কিশোর পাত্র। গার্ডেনরিচ দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র।
রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে সবে শুয়েছি। আচমকাই একটা বিকট শব্দ! হুড়মুড়িয়ে যেন কিছু ভেঙে পড়ল বলে মনে হল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমার স্ত্রী প্রবল যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন। ঠিক বুঝতে পারলাম না, হঠাৎ কী ঘটল। ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে স্ত্রী চিৎকার করছেন। অন্ধকারে মনে হল, ইটের একটা পাহাড় যেন বিছানার উপরে ভেঙে পড়েছে। চার দিকে ধুলো উড়ছে। অন্ধকারে সকলেই কাশতে শুরু করেছি। বাইরে লোকজনের চিৎকার, ‘বাড়ি ভেঙে পড়েছে, বাড়ি ভেঙে পড়েছে!’
আমি পেশায় একশো দিনের কাজ করা এক শ্রমিক। বহু বছর ধরে ফতেপুর এলাকার এই বস্তিতে বসবাস করছি। এই এলাকার প্রোমোটিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। ওই বহুতলটি যখন উঠছিল, তখন আমরা, বস্তির বাসিন্দারা মিলে অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আমাদের কথা শোনেননি। বাড়ির যখন ঢালাই হয়েছে অথবা ভিত খোঁড়া হয়েছে, তখন আমাদের বাড়িও কেঁপেছে। আমরা অনেকে মিলে প্রোমোটারকে বলেছিলাম, সতর্ক হতে। কিন্তু প্রোমোটার সে কথা কানে
তোলেননি। উল্টে ওঁরা বলতেন, দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিপূরণ দেবেন। দুর্ঘটনার পরে শুনলাম, প্রোমোটার ওয়াসিকে পুলিশ ধরেছে। আর তাঁর সমর্থক নেতা শেরু নাকি ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে রয়েছেন।
আমাদের কপাল ভাল যে, প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। আমরা যে দিকে মাথা দিয়ে শুয়েছিলাম, ইটের পাঁজা তার উল্টো দিক থেকে টালির চাল ভেঙে ঘরে পড়েছে। আমার স্ত্রী ইটের নীচে চাপা পড়েছিলেন। ওঁর হাতে-পায়ে আঘাত লেগেছে। ইট ছিটকে এসে পড়েছিল আমার পায়ের উপরেও। তাতে পায়ে আঘাত লাগে। তবে আমার আঘাত ততটা গুরুতর নয়। ওই পরিস্থিতিতে তখন ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা!
দুর্ঘটনার পরে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখি, চার দিক অন্ধকার। লোকজন আর্তনাদ করছেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ইটের আঘাতে জখম স্ত্রীকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে এসে বসালাম। তার পর থেকে সারা রাত বাড়ির বাইরে ঘুরে ঘুরেই কেটেছে।
রবিবার রাত ১২টা-সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরে স্ত্রী আর ছেলেকে ঘরের ভিতর থেকে কোনও মতে বার করে নিয়ে আসি। সোমবার সকাল থেকে ঘরের চাল নতুন করে ছাওয়ার কাজ শুরু করেছি। সকালে ভাঙা চাল দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকে পড়ায় বিছানার তোশক-গদি ভিজে গিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। কিছু লোকের অন্যায়ের জেরে আমরা অনেকগুলি পরিবার দুর্ভোগের মধ্যে পড়লাম। সকালে ত্রিপল কিনে এনেছি। বাড়ির চাল সারাতে হবে। জানি না, কোনও ক্ষতিপূরণ পাব কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy