Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
kite

Baranagar: ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বচসা, বরাহনগরে ছাদ থেকে ছুড়ে ফেলা হল বাবা-ছেলেকে

অন্যদের সঙ্গে ভাড়া বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন বাবা ও ছেলে। ঘুড়ি কেটে দেওয়া নিয়ে পাশের বাড়ির সঙ্গে অল্পস্বল্প কথা-কাটাকাটিও চলছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

অন্যদের সঙ্গে ভাড়া বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন বাবা ও ছেলে। ঘুড়ি কেটে দেওয়া নিয়ে পাশের বাড়ির সঙ্গে অল্পস্বল্প কথা-কাটাকাটিও চলছিল। সেই সময়েই ছাদে উঠে আসে প্রতিবেশী এক যুবক। অভিযোগ, নেশাগ্রস্ত ওই যুবক দাবি করে, ‘কোনও ঝগড়া নয়। চুপ করে থাকতে হবে।’ কিন্তু তার কথা না শোনায় বাবা ও ছেলেকে চারতলা বাড়ির ছাদ থেকে এক রকম ছুড়েই নীচে ফেলে দেয় শক্তপোক্ত চেহারার ওই যুবক।

শুক্রবার, বিশ্বকর্মা পুজোর দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরে। প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর চোট পেয়েছেন বাবা শুকদেব হালদার (৪৮) ও ছেলে সুশান্ত হালদার (২৫)। এর পরে রাতেই অজিত রাজবংশী নামে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করেছে বরাহনগর থানার পুলিশ। ধৃতের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা ও ইচ্ছাকৃত ভাবে গুরুতর আঘাত করা-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৎস্যজীবী কলোনিতে ওই চারতলা বাড়িটির মালিকের নাম অর্জুন মালো। সেই বাড়িতে অনেক ভাড়াটে রয়েছেন। তাঁদেরই এক জন শুকদেব সপরিবার সেখানে থাকেন। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন দুপুরে অন্যান্য ভাড়াটে এবং বাচ্চাদের সঙ্গেই ছাদে উঠেছিলেন শুকদেব ও সুশান্ত। সকলেই ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলেন। পেশায় একটি ছোট সংস্থার দিনমজুর শুকদেবের বড় ছেলে সূর্যকান্ত জানান, আচমকাই ছাদে উঠে আসে অজিত। নিজে ঘুড়ি না ওড়ালেও সে এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়াচ্ছিল।

ঘুড়ি কাটাকাটি নিয়ে সেই সময়ে প্রতিবেশী এক ব্যক্তির সঙ্গে মজার ছলেই কথা-কাটাকাটি করছিলেন শুকদেব। সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘অজিত বাবাকে কয়েক বার চুপ করে থাকতে বলে। এমনকি, ওর কথা না শুনলে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ারও হুমকি দেয়। কিন্তু বাবা ভেবেছিলেন, অজিত নিশ্চয়ই মজা করছে।’’ অভিযোগ, কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজিত হঠাৎ শুকদেবকে পাঁজাকোলা করে ছাদ থেকে নীচে ফেলে দেয়। পাশেই ছিল টালির ছাউনির একটি বাড়ি। টালি ভেঙে সেই ঘরের খাটের উপরে গিয়ে পড়েন শুকদেব। বাবাকে ছুড়ে ফেলার ওই ঘটনা দেখে প্রতিবাদ করায় সুশান্তকেও একই ভাবে ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করে অজিত। সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘ভাই প্রথমে কোনও মতে ছাদের পাঁচিলটা ধরে ফেলেছিল। কিন্তু সেখান থেকে হাত ছাড়িয়ে ওকেও ফেলে দেওয়া হয়।’’

একই জায়গা দিয়ে ছুড়ে ফেলায় সুশান্তও গিয়ে পড়েন প্রায় তাঁর বাবার উপরে। বিকট শব্দে হকচকিয়ে ওঠেন আশপাশের লোকজন। ছাদে থাকা সকলে ভয়ে হুড়মুড়িয়ে নীচে নামতে শুরু করেন। অভিযোগ, দু’-একটি শিশুকেও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে অজিত। কিন্তু তারা কোনও মতে হাত ছাড়িয়ে পালায়। ঘটনার প্রতিবাদ করায় বাড়ির মালিক অর্জুনের উপরেও চড়াও হয় অজিত। মারধর করা হয় বাড়িওয়ালার পরিবারের লোকজনকেও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এর আগেও বিভিন্ন রকম সমাজবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় অজিতের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বরাহনগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুর কোঅর্ডিনেটর অঞ্জন পাল বললেন, ‘‘খবর পেয়েই পুলিশকে বলেছিলাম অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে। কারণ, ওই যুবক নির্বাচনের আগে এলাকায় সন্ত্রাস চালিয়েছে। ভোটের পরে কিছুটা দমে গেলেও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় স্থানীয়দের উপরে ফের অত্যাচার শুরু করেছিল।’’

ওই দিন ঘটনার পরে শুকদেব ও সুশান্তকে উদ্ধার করে প্রথমে বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়েরা। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের পাঠানো হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সিটি স্ক্যান-সহ অন্যান্য পরীক্ষা করার পরে বাবা ও ছেলেকে চিকিৎসা করে ছেড়ে দেওয়া হয়। রাতেই শুকদেব ও অর্জুনেরা সকলে মিলে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তার পরেই অজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার সূর্যকান্ত বলেন, ‘‘জানি না, ছাড়া পাওয়ার পরে আবার কী অত্যাচার চালাবে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

kite attempt in murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE