Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Funeral Ashes

কোভিড-মৃতের চিতাভস্ম পেতে সুপারিশ, লাগে টাকাও!

যদিও রাজ্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোভিডে মৃতের দেহ হাসপাতালে পরিজনেদের দেখতে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে দেহ সৎকার পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২১
Share: Save:

এত দিন শোনা যেত, চাকরি পেতে, স্কুল-কলেজে ভর্তি হতে বা হাসপাতালে শয্যা পেতে সুপারিশ লাগে। এ বার সুপারিশ থাকলে পাওয়া যাচ্ছে কোভিডে মৃতের চিতাভস্মও! যদিও রাজ্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোভিডে মৃতের দেহ হাসপাতালে পরিজনেদের দেখতে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে দেহ সৎকার পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়াই সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে । ফলে মৃতের চিতাভস্ম পাওয়ার কথা নয় পরিজনেদের। কিন্তু অভিযোগ, যথাযথ সুপারিশ থাকলে এবং টাকা খরচ করতে পারলে এ শহরেই তা মিলছে।

গত শুক্রবার শহরের একটি হাসপাতালে এক কোভিড রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর দেহ গার্ডেনরিচের বিরজুনালা শ্মশানে নিয়ে যায় পুরসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি সংস্থা। প্রসঙ্গত, কোভিডে মৃতের দেহ সাধারণ ভাবে সৎকার করা হচ্ছে বিরজুনালা শ্মশান এবং ধাপায়। সৎকার ঠিক মতো হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত মৃতের পরিবার কলকাতা পুরসভার ওয়েবসাইট থেকে ১৫ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটরের ফোন নম্বর বার করে তাঁকে ফোন করেন। শ্মশানটি ওই বরোরই অধীনে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে তাঁর থেকেই পাওয়া শ্মশানের নম্বরে ফোন করে সৎকারের বিষয়ে খোঁজ নেয় মৃতের পরিবার। পরিজনেদের দাবি, তখনই তাঁদের জানানো হয়, চাইলে তাঁরা চিতাভস্ম পেতে পারেন। জীবাণুমুক্ত করে পরের দিন সেই চিতাভস্ম তাঁদের হাতে দেওয়ার কথা ঠিক হয়।

মৃতের পরিবার সূত্রের খবর, শনিবার তাঁদের এক জনকে শ্মশান থেকে ফোন করে বাবুঘাটে দেখা করতে বলা হয়। ২১০০ টাকার বিনিময়ে তাঁর হাতে দেওয়া হয় চিতাভস্ম। ওই সদস্য বলেন, ‘‘হাঁড়িটা আমায় দিয়ে এক জন বলেন, ব্যবসা নয়। বখশিস হিসেবেই টাকা নেওয়া হচ্ছে।’’

এ ভাবে চিতাভস্ম পাওয়া যাচ্ছে কি না জানতে মঙ্গলবার ফোন করা হয়েছিল বিরজুনালা শ্মশানে। এক ব্যক্তি জানান, চিতাভস্ম পাওয়া যাচ্ছে। কত টাকা দিতে হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে ওই ব্যক্তি জানতে চান, মৃতদেহ সোমবার রাতে ঢুকেছে না এ দিন ঢুকবে? এ দিন দেহ পৌঁছবে বলায় আর এক জন ফোন ধরে বলেন, ‘‘আমরা টাকা নিয়ে চিতাভস্ম দিই ঠিকই, কিন্তু যাঁরা সুপরিশ নিয়ে আসেন তাঁরাই পান।’’ কাদের সুপারিশ? পুর প্রশাসনের একাধিক পদের নাম উল্লেখ করে ওই ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘ওঁরা বলে দিলেই পাওয়া যাবে। তা ছাড়া কেউ যদি ভিআইপি হন, তা হলেও পাবেন। তবে বিনা সুপারিশে এলে খরচ পড়বে অনেক বেশি।’’

যদিও চিকিৎসকদের সকলেরই বক্তব্য, এ ভাবে চিতাভস্ম ‘বিক্রি’ আইনবিরুদ্ধ। তাঁদের প্রশ্ন, চুল্লিতে যে তাপমাত্রায় দেহ পোড়ানো হয় সেই তাপে ভাইরাস বাঁচে না ঠিকই, কিন্তু যে হাঁড়িতে চিতাভস্ম ভরা হচ্ছে সেটি ঠিক মতো সাফ করা হচ্ছে তো? যাঁরা এই কারবার করছেন, তাঁরা যে সংক্রমিত নন সেই নিশ্চয়তা কোথায়? চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘অনেক জায়গায় শুনি, মৃতের মুখ দেখাতে বা শয্যা থেকে দেহ নামাতে টাকা নেওয়া হচ্ছে। চিতাভস্মের জন্যও এমন হলে সেটা বিকৃতি ছাড়া কিছু নয়।’’ পরজীবী বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী আবার বলছেন, ‘‘চিতাভস্মের নামে কী দেওয়া হচ্ছে, সেটা কেউ জানেন? ব্যবসায়িক দিক থেকেও কোভিড একটি বিপজ্জনক ভাইরাস হয়ে উঠেছে।’’ চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘সুপারিশের জোরে কাজ হাসিল করা একটি অসুখ। চিতাভস্ম পেতেও তা তাড়া করছে অনেককে।’’

তাঁর সুপারিশে কি সত্যিই চিতাভস্ম পাওয়া যাচ্ছে? ১৫ নম্বর বরোর কোঅর্ডিনেটর রঞ্জিত শীল প্রথমে বলেন, ‘‘আমার রেফারেন্স বলে নয়, কেউ চিতাভস্ম পাওয়ার আবেদন করলে পুর ভবন থেকেই করে দেওয়া হয়। সকলে চান না,

কেউ চাইলে আমরা দিয়ে দিতে বলি।’’ কিন্তু কার কার সুপারিশে কাজ হয়? এ বার বরো কোঅর্ডিনেটর বলেন, ‘‘চিতাভস্ম দেওয়া হয় না। শুধু মৃত্যুর শংসাপত্র পাওয়া যায়। আমি কাউকে আমার সুপারিশে যেতে বলিনি। অনেকেই চিতাভস্ম চান, কেউ হয়তো সেটা দেওয়ার পরিবর্তে টাকা নেন। কিন্তু সরকারি ভাবে কিছু হয় না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Funeral Ashes Covid Patients
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy