হামলা: বিমানের গায়ে মৌমাছির ঝাঁক। বিমানের জানলাও ঢেকে গিয়েছে মৌমাছিতে। নিজস্ব চিত্র
তারও তো বিমানে চড়ার শখ হতে পারে!
তাই রবিবার বিকেলে অনেকটা পথ উজিয়ে এসে কলকাতা বিমানবন্দরে রাখা একটি বিমানে বোর্ডিং কার্ড ছাড়াই চড়ে বসেছিল সে। তবে ভিতরে নয়, বিমানের বাইরে। ককপিটের ঠিক পিছন দিকে বিমানের মসৃণ গায়ে বেশ আরাম করেই সে বসেছিল।
রানি এলে পিছু পিছু চলে আসে আরও কয়েকশো পুরুষ। এটাই মৌমাছিদের নিয়ম। তাই রানির পিছু পিছু তারা এসে দখল করে নেয় বিমানের বাইরের একাংশ। যার জেরে দেখা যায়, একটি বেসরকারি উড়ান সংস্থার দিল্লিগামী বিমানের গায়ের রং নিমেষের মধ্যে বদলে গিয়েছে। সাদা বিমানের একাংশ তখন মৌমাছিদের ভিড়ে কালো। শয়ে শয়ে মৌমাছি গুনগুন করে উড়তে থাকে বিমানের আশপাশেও। পরদিন, সোমবারও ওই একই বিমান সংস্থার আর একটি উড়ানে একই ঘটনা ঘটে।
পরপর দু’দিন মৌমাছিদের এই নিমন্ত্রণহীন, অযাচিত হানায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন বিমানের কাছাকাছি থাকা কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে কেউ জ্বালানি ভরছিলেন, কেউ বিমান পরিষ্কার করছিলেন, কেউ যাত্রীদের মালপত্র তুলছিলেন, কেউ আবার নিয়ে আসছিলেন খাবার। ইঞ্জিনিয়ারেরা তখন ব্যস্ত ছিলেন যন্ত্রপাতির পরীক্ষায়। যাত্রীরা না ওঠায় বিমানের অভ্যন্তর অবশ্য তখনও খালি।
বিমানে এ হেন মৌমাছির হানা নতুন নয়। বিমানবন্দরের কর্তাদের কথায়, শীত পড়লেই খানিকটা বেশি চনমনে হয়ে ওঠে মৌমাছির দল। বিমানবন্দরের ভিতরে, মূলত পার্কিং বে-তে একটু বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বিমানের গায়ে এসে বসে তারা। কখনও দরজা ফাঁকা পেয়ে ভিতরেও ঢুকে পড়ে গুটিকতক। কীটনাশক ব্যবহার করে তাড়াতে হয় তাদের।
রবিবার বিকেলে দলে অনেকটা ভারী ছিল মৌমাছিরা। প্রথমে বাইরে থেকে কীটনাশক দিয়ে তাদের তাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিফল হন কর্মীরা। শেষে খবর পাঠানো হয় দমকলে। বিমানবন্দরের দমকল বাহিনীর শক্তি সাধারণ দমকল বাহিনীর থেকে কিছুটা বেশি। বিমানের আগুন নেভাতে তারা দক্ষ। তেমনই একটি ইঞ্জিন এসে দূর থেকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জলের জেট দিয়ে এক নিমেষেই বিমান থেকে নামিয়ে আনে মৌমাছিদের।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ওই জলের ঝাপটায় মাটিতে পড়েও বেশ কয়েকটি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওড়ার চেষ্টায় ছিল। তাই সেখানেও কিছু ক্ষণ জল ছেটানোর পরে ঝেঁটিয়ে তাদের সবাইকে মাটির নীচে ড্রেনের জলে চালান করে দেওয়া হয়। বিকেল ৪টের পর থেকে এই নাটক চলে বেশ কিছু ক্ষণ ধরে। ৫টায় বিমানটির রওনা হওয়ার কথা ছিল। মৌমাছির হানার জেরে সেটি এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে বলে বিমানবন্দর সূত্রের খবর।
এর পরে এ দিন সকালেও ঘটে একই কাণ্ড। একই উড়ান সংস্থার পোর্ট ব্লেয়ারগামী একটি বিমানের উপরে ফের আসর বসায় মৌমাছির দল। বিমানবন্দর কর্মীরা সেই দৃশ্য দেখেই বুঝে যান, রবিবার বিকেলের কায়দাতেই ফের ‘অপারেশন’ চালাতে হবে। তাই কালবিলম্ব না করে সঙ্গে সঙ্গে খবর পাঠানো হয় দমকলে। দমকলকর্মীরা এসে একই পদ্ধতিতে জলের তোড়ে তাড়িয়ে দেন মৌমাছিদের। এই ঘটনার জেরে সেই উড়ানটিও এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।
এ দিন বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “বিমানবন্দরে পুরনো কিছু উঁচু হ্যাঙার (যার ভিতরে বিমান রেখে রক্ষণাবেক্ষণ ও সারাইয়ের কাজ হয়) রয়েছে। সেগুলির ছাদে অনেক সময়ে মৌমাছিদের বাসা বাঁধতে দেখা গিয়েছে। বিমানবন্দর চত্বরে কোথাও কোনও মৌমাছির বাসা রয়েছে কি না, তা দেখতে মাঝেমধ্যেই পরিদর্শন হয়। অনেক সময়ে বাইরে থেকেও ওরা উড়ে আসে। এত মৌমাছি কোথা থেকে আসছে, তা খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি আমরা।”
বিমানবন্দরে দীর্ঘ দিন কর্মরত কর্তারা জানিয়েছেন, এক সময়ে কলকাতা বিমানবন্দরের এরোব্রিজের তলায় মৌমাছিরা বাসা বাঁধত। সাধারণত আগুন জ্বেলে তাদের তাড়ানো হয়। কিন্তু বিমানবন্দরের ভিতরে বিমান বা এরোব্রিজের গায়ে ওই ভাবে আগুন জ্বালানো সম্ভব নয়। জলকামানই একমাত্র অস্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy