গার্ডেনরিচ মুদিয়ালী হাই স্কুলের বেহাল অবস্থা। ছবি রনজিৎ নন্দী।
মাঝেমধ্যেই খসে পড়ে চাঙড়। বিপজ্জনক অবস্থা দোতলা ও তেতলায় ওঠার সিঁড়ির। মাথার উপরে পলেস্তারা ওঠা সিমেন্টের অংশ শিক্ষকদেরই কখনও কখনও লাঠি দিয়ে ভেঙে দিতে হয়, যাতে কোনও পড়ুয়ার মাথায় না পড়ে! গার্ডেনরিচের বিপর্যয়স্থলের কাছে একটি স্কুলের এমনই অবস্থা বলে দাবি করে শুক্রবার সরব হলেন সেখানকার পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। এ দিন সকালে এ নিয়ে ওই স্কুলের বাইরে প্রতিবাদ-অবস্থান করেন বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের প্রতিনিধিরা। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েক জন অভিভাবকও। স্কুল কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, স্কুলের নতুন ভবনের জন্য কয়েক বছর আগে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত সেই কাজ শুরু হবে। প্রধান শিক্ষক সুষেণকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘কাছেই একটি বেআইনি বাড়ি ভেঙে দশ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এখন এ সব নিয়ে এত আলোচনা চলছে। তবে আমাদের স্কুল ভবন ভেঙে পড়ার অবস্থায় নেই।’’
গার্ডেনরিচের ফতেপুরে যে জায়গায় বেআইনি নির্মাণ ভেঙে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে, তার পাশের পাড়াতেই রয়েছে গার্ডেনরিচ মুদিয়ালি হাইস্কুল নামের ওই বিদ্যালয়টি। জানা গিয়েছে, ১৮৫৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই স্কুলের ভবনটি বহু পুরনো। এখন সেখানে ভোরে মুদিয়ালি গার্লস প্রাইমারি, অর্থাৎ প্রাক্ প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের পঠনপাঠন হয়। বেলায় বসে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেদের ক্লাস। সব মিলিয়ে এখন সেখানে বেলায় পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ১৩০০। চারতলা স্কুল ভবনে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ১৭টি। অন্যান্য ঘর রয়েছে সব মিলিয়ে আরও আটটি। কিন্তু বছরের পর বছর পঠনপাঠন চললেও স্কুল ভবনের সংস্কার করা হয় না বলে অভিযোগ।
এ দিন স্কুলের সামনে অবস্থানে হাজির পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়ার অভিভাবক অঞ্জলি দাস বললেন, ‘‘আমার ছেলের মাথাতেই এক বার সিমেন্ট খসে পড়েছিল। আহত অবস্থায় ওকে কয়েক দিন আর স্কুলে পাঠানোর সাহস হয়নি। কিন্তু তার পরেও স্কুলের সংস্কার হয়নি।’’ নিঝুম বিশ্বাস নামে পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়ার মায়ের মন্তব্য, ‘‘স্কুল ভবনটি বিপজ্জনক অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। সংস্কার তো হয়-ই না, ভর্তির সময় থেকেই প্রতি বছর শুনে আসছি, নতুন স্কুল ভবন তৈরি হবে। সেই কাজও আর হচ্ছে না।’’ ষষ্ঠ শ্রেণির এক পড়ুয়ার মা বাসন্তী দাস দাবি করলেন, ‘‘একটি বেআইনি বাড়ি ভেঙে পড়ায় কী ভাবে চোখের সামনে এত জন মারা গেলেন, দেখেছি। এর পরে সন্তানকে এই বিপদকুণ্ডের মধ্যে পাঠানোর সাহস হচ্ছে না।’’
স্কুলের গেটে এসে এর পরে অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেন প্রধান শিক্ষক সুষেণকুমার। তিনি জানান, মুদিয়ালি রোডের এই স্কুলেই আগে মুদিয়ালি গার্লস স্কুলের ক্লাস হত। পরবর্তী কালে ওই স্কুল নতুন ভবনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই স্কুলেরও নতুন ভবন তৈরি হওয়ার কথা। তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি। ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীলও পরিচালন সমিতিতে আছেন। সকলে মিলে বেশ কয়েক বছর ধরেই নতুন ভাবে এই ভবনটি তৈরি করার চেষ্টা করছি আমরা। বিল্ডিং বিভাগেও এ নিয়ে আবেদন পাঠিয়েছি। টাকার একটা ব্যাপার তো আছেই, সেই সঙ্গে ভবনটি নতুন করে তৈরি হওয়া পর্যন্ত আমাদের ক্লাস করানোর জায়গাও তো দরকার। ১৩০০ জন পড়ুয়াকে কোথায় নিয়ে গিয়ে ক্লাস করানো যাবে, সেই জটিলতাতেই অনেক কিছু আটকে আছে।’’ এর পরে তাঁর দাবি, ‘‘তবে দ্রুত সব করে ফেলা হবে। এত পুরনো স্কুল ভবন ভেঙে পড়ার মতো অবস্থায় নেই।’’
বিধানসভার স্পিকার যদিও বলেন, ‘‘স্কুলের নতুন ভবন তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy