কথা: মধ্যপ্রদেশের ঘটনা নিয়ে আলোচনায় এ শহরের খাবার সরবরাহ সংস্থার কর্মীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
দুপুর রোদে ই এম বাইপাসের একটি বিরিয়ানির দোকানের সামনে মোটরবাইকে বসে কয়েক জন যুবক। পরনে খাবার সরবরাহকারী একটি অনলাইন সংস্থার লাল টি-শার্ট। নতুন অর্ডারের অপেক্ষাতেই হয়তো মাঝেমধ্যে মোবাইলে চোখ রাখছেন তাঁরা। তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হল, শুধু মুসলিম বলে এক ডেলিভারি বয়ের থেকে খাবার নিতে চাননি মধ্যপ্রদেশের এক জন। শুনেছেন সেই ঘটনার কথা? প্রশ্নটা শুনেই লাল টি-শার্ট পরা যুবকদের এক জন বললেন, ‘‘অন্য অনেক সমস্যা থাকলেও আমাদের সঙ্গে কলকাতায় এখনও এ রকম কিছু হয়নি। ভাগ্যিস!’’
স্রেফ মুসলিম বলে খাবার সরবরাহকারী সংস্থা ‘জ়োম্যাটো’র এক ডেলিভারি বয়ের থেকে খাবার নিতে না চাওয়ার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশ জুড়ে। মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা অমিত শুক্ল নামে এক ব্যক্তি ‘@নমো_সরকার’ নামের টুইটার হ্যান্ডেলে নিজের সেই ছুতমার্গের কথা সগর্বে ঘোষণা করার পরে তাঁর বিরোধিতায় সরব হয়েছেন নেটিজেনদের বড় অংশই। জ়োম্যাটোর মালিকও সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন, ‘ভারতের বৈচিত্রের আদর্শে আমরা গর্বিত। আমাদের মূল্যবোধের পরিপন্থী কিছু করার বদলে ব্যবসায়িক ক্ষতি হলেও দুঃখ নেই।’
বৃহস্পতিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, নামী-দামি রেস্তরাঁর সামনে দাঁড়ানো বিভিন্ন খাবার সরবরাহকারী সংস্থার কর্মীরা প্রত্যেকেই এক কথায় বলছেন, যোগ্য জবাব দিয়েছেন ওই সংস্থার মালিক। ধর্মের ভিত্তিতে কোনও কর্মীর মূল্যায়ন হতে পারে না। আশিস প্রামাণিক নামে এক ডেলিভারি বয়ের কথায়, ‘‘কে কী খাবেন, তা যেমন আমরা বলে দিতে পারি না, তেমনই স্রেফ ধর্মের কারণে কারও কাছ থেকে খাবার নিতে কেউ অস্বীকার করতে পারেন না।’’ তাঁর মতে, ‘‘বিষয়টিকে অস্পৃশ্যতার ধারায় ফেলে দেখলে ওই ব্যক্তির শাস্তি হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে জেল এবং জরিমানার কথা তো আইনেই বলা আছে।’’
পার্ক সার্কাস মোড়ে মহম্মদ মুস্তাক নামে এক ডেলিভারি বয় আবার জানালেন, খাবার দেরি করে নিয়ে গেলে বা মান খারাপ হলে অনেক সময়েই গ্রাহকদের দুর্ব্যবহারের মুখে পড়তে হয়। তবে এখনও ধর্মের জাঁতাকলে ফাঁসতে হয়নি। শেখ আরশাদ মহম্মদ নামে আর এক ডেলিভারি বয়ের বক্তব্য, ‘‘রাত পর্যন্ত কাজ করতে গিয়ে অনেক বার হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনও হয়েছে, গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছনোর পরে একদল ছেলে খাবার কেড়ে নিয়েছে। টাকা তো দেয়ইনি, উল্টে অর্ডার আমাকে দিয়েই বাতিল করিয়েছে। ফিরে এসে নিজের সংস্থায় অভিযোগ জানানো ছাড়া কোনও উপায় থাকেনি।’’ পাশে দাঁড়ানো তাঁর মতোই আর এক জন সুরজিৎ দাস বলছিলেন, ‘‘অনেক রেস্তরাঁর নিয়ম রয়েছে, গ্রাহক না নিলে তাদের কাছে এসে খাবার জমা করতে হয়। নয়তো টাকা কেটে নেয়। তবে খাবার ডেলিভারি দেওয়ার সময়ে হিন্দু না মুসলিম, সেই পরিচয় জানতে চাননি কেউ।’’
কসবা কানেক্টরে একটি রেস্তরাঁর বাইরে অর্ডারের অপেক্ষায় থাকা ডেলিভারি বয় শম্ভু হালদার বলছিলেন অন্য গল্প। ‘‘অনেক গ্রাহক খাবারের সঙ্গে সিগারেট, ঠান্ডা পানীয়ও কিনে নিয়ে যেতে বলেন। কিন্তু আমাদের তা করার নিয়ম নেই। বাইপাসের একটি আবাসনের বাসিন্দা এক তরুণীও খাবারের সঙ্গে সিগারেট নিয়ে যেতে বলেছিলেন। নিয়ে যাইনি বলে খাবার কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু টাকা দেননি। ওই আবাসনের সেক্রেটারির কাছে বিষয়টি জানিয়ে এসেছিলাম। আমাদের সংস্থাকে জানানোয় ওই গ্রাহককে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।’’ কয়েক মিনিট থেমে এর পরে তিনি বললেন, ‘‘কাজের জন্য অনেক অপমান সহ্য করে নিতে হয়। কিন্তু কেউ কোনও কারণে আমার হাত থেকে খাবার নিতে চাইছেন না, এটা মেনে নেওয়া যায় না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy