য, বলছেন অর্থনীতিবিদেরা।
রোগী-নিরাপত্তা এবং বিরল রোগ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় গবেষণায় যুক্ত ছিলেন চিকিৎসক শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক। তাঁর মতে, ‘‘মান্ধাতা আমলের নীতি আঁকড়ে লাভ নেই। বিরল রোগের ওষুধ নির্মাতা সংস্থাগুলি প্রায় সবই বিদেশি। এ দেশে ব্যবসা করতে চাইলে প্রথমে তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল দিতে হয়। সরকারের উচিত ট্রায়ালের নিয়ম সরল করা। পাশাপাশি, এই ধরনের ওষুধে পণ্য-পরিষেবা কর এবং আমদানি শুল্কে ছাড় দিতে হবে।’’ শুভ্রজ্যোতিবাবুর মতে, এত টাকার তহবিল গঠন সম্ভব নয় বলে কেন্দ্র বা রাজ্য হাত তুলে নিলে সমাধান আসবে না। অন্য পথগুলি নিয়েও ভাবনাচিন্তা প্রয়োজন।
চলতি বছরেই দিল্লি সরকার ‘রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম’ প্রকল্পের অধীনে ‘নিওনেটাল আর্লি ইভ্যালুয়েশন ভিশন’ (এনইইভ) চালু করেছে। এর মাধ্যমে সদ্যোজাতের বধিরতা, হৃদ্যন্ত্র এবং থাইরয়েডের জটিল অসুখ থাকলে সরকারি হাসপাতালে তা চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু হবে।
কী করছে এই রাজ্য? রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের খবর, বছর দেড়েক আগে বিরল রোগ নিয়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে। তাতে রয়েছেন সরকারি হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক। কমিটির বৈঠকে সারা রাজ্য থেকে বিরল রোগের চিকিৎসার সাহায্য চেয়ে আসা আবেদন নিয়ে আলোচনা হয়। যেগুলি রাজ্যের সাধ্যের বাইরে, সেগুলি পাঠানো হয় কেন্দ্রে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, বিরল রোগের চিকিৎসায় পরিকাঠামো বাড়াতে চেষ্টা করছে সরকার। সদ্যোজাতের বধিরতার সমস্যা থাকলে তা বোঝা যায় ব্রেনস্টেম অডিটরি ইভোকড রেসপন্স (বিএইআর) পরীক্ষায়। এত দিন শুধু এসএসকেএমে সেই পরীক্ষা হত। বেশ কয়েকটি সরকারি
মেডিক্যাল কলেজেও ওই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ ছাড়াও সরকারি হাসপাতালে দু’-তিন দিন বয়সি শিশুর পরীক্ষা করে (বার্থ স্ক্রিনিং) তার কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কি না, দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে তাকে
এসএনসিইউ ফলো-আপ ক্লিনিকে দেখা হয়। তার পরেও প্রয়োজন পড়লে পাঠানো হয় ডিস্ট্রিক্ট আর্লি ইন্টারভেনশন সেন্টারে। সেখানকার চিকিৎসকেরা মনে করলে ওই শিশুকে এসএসকেএমে পাঠান। স্বাস্থ্য অধিকর্তার দাবি, ‘‘জেনেটিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা আছে এসএসকেএমে। রক্তের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরীক্ষাও হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। যদি কোনও দম্পতির পরিবারে বিরল রোগের ইতিহাস থাকে, তবে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন সরকারি হাসপাতালে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy