Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

ভাইফোঁটায় শহরের সঙ্গী হল সেই বাজির দূষণই

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দিল্লির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাদবপুর, বিটি রোডের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ একাধিক এলাকার বাতাসের মান ছিল ‘খুব খারাপ’।

আচ্ছন্ন: ই এম বাইপাসে ধোঁয়াশা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

আচ্ছন্ন: ই এম বাইপাসে ধোঁয়াশা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

কালীপুজো-দীপাবলির বাজির দূষণ পিছু ছাড়ল না ভাইফোঁটাতেও!

গত দু’দিন কালীপুজো-দীপাবলিতে বাজি ফাটতে শুরু করার আগে পর্যন্ত বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ ছিল সহনশীল মাত্রার নীচেই। কিন্তু বাজি ফাটানো শুরুর কিছু পর থেকেই সেই পরিমাণ এক লাফে কখনও সহনশীল মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ, কখনও সাত গুণ বেশি হয়ে গিয়েছিল। শহরের বাতাসের মানের এই ধারা অব্যাহত থাকল মঙ্গলবারও। যে কারণে ভাইফোঁটাতেও দূষণ পিছু ছাড়ল না শহরের।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ দিল্লির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাদবপুর, বিটি রোডের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ একাধিক এলাকার বাতাসের মান ছিল ‘খুব খারাপ’। রাতেও যার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। পর্ষদের কর্তাদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, কয়েকটি এলাকা দেখে পুরো শহর সম্পর্কে ধারণা করা ঠিক নয়।

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, এ দিন বিকেল ৪টে পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার নিরিখে দিল্লিতে বাতাসের মান ছিল ‘খুব খারাপ’। বায়ূসূচক ছিল ৪০০। সেখানে কলকাতার বায়ুসূচক হল ২১৯, যা ‘খারাপ’। পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বাজির কারণেই এ শহরের বাতাসের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন যে, গত দু’দিন রাতের সময়ে বাতাসের মানের ধারা দেখলে সহজেই অনুমেয় যে, বাজি ফাটানো কী ভাবে বাতাসের মানের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।

যেমন গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ রবীন্দ্রভারতী এলাকায় বাতাসে পিএম ১০-এর পরিমাণ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৮২.৫০ মাইক্রোগ্রাম, যা সহনশীলতার মাত্রার চেয়ে কম। কিন্তু বাজি ফাটানো শুরু হওয়ার পরে রাত ১২টায় সেই মাত্রাই পৌঁছে যায় ৫৭৭.৮০ মাইক্রোগ্রামে (প্রতি ঘনমিটারে)। অর্থাৎ সহনশীলতার মাত্রার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। রাত ২টোয় আবার সেই মাত্রা বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৭০২.৩০ মাইক্রোগ্রাম (সহনশীলতার মাত্রার সাত গুণ বেশি)। বাজি ফাটনো শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণ পর থেকে যে হেতু দূষকগুলি বাতাসে মিশতে থাকে, তাই পরের দিকে বাতাসের মানের অবনমন দ্রুত হয়। সেই সূত্র ধরে দেখা যাচ্ছে, রাত যত বেড়েছে, ততই বাতাসে লাফিয়ে বেড়েছে পিএম ১০-এর পরিমাণ। একই হাল রবীন্দ্র সরোবর অথবা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এলাকারও। মঙ্গলবারও এই ছবির কিছু পরিবর্তন হয়নি। যেমন, রবীন্দ্র সরোবর এলাকায় সন্ধ্যা ৬টায় পিএম ১০ ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৫০.৭৭ মাইক্রোগ্রাম, যা রাত ১০টায় বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি ঘনমিটারে ৩২২ মাইক্রোগ্রামে। রাত ১১টায় আরও বেড়ে হয় প্রতি ঘনমিটারে ৫০৫.৭৭ মাইক্রোগ্রাম।

পরিবেশবিদেরা জানাচ্ছেন, এমনিতেই ঠান্ডায় দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাগুলি ভারী হয়ে নীচে নেমে আসে। তার উপরে এ সময়ে বাতাসের গতিবেগ সে ভাবে না থাকায় ধূলিকণাগুলি অন্যত্র ছড়াতে পারে না। ফলে বেশি বাজির ধোঁয়ায় শহরের উপরে কুয়াশার চাদরের মতো আস্তরণ পড়েছে বলে মনে হয়। গত রবিবার, কালীপুজোর দিন থেকে এমন ছবি একাধিক বার দেখা গিয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলছেন, ‘‘বাতাসের মানের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে যে, এ বার কালীপুজো, দীপাবলি একই দিনে পড়েছিল বলে দু’টি অনুষ্ঠান একই দিনে হয়েছে। অন্য বার যা আলাদা দিনে হয়। ফলে তার প্রভাবও কিন্তু পড়েছে বাতাসের মানে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Cracker Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy