ফাইল চিত্র।
অভিযোগ, কখনও নির্দিষ্ট ছবি ছাপানো একটি কার্ড দেখাতে হয়। কখনও আবার চার সংখ্যার একটি ‘কোড’ বললেই চলে! ধারণক্ষমতার চেয়ে যত বেশি ভারই বহন করা হোক না কেন, সেই লরি বা ট্রাককে কেউই ধরে না বলে দাবি। কারণ, রাতের কলকাতা পেরোতে টাকার বিনিময়ে পাওয়া ওই কার্ড বা কোডই নাকি ‘গেট পাস’!
এ ছাড়াও থাকেন এক দল ‘পথের বন্ধু’। রাতভর জেগে রীতিমতো খাতা-কলম নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা। একের পর এক লরির চালক অবস্থান জানিয়ে ফোন করবেন আর হিসাব রেখে তাঁরাই তৈরি করবেন লরির ‘গ্রিন করিডর’! অভিযোগ, সেই করিডরে পুলিশ ধরবে না। অতিরিক্ত ওজন বহন বা সিগন্যাল ভাঙার মামলা হবে না। চালক মত্ত কি না, কেউ জানতেও চাইবেন না। বিপত্তি ঘটালেও মামলা-মোকদ্দমা হবে না! এমনকি, বেপরোয়া গতিতে কাউকে পিষে মারলেও সহজেই আত্মগোপন করতে পারবেন লরির চালক।
গত কয়েক বছর ধরে চলতে থাকা লরির এমন দৌরাত্ম্য কি এ বার বন্ধ হবে? পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ নিয়ে সরব হওয়ায় প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওভারলোডিংয়ের জন্য রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী চান ওভারলোডিং বন্ধ করতে। যদি দেখা যায়, প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত কেউ মদত দিচ্ছেন, তবে তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে সরকার।’’ লরি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের বড় অংশই অবশ্য বলছেন, সরকারের এমন হুঁশিয়ারি নতুন কিছু নয়। এর আগে অতিরিক্ত ভার বহনকারী লরি বা ট্রাকের জরিমানা বাড়িয়েছে সরকার। কিন্তু সে ভাবে এর কোনও সুরাহা হয়নি।
তাঁদের দাবি, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ম বদল করে জানায়, একটি ট্রাক ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত ওজন নিতে পারে। একে ‘সেফ অ্যাক্সেল লোড’ বলা হয়। কিন্তু সর্বভারতীয় এই বিধি প্রথমে এ রাজ্যে মানা হচ্ছিল না। রাজ্যের নিয়ম ছিল, ট্রাক তার বহনক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য তুলবে, অতিরিক্ত ভার নিতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছিল, তিন-চার গুণ বেশি ওজন নিয়ে লরি শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য কেন্দ্রের নিয়ম চালু করে। তার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। অতঃপর জানিয়ে দেওয়া হয়, মাত্রাতিরিক্ত ভার বহন করলে প্রথম বার ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রতি টন ওভারলোডিংয়ের জন্য দু’হাজার টাকা অতিরিক্ত জরিমানা নেওয়া বা দ্বিতীয় বার অপরাধের ক্ষেত্রে জরিমানা দ্বিগুণ করার এবং তৃতীয় বার অপরাধের ক্ষেত্রে পারমিট বাতিলের যে সংস্থান রয়েছে কেন্দ্রের আইনে, তা-ই করা হবে। কিন্তু তার পরেও লরির দাপট বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ।
‘ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সজল ঘোষ বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সবটা জানিয়েছি। ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির পরে এখন ছ’চাকার লরি ১২ টন, ১০ চাকার লরি ১৯ টন, ১২ চাকার লরি ২৫ টন, ১৪ চাকার লরি ২৯ টন এবং ১৬ চাকার লরি ৩৪ টন পণ্য বহন করতে পারে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই তিন থেকে চার গুণ বেশি ওজন বহন করা হচ্ছে। যার ১৯ টন নেওয়ার কথা, সে ৪০ টনেরও বেশি পণ্য বইছে। যার বহনক্ষমতা ২৫ টন, সে নিয়ে চলেছে ৬০ টনেরও বেশি পণ্য!’’ তিনি জানাচ্ছেন, এতে রাস্তা তো ভাঙছেই, লরির নীচে পড়ে মৃত্যুও ঘটছে।
সজলবাবুর কথায়, ‘‘টাকা দিয়ে যাঁরা গেট পাস করিয়ে রাখছেন, তাঁরা নিশ্চিন্তে চলছেন। যাঁরা তা করতে পারছেন না, তাঁরা ভয়ে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন। এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে, সেটা দিনকয়েক আগেই এক পুলিশকর্মীকে লরির পিষে দেওয়ার ঘটনায় বোঝা গিয়েছে!’’
লালবাজারের কর্তারা অবশ্য বলছেন, পরিবহণমন্ত্রী নিজে বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন। পুলিশের তরফে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। সহযোগিতায় পরিস্থিতি কতটা বদলায়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy