ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। —নিজস্ব চিত্র।
বোমা বা বোমা তৈরির মালমশলাই মজুত ছিল ক্লাবঘরের ভিতরে। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ। মঙ্গলবার সকালে বেলেঘাটার গাঁধীভবন সংলগ্ন ক্লাবের তিনতলার ঘরে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এমনটাই জানালেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। যদিও তাঁদের বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে ক্লাবসদস্যেরা পাল্টা দাবি করেছেন, বাইকে করে দুষ্কৃতীরা এসে ক্লাব লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছে।
বর্ধমান এবং বীরভূম জেলায় গত কয়েক বছরে এ রকম একাধিক ক্লাবঘর এবং বাড়ি বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্তে উঠে আসে, ওই সব জায়গায় বিপুল পরিমাণে বোমা তৈরির মশলা বা দেশি বোমা মজুত করা ছিল। তবে খাস কলকাতার বুকে সাম্প্রতিক কালে এ রকম ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না পুলিশকর্তারা। ছোটখাটো ১-২টো বোমা ফাটার ঘটনা ঘটলেও, বিস্ফোরণের অভিঘাতে বাড়ির কংক্রিটের একাংশ-সহ অ্যাসবেসটসের ছাদ এবং ঘরের দু’দিকের দেওয়াল ধসে যাওয়ার মতো ঘটনায় চিন্তায় পুলিশকর্তারাও।
কলকাতা পুলিশের চিন্তা বাড়িয়েছে অন্য একটি সম্ভাবনাও। প্রয়োজনে এই ঘটনার তদন্তভার নিজেদের হাতে নিতে পারে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। কারণ চলতি বছরে বীরভূম এবং মালদহে এ রকম তিনটি বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করেছে এনআইএ। মালদহের ঘটনায় ইতিমধ্যেই এক জনকে গ্রেফতার করেছেন এনআইএ-র গোয়েন্দারা। এমনকি ব্যারাকপুরের দেবকে বাজির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনার তদন্তভারও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা। এনআইএ সূত্রে খবর, তারা বেলেঘাটার ঘটনা নজরে রাখছে। একটি প্রাথমিক রিপোর্টও পাঠানো হবে এনআইয়ের সদর দফতরে। তদন্তভার যে তারা নিতে পারে, সেই সম্ভাবনাও খারিজ না করছে এনআইএ।
আরও পড়ুন: সাতসকালে তীব্র বিস্ফোরণে বেলেঘাটায় উড়ে গেল ক্লাবঘরের ছাদ
স্থানীয় বেলেঘাটা গাঁধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কল ক্লাবের তিনতলায় সাতসকালে বিস্ফোরণ ঘটে। —নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার সাতসকালে বেলেঘাটা মেন রোডে গাঁধী ময়দান এবং গাঁধীভবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের ঘুম ভাঙে তীব্র বিস্ফোরণের আওয়াজে। প্রথমে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বাসিন্দারা দেখেন বিস্ফোরণ হয়েছে স্থানীয় বেলেঘাটা গাঁধী মাঠ ফ্রেন্ডস সার্কল ক্লাবের তিনতলায়। বেলেঘাটা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। পৌঁছন কলকাতা পুলিশের ডিসি (পূর্ব এবং পূর্ব শহরতলি) অজয় প্রসাদ। বিস্ফোরণ কী ভাবে তা জানতে কুকুরের সাহায্যও নেন পুলিশকর্মীরা। ঘটনাস্থলে ক্লাবের কোনও কর্মকর্তা না থাকলেও উপস্থিত হন কয়েক জন সদস্য। তাঁরা প্রথমে দাবি করেন, দুষ্কৃতীরা বাইকে চড়ে এসে বোমা মেরেছে ক্লাবের দেওয়াল লক্ষ্য করে। ক্লাববাড়ির চিলেকোঠার ওই ছোট্ট ঘরে বোমা বা বিস্ফোরক মজুত থাকার কথা অস্বীকার করেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: কোভিড আক্রান্ত গৃহকর্তা, কাজ করতে না চাওয়ায় বেতন না দেওয়ার হুমকি, থানায় গেলেন পরিচারিকা
মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে নমুনা পরীক্ষা করতে যান রাজ্য ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞ তন্ময় মুখোপাধ্যায় এবং সনৎ সাহা। তাঁরা বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। বাইরে থেকে দেখা যায়, ওই ঘরের দু’দিকের পাঁচিল বিস্ফোরণের অভিঘাতে ধসে গিয়েছে। ঘরের মধ্যে কালো পোড়া দাগ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা জানান, বাইরে থেকে নয়, বিস্ফোরণ হয়েছে ঘরের ভিতরেই। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বিশেষজ্ঞেরা কলকাতা পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন, দেশি বোমায় ব্যাবহার করা হয় এমন প্রচুর স্প্লিন্টার ঘরের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। বিস্ফোরণস্থলে মিলেছে সালফার বা গন্ধকের উপস্থিতিও। দেশি বোমা তৈরি করতে সালফার ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা তাঁদের প্রাথমিক যে পর্যবেক্ষণ কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাতে ঘরের ভিতর প্রচুর পরিমাণে বোমা বা বোমার মশলা মজুত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেলেঘাটার ক্লাবটি ‘রাজু নস্করের ক্লাব’ বলেই দাবি করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১৯৮০ সালে ক্লাবটি তৈরি হয়। তবে বর্তমানে এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত কর্তা-ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই এলাকার তৃণমূলের বিভিন্ন মাপের নেতা-কর্মী বলে পরিচিত। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রাজু নস্কর এবং তাঁর ভাই রবি। এলাকার বাসিন্দারাও ক্লাবটি ‘রাজু নস্করের ক্লাব’ বলেই দাবি করেছেন। ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘সকালের বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্লাববাড়ির উল্টো দিকের একটি বাড়ির জানলার কাচও ভেঙেছে। ক্লাবের পাশে থাকা একটা বড় গাছ ঢালের কাজ করেছে। না হলে আশপাশে অনেক বাড়িরতেই ক্ষয়ক্ষতি হত।” ওই এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রাজু নস্কর বেলেঘাটার সব ক্লাবকে নিয়ে তৈরি ‘ক্লাব সমন্বয় সমিতির’ অন্যতম কর্তা। ওই এলাকায় শাসকদলের হয়ে ক্লাব সংগঠন সামলান পেশায় নির্মাণ ব্যবসায়ী রাজু। বোমাবাজি, তোলাবাজি, বেআইনি অস্ত্র ব্যবহার, খুনের চেষ্টা-সহ বিভিন্ন অভিযোগে অতীতে একাধিক বার গ্রেফতার হয়েছেন রাজু। তবে গত কয়েক বছর তিনি ওই এলাকায় বেলেঘাটার বিধায়ক পরেশ পাল ঘনিষ্ঠ তৃণমূলকর্মী বলেই পরিচিত।
ঘটনার পর রাজুর সঙ্গে বেশ কয়েক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে ডিসি অজয় প্রসাদ বলেন, ‘‘পুলিশ বিস্ফোরক আইনে স্বতঃপ্রণোদিত একটি মামলা দায়ের করেছে। এফআইআরে ক্লাবের নাম থাকছে। ক্লাবের কে কোন পদে আছেন, কারা কী কাজ করেন, কার কী ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy