Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বাজের কাছে প্রথম বার ‘হারল’ ভিক্টোরিয়ার পরি

বাজ পড়ার চিহ্নস্বরূপ সে দিনও স্পট ওয়েল্ডিংয়ের হদিস মিলেছে। এমনিতে ভিক্টোরিয়ার পরি নিজেই ‘লাইটনিং কন্ডাক্টর’ হিসেবে কাজ করে বলে জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

গত প্রায় এক শতক ধরে অজস্রবার বজ্রপাতের ঝড়ঝাপ্টা সামলে এসেছে সে। যে কারণে ঘুণাক্ষরেও কেউ টের পাননি, আশপাশে কত বাজ পড়ছে। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনায় শেষ পর্যন্ত সামলাতে পারল না ভিক্টোরিয়ার পরি! কারণ, সে দিন যেখানে বাজ পড়েছে, সেই জায়গা তার আওতার বাইরে ছিল। ভিক্টোরিয়ার বাজ পড়ার ঘটনার পরবর্তী বিশ্লেষণে বসে এই কারণই খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, সে দিন মুহুর্মুহু ব্রজপাতের অনেকটাই পরি টেনে নিয়েছিল। তার চিহ্ন পরির নিজের বল বেয়ারিং ও পারদের উপরে এখনও রয়েছে। পরি যে বল বেয়ারিংয়ের উপরে বসে ঘোরে, বাজ পড়লে সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে ‘স্পট ওয়েল্ডিং’। বাজ পড়ার চিহ্নস্বরূপ সে দিনও স্পট ওয়েল্ডিংয়ের হদিস মিলেছে। এমনিতে ভিক্টোরিয়ার পরি নিজেই ‘লাইটনিং কন্ডাক্টর’ হিসেবে কাজ করে বলে জানাচ্ছেন ভিক্টোরিয়া কর্তৃপক্ষ। পরি যে গোলাকার ধাতব পাত্রের (ডিস্ক) উপরে বসানো রয়েছে, তাতে পারদ ভর্তি থাকে। পরির মাঝ বরাবর একটি লোহার শলাকা রয়েছে। যার সঙ্গে তামার তার যুক্ত করে মাটির সঙ্গে ‘আর্থিং’ করা রয়েছে। এ ভাবেই এত দিন যাবতীয় বজ্রপাত সামলে এসেছে পরি। যার ব্যতিক্রম ঘটেছে শুক্রবার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কিউরেটর-সেক্রেটারি জয়ন্ত সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘পরি তো বাজ টেনেই নেয়। প্রায় ১০০ বছর ধরে সেই কাজই করছে সে। কিন্তু শুক্রবার যেখানে বাজ পড়েছিল, সেটা পরির সেই ক্ষমতার সীমারেখার বাইরে ছিল। মনে রাখতে হবে, ৫৭ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে ভিক্টোরিয়া। এর সঙ্গে পরির লাইটনিং কন্ডাক্টরের কাজ না করার কোনও সম্পর্কই নেই। অতীতে ভিক্টোরিয়া চত্বরে গাছের উপরে বাজ পড়লেও কোনও প্রাণহানি হয়নি। এই দুর্ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক।’’

প্রসঙ্গত, ময়দান এলাকায় বাজ পড়ার ঘটনা এর আগেও হয়েছিল। কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, ময়দান চত্বরে যত সংখ্যক বজ্র‌নিরোধক যন্ত্র থাকার কথা, তা নেই। সংলগ্ন বহুতলগুলিতে বজ্রনিরোধক যন্ত্র থাকলেও এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেগুলি ওই যন্ত্রের আওতার বাইরে। যদিও এই ঘটনার পরে ভিক্টোরিয়া চত্বরে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানো যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে ভিক্টোরিয়া সূত্রের খবর।

তবে শুক্রবারের ঘটনার পরে ফের যে প্রশ্নটি জোরালো হয়ে উঠেছে তা হল, কলকাতায় বাজ পড়ার সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়ে গিয়েছে কি না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলেন, ‘‘অতিরিক্ত গাছ কাটা বা দূষণের কারণে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তবে পরপর দু’টি বাজ পড়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান যে আগের থেকে কমেছে, সেটা প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।’’ অল্প সময়ের মধ্যে ঘনঘন বাজ পড়ছে, পরীক্ষা তেমনটাই বলছে।

তবে কলকাতা কি ক্রমশ বাজপ্রবণ হয়ে উঠছে, প্রশ্ন আপাতত তা নিয়েই!

অন্য বিষয়গুলি:

Victoria Memorial Lightning Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy