ফাইল চিত্র।
চিত্র ১। স্টেশনে যাত্রীদের ওঠানামার শেষে আচমকা থমকে গিয়েছে মেট্রো। কয়েক মিনিট অপেক্ষার পরে অস্পষ্ট, জড়ানো স্বরে স্টেশনের মাইক্রোফোনে কিছু একটা ঘোষণা করা হল মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে। ভাঙাচোরা দু’-একটা শব্দ কানে এলেও যাত্রীদের বেশির ভাগই ঘোষণার কিছু বুঝতে পারলেন না। কিছু ক্ষণ পরে ট্রেন ফের চলতে শুরু করল। কিন্তু বিভ্রাটের কারণ অজানাই থেকে গেল।
চিত্র ২। মেট্রো বিভ্রাটে থমকে ট্রেন। মেট্রোচালক এবং স্টেশনের কর্মীরা বুঝতে পারছেন ট্রেন খালি করা ছাড়া উপায় নেই। যাত্রীদের নেমে আসতে স্টেশনের মাইক্রোফোনে বারবার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কেউ তা কানে তুলছেন না। প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত দু’-এক জন আরপিএফ কর্মী কামরার সামনে গিয়ে যাত্রীদের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাঁদের হাতে মাইক্রোফোন না থাকায় যাত্রীদের অনেকের কাছেই সে কথা পৌঁছচ্ছে না। এ দিকে, যাত্রীদের নামতে দেরির ফলে অন্যান্য স্টেশনে ট্রেন আটকে পড়ায় মেট্রোর কন্ট্রোল রুমে বসে থাকা কর্তৃপক্ষও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না, পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে। এর জেরে কিছু ক্ষণের মধ্যেই পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে ভয়াবহ অবস্থা হল।
মেট্রো স্টেশনের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে হালফিলের এমনই সব ত্রুটিতে যে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠছে তা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার শোভাবাজার স্টেশনে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মেট্রো থমকে গেলেও দীর্ঘ ক্ষণ বিভিন্ন স্টেশনে আটকে থাকা যাত্রীরা বুঝতে পারেননি আসলে কী হয়েছে। যাত্রীদের বড় অংশের অভিযোগ, স্টেশনে মাইক্রোফোনের ঘোষণার সঙ্গে ডিসপ্লে বোর্ডের সামঞ্জস্য না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। ওই রাতের ঘোষণায় মেট্রো পরিষেবা নিয়ে সমস্যার কথা বলা হলেও, প্রবেশপথের বোর্ডে দিব্যি পরিষেবা চালু থাকার বার্তা জ্বলজ্বল করছিল বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
মেট্রো রেল সূত্রের খবর, পরিস্থিতি জটিল হওয়ার পরে পার্ক স্ট্রিট কন্ট্রোল রুম থেকে জেনারেল ম্যানেজার, চিফ অপারেশনস ম্যানেজার-সহ অন্য আধিকারিকেরা নিরন্তর ঘোষণা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এই অবস্থা কেন? মেট্রো সূত্রের খবর, স্টেশনগুলিতে ব্যবহৃত মাইক্রোফোন প্রযুক্তিগত ভাবে যথেষ্ট পুরনো, তা ছাড়া কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিতও নয়। ফলে প্রয়োজন মতো কন্ট্রোল রুম থেকে ঘোষণার ব্যবস্থায় কোনও বদল করা যায় না। সব কিছুই একা স্টেশন মাস্টারকে সামলাতে হয়। ফলে সমন্বয়ের কাজ ব্যাহত হয়।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ মানছেন, মাইক্রোফোনের সমস্যার কথা। তাঁরা জানাচ্ছেন, নন এসি রেকের কামরায় পাখার শব্দে প্রায় কিছুই শোনা যায় না। এসি রেকে বাইরের শব্দ ভিতরে পৌঁছয় না। প্ল্যাটফর্মের টিভিতে তারস্বরে বিজ্ঞাপন বা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান চলে। যা থেকে মেট্রোর আয় হয়। তাতে মেট্রোর জরুরি ঘোষণা প্রায়ই ঢাকা পড়ে যায়। বিমানবন্দরের ধাঁচে জরুরি তথ্য জানানোর কাজে টিভি বা ডিসপ্লে বোর্ডকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা তাঁদের নেই বলেই দাবি।
মেট্রো যাত্রীদের একাংশের মতে, ঘোষণা ব্যবস্থার ত্রুটি মেরামতির পাশাপাশি বিমানবন্দরের ধাঁচে প্ল্যাটফর্মের টিভি এবং ডিসপ্লে বোর্ডে জরুরি বিজ্ঞপ্তি ভেসে ওঠার প্রযুক্তিও থাকা উচিত। প্রত্যেক স্টেশনের প্রবেশপথেও বড় এলইডি পর্দা লাগানোর ব্যবস্থা করে পরিষেবা সচল রয়েছে কি না, তা যাত্রীদের জানানো প্রয়োজন। যাতে আচমকা মেট্রো বন্ধ হলে যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগেই তা জানতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে মেট্রোর এক কর্তার স্বীকারোক্তি, ‘‘ময়দান স্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরে ট্রেনের কামরায় ঘোষণার ব্যবস্থা উন্নত করতে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু স্টেশনের ঘোষণা ব্যবস্থাও উন্নত করা খুবই জরুরি। না হলে ছোট সমস্যাও বড় আকার নেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy