Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রসবের ১১ দিনের মাথায় মৃত কনস্টেবল

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুনুকে গত ২৫ অক্টোবর ভিআইপি রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই পরদিন ২৬ অক্টোবর এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

রুনু বিশ্বাস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

রুনু বিশ্বাস। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

তাঁর কন্যাসন্তানের বয়স মাত্র ১১ দিন। মেয়েকে হাসপাতালে প্রথম বার দেখে তিনি বলেছিলেন, জ্বরের মধ্যে মেয়েকে ধরতে চান না। বাড়ি ফিরে খেলবেন ওর সঙ্গে। তবে সেই ইচ্ছা আর পূরণ হল না বাগুইআটির বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল রুনু বিশ্বাসের (২৮)। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বুধবার ভোরে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটেও ডেঙ্গির কথাই উল্লেখ রয়েছে। পাশাপাশি লেখা রয়েছে, ‘সেপটিক শক উইথ মাল্টিঅর্গান ফেলিয়োর’।

মৃতার পরিবার জানিয়েছে, আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুনুকে গত ২৫ অক্টোবর ভিআইপি রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই পরদিন ২৬ অক্টোবর এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। তার আগে থেকেই জ্বরে ভুগছিলেন রুনু। অস্ত্রোপচার করে সন্তানের জন্ম দেওয়ার দু’দিনের মাথায় তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। রক্তের প্লেটলেট ৬৫ হাজারে নেমে যায়। এর পরে ২৯ অক্টোবর রুনুকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই বুধবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে সদ্যোজাত সুস্থ রয়েছে বলেই রুনুর পরিবার জানিয়েছে।

পেশায় কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল রুনু আমহার্স্ট স্ট্রিট মহিলা থানায় কর্মরত ছিলেন। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় দুর্গাপুজোর সময় থেকেই ছুটিতে ছিলেন তিনি। রুনুর স্বামী অনুপ সরকারও কলকাতা পুলিশের কর্মী হিসেবে লালবাজারে কর্মরত। তিনি এ দিন সকালে বলেন, ‘‘কী ভাবে, কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। কয়েক দিন ধরে রুনু জ্বরে ভুগছিল ঠিকই, তবে তার জন্য এ রকম হবে ভাবিনি।’’ অনুপের দাবি, ‘‘এই মৃত্যুর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। পরবর্তী কালে আমরা এ নিয়ে আইনি পরামর্শ নেব। ভিআইপি রোডের যে হাসপাতালে রুনুকে ভর্তি করানো হয়েছিল তাদের তরফে অনেক গাফিলতি রয়েছে।’’

শোকগ্রস্ত: রুনু বিশ্বাসের বাবা এবং অন্য পরিজনেরা। বুধবার, বাগুইআটির অশ্বিনীনগরে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ভিআইপি রোডের ওই হাসপাতালের তরফে অবশ্য একটি বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ‘৩৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা হিসেবে রুনু আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তারও ১০ দিন আগে থেকে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। রোগীর পরিবারের মত নিয়েই গর্ভাবস্থায় থাকা শিশুটিকে অস্ত্রোপচার করে বার করা হয়েছিল। সেই মত নেওয়ার কাগজপত্রও রয়েছে। ২৯ অক্টোবর রক্তের প্লেটলেট অনেকটাই কমে যায়। আমাদের সঙ্গে কথা বলে পরিবার রোগীকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়।’ সুদীপ বিশ্বাস নামে মৃতার এক ভাই অবশ্য দাবি করেন, ‘‘হাসপাতাল যা-ই বলুক, চিকিৎসায় গাফিলতি ছিল। এক দিন দেখি, রুনুর স্যালাইনের চ্যানেল খুলে গিয়েছে, সে দিকে হাসপাতালের কারও নজরই ছিল না।’’

এ দিন বেলা ১টা নাগাদ রুনুর মৃতদেহ বাইপাসের হাসপাতাল থেকে তাঁদের বাগুইআটির অশ্বিনীনগরের উদয়নপল্লির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেখা যায়, রুনুর বাবা রাজকুমার বিশ্বাস এবং মা কল্পনা বিশ্বাস কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। মাঝে মধ্যেই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন কল্পনাদেবী। বাড়ি থেকে রুনুর মরদেহ এর পরে নিয়ে যাওয়া হয় আমহার্স্ট স্ট্রিট মহিলা থানায়। সেখানে মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কলকাতা পুলিশের ডিসি (উত্তর) দেবাশিস সরকার ও অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা।

মেয়েকে শেষ বিদায় দিয়ে রুনুর মা কল্পনাদেবী কোনও মতে বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ার অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে থাকলে ডেঙ্গি হবে না? তবে হাসপাতালও ঠিকমতো চিকিৎসা করেনি।’’ রুনুর দিদা সত্তরোর্ধ্ব কমলা রায়কেও বসিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। নাতনির মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছনোর আগে তিনি শুধুই বলছিলেন, ‘‘পিঙ্কির (রুনুর বাড়ির নাম) কাছে নিয়ে চল আমায়। ও মেয়ের ঘরের ছোট নাতনি। আমিই ওকে মানুষ করেছি। আমি ছাড়া ওর কষ্ট কেউ বুঝবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Constable Dengue Birth
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy