নিমতলা শ্মশানঘাট এলাকা পরিদর্শনে গেলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। —নিজস্ব চিত্র।
গতিপথ বদলাচ্ছে কলকাতার গঙ্গা। সেই কারণে ভাঙনের ভ্রুকুটি দেখা দিয়েছে উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যশালী নিমতলা শ্মশানঘাটে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে বুধবার ষষ্ঠীর দিন দুপুরে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিমতলা শ্মশানঘাট এলাকা পরিদর্শনে গেলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পরিদর্শনের সময় তাঁর সঙ্গেই ছিলেন কলকাতা পুরসভার কমিশনার ধবল জৈন। গঙ্গার এহেন চরিত্র বদল নিয়ে যে তিনি চিন্তিত, পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই খোলসা করে দেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘নিমতলা ঘাট পরিদর্শনে যাচ্ছি। আমি গেলেই হয়তো সেখানে কিছু বদল হবে না। কিন্তু আমার উদ্বেগ থেকেই আমি যাচ্ছি।’’
পরিদর্শনে যাওয়ার আগে কলকাতার পুরসভায় আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়রকে প্রশ্ন করা হলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সঙ্গে জানান, বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রীয় সরকারের বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র হিসাবে তিনি ভাঙনের কবলে পড়া এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন তিনি। ফিরহাদ বলেন, ‘‘নিমতলা ঘাটে ভাঙনটা খুবই বিপজ্জনক জায়গায় গিয়েছে। সেই জন্য এই বিষয়ে পোর্ট ট্রাস্ট আমাদের কী সাহায্য করতে পারে, সেটা দেখতে হবে। তা ছাড়া এই পরিস্থিতিতে বিজয়া দশমীতে ঠাকুর বিসর্জন দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেই কারণেই আমরা ঘাট পরিদর্শনে যাচ্ছি।’’
উত্তর কলকাতার আরও একটি ঘাট নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েন মেয়র। রতনবাবু ঘাট নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে ভাঙন তথা গঙ্গার গতিপথ বদল নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেন তিনি।ফিরহাদ বলেন, ‘‘গঙ্গা নিজের গতিপথ বদল করছে। তাই হাও়ড়ার বেলুড়ের দিকটায় অনেক পরিমাণে পলি পড়ে যাচ্ছে, ফলে গঙ্গা বিপরীত পাড়ের দিকে অন্য পথে চলে যাচ্ছে। এটা খুবই বিপজ্জনক হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কলকাতার গঙ্গা থেকে ফলতা পর্যন্ত নদী নিজের গতিপথ বদল করছে। ওপাড়ে পলি পড়ে এ পাড়ে গতিপথ বদল হচ্ছে। সুতরাং এটা নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তা করব।’’ ভাঙনের মোকাবিলা এবং নদীর গতিপথ বদল নিয়ে যে কলকাতা বন্দরের সঙ্গে যৌথ ভাবেই কলকাতা পুরসভা কাজ করতে চায়, তাও নিজের মন্তব্যে বুঝিয়েছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা বন্দরের বিশেষজ্ঞ দল রয়েছে। আমরা তাদের কাছে অনুরোধ করব যে তারা যেন বলেন এ ক্ষেত্রে আমরা কিভাবে কাজ করব। সেই পরামর্শ মেনেই প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি হবে।’’
প্রসঙ্গত, নিমতলা মহাশ্মশান কলকাতার অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত ও ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান, যা বহু বছর ধরে শহরের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক চেতনাকে ধারণ করে রেখেছে। এই মহাশ্মশান শুধুমাত্র একটি দাহস্থল নয়, বরং এখানে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ায় এটি এক স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষকৃত্য এখানে সম্পন্ন হয়েছিল, যা এই স্থানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মর্যাদা প্রদান করে। রবীন্দ্রনাথের দাহকালের সেই মুহূর্ত আজও বহু মানুষের কাছে এক আবেগঘন স্মৃতি হিসেবে রয়ে গিয়েছে। এছাড়া, কলকাতার আরও অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব যেমন বিধানচন্দ্র রায়, ক্ষিতিমোহন সেন, এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের শেষকৃত্যও নিমতলায় সম্পন্ন হয়েছে, যা এই স্থানকে আরও বেশি স্মৃতিবিজড়িত করে তুলেছে। শুধুমাত্র শেষকৃত্যের স্থান হিসেবে নয়, নিমতলা মহাশ্মশান শহরের ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং বাঙালির আবেগের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। তাই ভাঙনের আশঙ্কায় কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চিন্তিত কলকাতা পুরসভাও। যদিও নিমতলা-সহ শহরের একাধিক ঘাটের রক্ষণাবেক্ষণ এবং দেখভালের দায়িত্ব মূলত কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতেই।
অন্য দিকে মেয়র দাবি করেন, কলকাতার যে ১৬টি ঘাটে প্রতিমা বিসর্জন হয়, সেগুলি কলকাতা পুরসভা প্রস্তুত করে ফেলেছে। কমিশনার স্বয়ং গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এসেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy