গঙ্গার জল দিয়ে পাম্পের আগুন নেভানোর চেষ্টা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
হাওড়া সেতু লাগোয়া স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডের লোহার গুদামে আগুন লেগেছিল শুক্রবার গভীর রাতে। শনিবার দিনভর লড়াই চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকলের ২০টি ইঞ্জিন। গুদাম ঠান্ডা করতে সারা রাত কাজ করেছেন দমকলকর্মীরা। তার পরেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রবিবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, পোড়া গুদামের একাংশ থেকে তখনও ধিকিধিকি আগুন বেরোচ্ছে। সঙ্গে ধোঁয়া।
তবে দমকলকর্মীরা দাবি করেছেন, বিশাল গুদামে আগুনের এই ভয়াবহতা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জলের জোগান থাকায় তুলনায় তা তাড়াতাড়ি আয়ত্তে আনা গিয়েছে। দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাশেই গঙ্গা ছিল বলে রক্ষে। জল পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি। যার জন্য এত বড় আগুন শনিবারই অনেকটা সামলানো গিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, ওই গুদামটি কলকাতা বন্দরের মালিকানাধীন। সেখানে মজুত ছিল প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক, রং, কাপড়, ওষুধ ও কেব্ল। যে কারণে নিমেষের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতায় গুদামের ছাদের কয়েক হাজার ফুট অংশ ধসে
পড়েছিল শনিবারই। এ দিন ওই গুদামের ভিতরে ঢুকে দেখা গেল, পিচের চট বিছানো ছাদের বাকি অংশ বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রচণ্ড তাপে পুরো গুদামের ছাদ তেতে রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা এই এলাকা থেকে সকলকে সরে যেতে বলেছি।’’
জানা গিয়েছে, গুদামের ভিতরে ন্যূনতম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, একাধিক সংস্থা ওই গুদামটি লিজ নিয়ে অফিস খুলেছিল। বন্দর
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, অগ্নি-নির্বাপক রাখার জন্য বারবার তাদের নোটিস পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন ওই গুদাম থেকে কয়েক কোটি টাকার সামগ্রী রফতানি হত। রমেশ আগরওয়াল নামে কাপড়ের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আমার প্রায় এক কোটি টাকার জিনিস মজুত ছিল। বেশিরভাগই পুড়ে গিয়েছে। কী ভাবে এখন চলবে, জানি না।’’ ব্যবসার সামগ্রী ছাই হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত রাম জয়সওয়াল, রাজেশ মেহতাদের। একটাই কথা বলে চলেছিলেন তাঁরা, ‘‘কোনও জিনিসই বার করে আনতে পারলাম না। সব শেষ হয়ে গেল।’’
চক্ররেলের লাইন লাগোয়া যে অংশ থেকে প্রথম আগুন লাগে, সেখানে বেশ কয়েকটি ঝুপড়ি রয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই এলাকা ছাড়তে শুরু করেছেন সেখানকার লোকজন। মেদিনীপুরের বাসিন্দা সাজেদা বিবি বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি
পরিচারিকার কাজ করে টাকা রোজগার করতাম। আগুন তো পুরো বাড়িটাই কেড়ে নিল। উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছি।’’
এ দিন গঙ্গা থেকে পাম্পের সাহায্যে জল তুলে গুদাম ঠান্ডা করার সময়ে ঘটে আর এক বিপত্তি। হঠাৎই আগুন লেগে যায় একটি পাম্পে। প্রথমে বিকট আওয়াজ। তার পরেই আগুনের শিখা বেরোতে থাকে। জগন্নাথ ঘাটে তখন অনেকে স্নান করছিলেন। তাঁদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। আগুন নেভাতে দ্রুত ঘাটে নামতে গিয়ে পড়ে যান এক দমকলকর্মী। তাঁকে উদ্ধার করেন অন্যেরা। শেষে গঙ্গা থেকে বালতি করে জল তুলে পাম্পের আগুন নেভানো হয়। দমকলের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সারা রাত চলায় পাম্পটি বেশ গরম হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছে, কোনও ভাবে শর্ট সার্কিট হয়ে এই দুর্ঘটনা।’’
গুদামের বিভিন্ন অংশের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে শনিবারই গিয়েছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। পুলিশ জানিয়েছে, আগুন পুরোপুরি নেভার পরে তাপমাত্রা আরও কমলে ফের তাঁরা গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy