লকডাউনের দিনে বেঙ্গালুরু থেকে শহরে পৌঁছে ভোগান্তি। কোনও গাড়ি না পেয়ে হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে বসেই অপেক্ষা। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
লকডাউন যে হবে, সেই ঘোষণা হয়েছিল আগেই। বলা হয়েছিল, লকডাউনের দিনে কলকাতা থেকে কোনও উড়ান চলবে না। এখান থেকে যে ছ’টি শহরের সরাসরি উড়ান বন্ধ, তার মধ্যে যে পুণেও আছে তা-ও কারও অজানা নেই।
তা সত্ত্বেও বুধবার, লকডাউনের দিন পুণের সরাসরি টিকিট নিয়ে কাকভোরে বিমানবন্দরে হাজির হয়েছিলেন বছর ছাব্বিশের সাগির আনসারি, বাড়ি গিরিডিতে। জানেন না আজ লকডাউন? সাগির বলেন, ‘‘মঙ্গলবারও এজেন্ট জানিয়েছেন, উড়ান চলবে। দুপুর ১টায় উড়ান। তাই গাড়ি নিয়ে গিরিডি থেকে চলে এসেছি।’’ কিন্তু কলকাতা থেকে পুণের সরাসরি উড়ান তো বন্ধ। আর কিছু বলতে পারেননি ওই যুবক। শেষে জানালেন, উড়ান সংস্থাকে অনুরোধ করে আজ, বৃহস্পতিবার টিকিট বদলে নিয়েছেন। কলকাতা থেকে বেঙ্গালুরু ঘুরে পুণে।
আসলে নিয়মিত উড়ানে যাতায়াতের অভ্যাস নেই সাগিরের। তাঁর মতো এমন বহু মানুষকে পেটের দায়ে ফিরতে হচ্ছে কাজে। সাধারণত ট্রেনেই যাতায়াত করেন। কিন্তু এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে বিমানের টিকিট কাটছেন। কেউ জীবনে প্রথম উড়ানে উঠছেন। ফলে তাঁরা বিমান বা বিমানবন্দরের নিয়ম সম্পর্কে সড়গড় নন। যে কারণে সমস্যা হচ্ছে। অনেকে এজেন্টদের উপরে নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। দুর্ভোগ বাড়ছে তার জন্যও।
ছ’জনের সঙ্গে লখনউ ঘুরে কাজের জন্য পুণে যাওয়ার কথা ছিল উত্তর দিনাজপুরের অমিত দাসের। উড়ান ছিল মঙ্গলবার রাত আটটায়। দলটি বিমানবন্দরে পৌঁছে যায় সকাল সাতটাতেই। অমিতের কথায়, ‘‘বিকেল পাঁচটা নাগাদ ভিতরে ঢুকি। প্রথমে একটি ফর্ম ভরতে হয়। তার পরে একটি মেশিন দেখিয়ে বলা হয় বোর্ডিং কার্ড নিতে। কিন্তু ছ’জনে মিলে চেষ্টা করেও তা বার করতে পারিনি। আবার গেটের কাছে ফিরে আসি। আমাদের তখন একটি কাউন্টারে (চেক-ইন) পাঠানো হয়। সেখানে যিনি ছিলেন, তিনিও বোর্ডিং কার্ড বার করতে পারেননি। শেষে আমাদের বলা হয়, সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আমরা আর যেতে পারব না।’’ অবশেষে ছ’জনের জন্য অতিরিক্ত ৩২ হাজার টাকা দিয়ে আজ, বৃহস্পতিবার বিকেলের টিকিট পেয়েছেন অমিতেরা।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু কাউন্সিলরের
গল্পটা প্রায় একই বীরভূমের কলিমুদ্দিন আনসারির ক্ষেত্রেও। তাঁদের পাঁচ জনের ট্রেনে হায়দরাবাদের টিকিট কাটা ছিল। মঙ্গলবার হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দেখেন, টিকিট ‘কনফার্মড’ হয়নি। অগত্যা ভরসা বিমান। রাতেই আনসারিরা চলে আসেন বিমানবন্দরে। কিন্তু রাতে হায়দরাবাদের উড়ান ছিল না। তাই বুধবার সারা দিন টার্মিনালের বাইরে কাটিয়ে বৃহস্পতিবারের উড়ান ধরবেন।
আবার এমনও হয়েছে, টিকিট বাতিল করতে গিয়ে যাত্রীর টাকা কেটে নিয়েছে উড়ান সংস্থা। তার উপরে কলকাতা বিমানবন্দরে ঘর ভাড়া করে থাকার জন্য তাঁকে অতিরিক্ত টাকা খসাতে হচ্ছে। যেমন লখনউয়ের সুবিন্দর যাদব। তিনি চাকরি করেন পোর্ট ব্লেয়ারে। লখনউ থেকে সেখানকার সরাসরি উড়ান নেই। যাতায়াত করতে হচ্ছে কলকাতা ঘুরে। জরুরি প্রয়োজনে এক দিনের জন্য পোর্ট ব্লেয়ারে যাওয়ার দরকার হয়েছিল সুবিন্দরের। সোমবার রাতে লখনউ থেকে উড়ান ধরে কলকাতায় এসে সেই রাতটা বিমানবন্দরের ডরমিটরিতে থেকে মঙ্গলবার ভোরের উড়ান ধরেন।
কিন্তু পোর্ট ব্লেয়ারে পৌঁছেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে নামতে না-পেরে কলকাতায় ফিরে আসে বিমান। সেটি বাতিল হয়ে যায়। আবার ডরমিটরিতে ফিরে আসেন সুবিন্দর। এখন বৃহস্পতিবার ভোরে যাওয়া ছাড়া গতি নেই।
হতাশ গলায় ওই ব্যক্তি বলছেন, ‘‘মঙ্গলবার কাজ সেরে বুধবারের ফিরতি উড়ান ধরে লখনউ যাওয়ার কথা ছিল। সেই টিকিট বাতিল করতে গিয়ে একে তো টাকা কেটেছে। তার উপরে লকডাউনের চক্করে তিন দিন ধরে কলকাতা বিমানবন্দরে থাকা-খাওয়ার অতিরিক্ত খরচ। কত দিক সামলাব?’’
আরও পড়ুন: করোনা-যুদ্ধে পানিহাটির ষাটোর্ধ্ব ‘যুবক’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy