এ ভাবেই প্রতীক্ষা। ছবি: অরুণ লোধ।
জলের জন্য মারামারি এখানে রোজনামচা। এমনিতেই চাহিদা বাড়ছে। তার উপরে গরম বাড়তেই আরও তীব্র হয় মহেশতলা, বজবজ এবং পুজালির জলসঙ্কট। কয়েক বছর ধরেই এই সমস্যা নিয়ে নাজেহাল স্থানীয় পুর-প্রশাসন। এ বার সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী রাজ্য সরকার।
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার এই সমস্যা নিয়ে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, ওই তিন পুরসভার পুরপ্রধান এবং কেএমডব্লিউএসএ-এর আধিকারিকদের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে স্থির হয়েছে তিন মাসের মধ্যে গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প থেকে তাদের অতিরিক্ত জল ওই তিন পুরসভায় পাঠাবে কলকাতা পুরসভা। এ ছাড়া আক্রায় ৩২ এমজি-র একটি জলপ্রকল্প তৈরি হবে। এর থেকে উপকৃত হবে তিনটি পুরসভাই। বজবজে জেএনএনইউআরএম-এর একটি জলপ্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বিরোধীতায়। শুক্রবার অন্য একটি বৈঠকে সেই কাজ দ্রুত শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মহেশতলা, বজবজ এবং পুজালি পুরসভায় পানীয় জল সরবরাহ করে কেএমডব্লিউএসএ। গার্ডেনরিচ ওয়াটার ওয়ার্কস থেকে একটি লাইন দিয়েই জল যায় এই তিন পুর এলাকায়। প্রথমে মহেশতলা। পরে বজবজ এবং শেষে পুজালি জল পায়। পুজালির জলাধারে জল ঢোকে রাতে। সকালে পুরসভা জল সরবরাহ করে। তাও কোনওমতে এক বেলা। এই তিন পুর-কর্তৃপক্ষ অভিযোগ জানাচ্ছেন, গার্ডেনরিচ থেকে জল কম আসায় ওই তিনটি পুরসভার জলাধার ভরছে না।
জলের সমস্যা নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে। তাঁদের অভিযোগ, গত তিন বছরে সমস্যা তীব্র হয়েছে। মহেশতলার দৌলতপুরের বাসিন্দা শেখ ইব্রাহিম জানাচ্ছেন, প্রতি দিন জলের জন্য লড়াই করতে হয়। এই পুরসভায় রয়েছে ৩৫টি ওয়ার্ড। পুরসভা সূত্রে খবর, প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই জলের সমস্যা রয়েছে। সদ্যগঠিত বজবজ পুরসভার উপ প্রধান তৃণমূলের গৌতম দাশগুপ্ত জানান, গরমে জলসঙ্কট আরও বাড়ে। ২০টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদেরই নাজেহাল অবস্থা। প্রায় একই অবস্থা পুজালি পুরসভার ১৫টি ওয়ার্ডেরও। পুরপ্রধান তৃণমূলের ফজলুল হক জানান, চাহিদা মতো জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। খুব কম জল সরবরাহ হয় গোটা পুজালিতেই।
সঙ্কট মেটাতে নানা ভাবে চেষ্টা করছে পুরসভাগুলি। যেমন, পুজালি পুরসভা ভূগর্ভ থেকে দৈনিক ন’লক্ষ লিটার জল তুলছে। গার্ডেনরিচ থেকে দৈনিক আসছে ১১ লক্ষ তিরিশ হাজার লিটার জল। সব নিয়ে মিলছে পুজালির প্রয়োজনের দশ ভাগের এক ভাগ মাত্র। গৌতমবাবু জানাচ্ছেন, বজবজ পুর এলাকা তিন বছর আগেও দৈনিক ৪৫ লক্ষ লিটার জল পেত। এখন মিলছে দৈনিক ১৫ লক্ষ ৯০ হাজার লিটার। যদিও মহেশতলার পুরপ্রধান দুলাল দাস বলেন, ‘‘জল সরবরাহের পরিমাণ কমেনি। সংযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। তাই এই সঙ্কট। ১৪, ২৭, ২৮, ৩১-সহ কয়েকটি ওয়ার্ডে সঙ্কট বেশি।’’
কেএমডব্লিউএসএ সূত্রে খবর, জল সরবরাহের পরিমাণ কমেনি। চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সমস্যা। তা মেটাতে প্রাথমিক ভাবে কলকাতা পুরসভা তাদের অতিরিক্ত জল পাঠাবে তিনটি পুরসভাকে। বজবজ ট্রাঙ্ক রোডের ব্যবসায়ীদের বিরোধীতা মেটাতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। সমস্যা মিটলে প্রকল্পটি এক মাসে সম্পূর্ণ হবে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy