Advertisement
E-Paper

দূষণের জেরে বাড়ছে ডেঙ্গি, ফাইলেরিয়াও

পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের বংশবিস্তারের জন্য গড় সহায়ক তাপমাত্রা হল ১৬-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

—প্রতীকী ছবি

—প্রতীকী ছবি

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share
Save

দূষণের অজস্র ক্ষতিকর দিক নিয়ে চর্চা তো রয়েছেই। এ বার মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের বাড়বাড়ন্তের পিছনেও বায়ু ও জল দূষণের যোগ সামনে আনলেন পতঙ্গবিদেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা, দূষণের ফলে সারা বিশ্বেই ন্যূনতম গড় তাপমাত্রার ধারা ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আগে যেখানে বেশি দিন ঠান্ডা থাকার কারণে মশার বংশবিস্তারের সময়টা কম ছিল, তা এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ডেঙ্গি সংক্রমণের সময়কালও সমানুপাতিক হারে বাড়ছে।

পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী মশা এডিস ইজিপ্টাইয়ের বংশবিস্তারের জন্য গড় সহায়ক তাপমাত্রা হল ১৬-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মধ্যে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হল তাদের বংশবিস্তারের পক্ষে সর্বাধিক সহায়ক। গত ১০ বছরে কলকাতার নভেম্বরের গড় তাপমাত্রা যদি দেখা যায়, তা হলে দেখা যাবে যে, সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা যথাক্রমে ১৬.১ ডিগ্রি থেকে ৩৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য তেমনই ইঙ্গিত করছে।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যদি গত ১০০ বছরের হিসেব দেখা যায়, তা হলে সারা বিশ্বেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রার হার ঊর্ধ্বমুখী দেখা যাবে।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাটমস্ফেরিক সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক সুব্রতকুমার মিদ্যা বলছেন, ‘‘বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, নানা ধরনের দূষক, গ্রিন হাউজ় গ্যাসের মাত্রাবৃদ্ধি গড় তাপমাত্রা বাড়ার পিছনে দায়ী। কারণ, ভূপৃষ্ঠ থেকে যে তাপ বেরোয়, তা ওই ধূলিকণা, দূষক, গ্যাসের স্তরে প্রতিফলিত হয়ে আবার ফেরত আসে। যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে।’’

আর সেই তাপমাত্রাই বাড়িয়ে দেয় মশার প্রজননকাল। এক পতঙ্গবিদের কথায়, ‘‘খুব ঠান্ডায় মশা বংশবিস্তার করতে পারে না। কিন্তু এখন শীতেও ন্যূনতম তাপমাত্রার হার বেশি থাকার কারণে অনেক সময়েই ডেঙ্গি ছড়ানোর আদর্শ পরিবেশ থাকে।’’

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মশা-গবেষক তথা মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে নিউ টাউন-কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদের পরামর্শদাতা গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘‘শুধু তাদের বংশবিস্তারের সময়কালই বাড়ছে তা নয়, তাদের যাতায়াতের পরিধিও বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, আগে ঠান্ডার কারণে যেখানে তারা থাকত না, বিশ্ব উষ্ণায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানেও মশারা জন্মাচ্ছে।’’ শুধু তো ডেঙ্গিই নয়, মশাবাহিত অন্য রোগের প্রাদুর্ভাবও ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন গৌতমবাবু। যেমন নোংরা জলে ফাইলেরিয়ার জীবাণু বহনকারী কিউলেক্স ও আর্মিজেরিস প্রজাতির মশা বংশবিস্তার করে। ফলে জল দূষিত হলে তাদের বংশবিস্তারের হারও বেড়ে যায়। আর্মিজেরিস কোনও রোগ ছড়ায় না। তবে ভোরে ও গোধূলির সময়ে তাদের কামড়ের ফলে তিতিবিরিক্ত হতে হয় সকলকে।

পতঙ্গবিদ অমিয়কুমার হাটি আবার বলছেন, দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে স্বাভাবিক ঋতুচক্রেই পরিবর্তন এসেছে। যেমন চলতি বছরেই কিছুটা দেরিতে ডেঙ্গি প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। কারণ, বর্ষা কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে। তারও প্রভাব পড়েছে মশার বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে। অমিয়বাবু এ বিষয়ে বলেন, ‘‘একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, মশারা অনেক বেশি সহিষ্ণু। যারা মানুষের থেকেও বেশি দিন পৃথিবীতে রয়েছে। ফলে পরিবর্তিত পরিবেশে ওরা নিজেদের দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘শীতকালে বৃষ্টি হয় না। ফলে সে দিক থেকে সুবিধা। কিন্তু ঠান্ডা কম পড়লে কিন্তু মশার বংশবিস্তারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। সে ক্ষেত্রে বৃষ্টি না হলেও জঞ্জাল বা জল জমিয়ে রাখলে এডিস দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। সুতরাং সারা বছরই সতর্ক

থাকতে হবে।’’

Filariasis Dengue Mosquito

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}