দু’দিন আগেই এসেছেন নতুন ভাড়াটে। এক তরুণ ও তরুণী। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এখনও হাতে আসেনি বাড়ির মালিকের। তৈরি হয়নি চুক্তিপত্রও। তারই মধ্যে সোমবার ওই তরুণকে নিজের ঘরে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেল। এ দিন গ্রিলের গেট ভেঙে ঢুকে বাড়িওয়ালা ও প্রতিবেশীরা দেখেন, শোয়ার ঘরে মেঝের উপরে পাতা বিছানায় পড়ে রয়েছেন ওই যুবক। গলায় ধারালো অস্ত্রের ক্ষত।। দেওয়াল, মেঝে ও ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ রক্ত। সঙ্গী তরুণী এক পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে চলেছেন। সোমবার যাদবপুর থানা এলাকার বিজয়গড়ের ঘটনা। লালবাজার সূত্রের খবর, ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট আত্মহত্যার দিকে ইঙ্গিত করলেও বেশ কিছু খটকা রয়েছে পুলিশের মনে। তা কাটাতেই ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, সুমিত গুরুঙ্গ ও নম্রতা দোরজি নামে উত্তরবঙ্গের ওই দুই তরুণ-তরুণী দিন দুই আগে ৩/৩বি, বিজয়গড়ের একতলায় ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করেন। নিজেদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিলেও তদন্তে জানা যায়, তাঁরা ‘লিভ ইন’ করতেন। তরুণী লেক এলাকার একটি বিউটি পার্লারে কাজ করেন। তবে সুমিত চাকরি করতেন না। চাকরির জন্য কোনও প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
পুলিশ জানায়, নম্রতা যে দালালের মারফত ওই বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন, এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ তাঁকে ফোন করে বলেন, সুমিত আত্মহত্যা করেছেন। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তিনি চাবি খুঁজে পাচ্ছেন না। রবিবার রাতে ভিতর থেকে তালা দিয়ে সুমিত সেটি কোথায় রেখেছেন, তিনি জানেন না। দরজা ভাঙতে হবে।
খবর পেয়ে ওই দালাল ফোন করেন বাড়ির মালিক ইন্দ্রাশিস দাসকে। তিনি পড়শিদের সঙ্গে নিয়ে একতলার গ্রিলের গেট কাটেন এবং ভিতরে ঢুকে সুমিতকে ওই অবস্থায় দেখেন। তার পরেই খবর দেন থানায়।
পুলিশের কাছে ওই তরুণী দাবি করেছেন, রবিবার রাতে দু’জনেই মদ্যপান করেছিলেন। তার পরে তাঁদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। যার জেরে সুমিত নিজের গলার বাঁ দিকে ছুরি চালিয়ে দেন। অঝোরে রক্ত পড়তে থাকে। কিন্তু সদর দরজা ভিতর থেকে তালাবন্ধ থাকায় তিনি বেরিয়ে কাউকে খবর দিতে পারেননি। দরজার চাবিও খুঁজে পাননি। তখন নিজেই সুমিতের বাঁ কানের নীচে গলার কাটা অংশ সূচ-সুতো দিয়ে সেলাই করে তার উপরে সেলোটেপ দিয়ে রক্ত আটকানোর চেষ্টা করেন।
পড়শিরাও জানান, রবিবার রাতে একতলার ওই ঘর থেকে চেঁচামেচি শুনেছিলেন তাঁরা। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর গোলমাল ভেবে কেউ মাথা ঘামাননি। পুলিশের প্রশ্ন, রাতে ওই ঘটনার পরে তরুণী সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন কেন? কেনই বা তখন চিৎকার করে কিংবা ফোন করে কারও সাহায্য চাননি? এ সব প্রশ্নের উত্তর পেতে পুলিশ ওই তরুণীকে জেরা করছে। খবর পাঠানো হয়েছে তাঁর বাড়িতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy