তোড়জোড়: আজ, বৃহস্পতিবার থেকে পথে নামছে সরকারি বাস। তার আগে বুধবার রাজাবাজার ডিপোয় চলছে বাস ধোয়া-মোছা ও জীবাণুনাশের কাজ। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এক যাত্রায় পৃথক ফল!
মোটরযান আইন অনুযায়ী, গণপরিবহণের ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা সরকারের। সেই যুক্তিতে বেসরকারি বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি বছরের পর বছর আটকে থাকলেও অটো-ট্যাক্সির ক্ষেত্রে নিয়মে নাস্তি! অভিযোগ, বাসের ভাড়া বৃদ্ধি আটকে থাকলেও অন্য দুই গণপরিবহণ, অটো এবং ট্যাক্সির ভাড়া যখন-তখন বেড়ে যায় মালিকদের মর্জি অনুযায়ী! যার জেরে আদতে পথে নামা মানুষকেই ভুগতে হয়। দ্বিতীয় দফার প্রশাসনিক কড়াকড়ির পরে আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস-মিনিবাস চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বাসের ভাড়া কী হবে, তা নিয়ে জটিলতা না-কাটায় মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা অনেকের।
বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবি, বাস-মিনিবাসের ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে বার বার আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি কমিটিও তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনও বারই সেই কমিটি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে না। ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “এ বারের পরিস্থিতি আরও খারাপ। তেলের দাম যে ভাবে বেড়েছে, তাতে একটি বাস এক দিন চালাতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হবে। তার মধ্যে ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কিছু না বলে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে হবে। বাস ভর্তি লোক নিয়েও পুরনো ভাড়ায় চালানো সম্ভব নয়। তা হলে ৫০ শতাংশ নিয়ে চালাব কী করে?” ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুর আবার দাবি, “ভাড়া না বাড়লে পথে বাস-মিনিবাস দেখাই যাবে না। তখন বাস না-পেয়ে যাত্রীদের সেই অটো বা ট্যাক্সিতেই গিয়ে উঠতে হবে। সেই সুযোগে অটো বা ট্যাক্সি যেমন খুশি ভাড়া হাঁকবে। বাসের ভাড়া বাড়ানো নিয়ে সরকারের এই টালবাহানায় আদতে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে!”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রথম দফার প্রশাসনিক কড়াকড়ির পরে বাসের ভাড়া না বাড়লেও প্রতি রুটে অটোর ভাড়া বেড়েছিল চার-পাঁচ টাকা করে। রাত বাড়লে সেই বাড়তি ভাড়া ১৫-২০ টাকাও ছাড়িয়ে যেত। অনেকেরই অভিযোগ, অটোয় এত বেশি টাকা দিতে হয়েছে যে, বাসের ভাড়া না বাড়লেও লাভ হয়নি। বাড়তি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন করলেই অটোচালকেরা বলে দিয়েছেন, “লকডাউনের ক্ষতি বুঝে যাত্রীদেরই তো নিজে থেকে একটু বেশি ভাড়া দেওয়ার কথা।” অভিযোগ, ওই সময়ে রাতারাতি ভাড়া বেড়ে গিয়েছিল গড়িয়া-গোলপার্ক, টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জ, যাদবপুর, কসবার একাধিক রুটে। কালীঘাট মেট্রো থেকে গড়িয়াহাট বা কসবা পর্যন্ত ভাড়া হয়েছিল আরও আকাশছোঁয়া। উত্তর কলকাতায় ভাড়া বেড়েছিল উল্টোডাঙা-শোভাবাজার, গিরিশ পার্ক-কাঁকুড়গাছি, কাঁকুড়গাছি-কলেজ স্ট্রিট হয়ে শিয়ালদহ ও বেলেঘাটার মতো একাধিক রুটে। এ নিয়ে একাধিক অভিযোগ সামনে আসার পরেও কিন্তু রুটের ভাড়া বেঁধে দেওয়া নিয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। এর সঙ্গেই চলেছে কাটা রুটে অটো চালানোর দাপট। ইচ্ছেমতো ভাড়া হেঁকেছে ট্যাক্সিও। তবে কোনও ক্ষেত্রেই অটো বা ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে ইউনিয়নের তরফে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
আজ থেকে নাকি আবার একাধিক অটো রুটে তিন-চার টাকা করে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে খবর। ভিআইপি রোড ও বেহালার কয়েকটি রুটে আবার পাঁচ-দশ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
অটোর ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কড়াকড়ি দেখা যায় না কেন? ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ শহরে অটোর তেমন কোনও কেন্দ্রীয় সংগঠনই নেই। সবটাই হয় শাসকদলের মদতপুষ্ট রুটের দাদাদের নিয়ন্ত্রণে। পরিবহণ দফতরেরও রুটগুলির উপরে বিশেষ নিয়ন্ত্রণ নেই। এ বিষয়ে জানতে দক্ষিণ কলকাতার অটো রুটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের। উত্তর কলকাতার অটো রুটগুলির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা আইএনটিটিইউসি নেতা মানা চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, “বাসের ভাড়া বাড়ছে না, তার দায় অটোচালকেরা নেবেন কেন? কিছু যাত্রী চালকদের কথা ভেবেই বেশি ভাড়া দেন।” ভাড়ার এই জটিলতা নিয়ে সরকার কী ভাবছে? পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে ফোন বা মেসেজ করেও উত্তর মেলেনি। পরিবহণসচিব রাজেশ সিংহ শুধু বলেছেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy