বিরতি: গন্তব্যের পথে বাইক থামিয়ে তৃষ্ণা নিবারণ। ভবানীপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ।
‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,...?’
ন্যূনতম প্রাপ্য নিশ্চিত করা, নিয়োগকর্তা ও কর্মীর সম্পর্ককে মান্যতা দেওয়া এবং জীবন বিমার অধিকার সংক্রান্ত দাবি তো আছেই। কিন্তু সে সব স্বাধীনতা ছাড়াই খাবারের বোঝা পিঠে নিয়ে ছুটতে হচ্ছে অনলাইন সরবরাহের পেশায় যুক্ত তরুণ-তরুণীদের। আরও একটি স্বাধীনতা দিবসে মনে পড়ছে, খিদে পেলেও কাজের ফাঁকে নির্দ্বিধায় তাঁদের খেতে পারার অধিকারে বাধার কথা।
সমাজমাধ্যমের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সম্প্রতি অনলাইনে খাবার সরবরাহকারী এক যুবকের ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে দেখা গিয়েছিল, নির্দিষ্ট সংস্থার পোশাক পরা ওই যুবক সিগন্যালে অপেক্ষা করার মাঝে সঙ্গে থাকা সংস্থার বক্স থেকে কিছু বার করে খাচ্ছেন। এর পরেই প্রতিক্রিয়ার ঝড় ওঠে। সে কথা মনে করে জেমস লং সরণির একটি রেস্তরাঁর সামনে অপেক্ষারত সরবরাহকারী এক যুবক বললেন, ‘‘সে দিন বাড়ি থেকে পেয়ারা নিয়ে বেরিয়েছিলাম। সেটা খেতে খেতেই বাইক চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে পড়ল, ওই ভিডিয়োর কথা। কেউ তো আমার ভিডিয়ো তুলেও ছড়িয়ে দিতে পারে। গায়ে সংস্থার গেঞ্জি। লোকে ধরেই নেবে, কারও খাবার থেকে খাচ্ছি! আমাদের কি খাওয়ার অধিকারও নেই? ধরেই নেওয়া হবে অন্যের খাবার খাচ্ছি?’’ ‘ডেলিভারি ভয়েস’ নামে একটি সংগঠনের তরফে প্রিয়স্মিতা বললেন, ‘‘অস্থায়ী (গিগ) কর্মীর অধিকার সুরক্ষিত না হলে এ সব বন্ধ হবে না। যেখানে হঠাৎ আইডি বন্ধ হয়ে কাজ চলে গেলেও কিছু করার থাকে না, সেখানে কোনও ডেলিভারি কর্মী লড়বেন কী ভাবে? স্বাধীনতা দিবস আসবে-যাবে, অসাম্য-বঞ্চনা কাটবে না।’’
সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সব থেকে বড় বঞ্চনা হল, ন্যূনতম প্রাপ্য নিশ্চিত করার বদলে উৎসাহ ভাতা (ইনসেন্টিভ) দেওয়ার আশ্বাসে কাজ চালানো। জ়োম্যাটো যেমন সারা দিনের এক রকম এবং রাতের জন্য আর এক রকম উৎসাহ ভাতার আশ্বাস দেয়। সুইগি-তে আবার বরাতপিছু এবং কত ক্ষণ কাজ করা হচ্ছে, এই দু’ধরনের উৎসাহ ভাতা।
এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘বেশির ভাগ উৎসাহ ভাতার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব। কারণ, তা হয় ‘গুড ডেলিভারি’র উপরে। গ্রাহক সন্তুষ্ট হয়ে যে রেটিং দেবেন, তার উপরে ‘গুড ডেলিভারি’ নির্ভর করে। অনেক ক্ষেত্রে সময়ে পৌঁছলেও খাবার বানাতে রেস্তরাঁ দেরি করে বা ঠান্ডা খাবার দেয়। বহু ক্ষেত্রে লোকেশন ভুল অথবা ফোনের ম্যাপে রাস্তা অন্যত্র দেখায়। কিন্তু এই সবেরই দায় পড়ে সরবরাহকারীর উপরে। ভাল রেটিংয়ের তাড়নায় দ্রুত বাইক ছুটিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে। তখন বিমার টাকাও মেলে না। সে ক্ষেত্রেও ‘গোল্ড’, ‘সিলভার’ এবং ‘ব্রোঞ্জ’ শ্রেণির কর্মীর হিসাব।
‘ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাপ বেস্ড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স’-এর তরফে রাজীব সিংহের দাবি, ‘‘মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট ১৯৪৮, দি এমপ্লয়মেন্ট কম্পেনসেশন অ্যাক্ট ১৯২৩, দ্য কনট্র্যাক্ট লেবার অ্যাক্ট ১৯৭০-সহ যে সব আইনে এ দেশের শ্রমিকেরা সুবিধা ভোগ করেন, তা এই গিগ ওয়ার্কারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অথচ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের ২৪ শতাংশ গিগ ওয়ার্কার ভারতীয়। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রতি বছর এ ক্ষেত্রের অবদান প্রায় ১.২৫ শতাংশ।’’ এই প্রেক্ষিতেই উঠছে রাজস্থান সরকারের পাশ করা ‘গিগ ওয়ার্কার্স রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট, ২০২৩’-এর প্রসঙ্গ। ওই আইনবলে
কর্মীদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে আইডি কার্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকার তহবিল হচ্ছে। অ্যাপ সংস্থাগুলিকে বরাতপিছু মোট মূল্যের ২ শতাংশের কম এবং ১ শতাংশের বেশি টাকা তহবিলে জমা করতে বলা হয়েছে। এই পেশায় যুক্তদের বড় অংশেরই দাবি, সরকারি তহবিলে নয়, অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার থেকেই আইন করে ন্যূনতম প্রাপ্য নিশ্চিত করা হোক।
এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে না চাইলেও জ়োম্যাটোর সিইও দীপেন্দ্র গয়াল ইমেলে জবাব দেন, ‘‘খাবার খেতে দেখলেই ভিডিয়ো ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমরা আইনি পদক্ষেপ করছি। এতে কর্মীর অপমানের পাশাপাশি সংস্থার ভাবমূর্তিও ধাক্কা খায়।’’
সুইগি-র সিইও শ্রীহর্ষ ম্যাজ়েটি-র দফতর থেকে জানানো হয়েছে, সংস্থার কর্মীদের নিরাপত্তা এবং সম্মান রক্ষার্থে তারা বদ্ধপরিকর। এমন কিছু ঘটলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু, কর্মীর অধিকার রক্ষায় উদ্যোগ কোথায়? স্বাধীনতা দিবসের আলোতেও আবছায়া সেই উত্তর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy