ফাইল চিত্র।
ঝকঝকে রাতের আকাশ। একের পর এক বিমান নেমে আসছে কলকাতায়। তিন-চারটি বিমানের পিছনে নামার জন্য অপেক্ষা করছে চেন্নাই থেকে আসা ইন্ডিগোর একটি বিমান।
বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঠিক সেই সময়ে ঝনঝন করে বেজে উঠল কলকাতা বিমানবন্দরের এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-এ থাকা ল্যান্ড ফোন। অফিসার ফোন তুলতেই অন্য প্রান্ত থেকে ভেসে এল কন্ঠ, ‘‘আই-ফ্লাই ওয়ান ওয়ান সিক্স (ইন্ডিগোর ওই চেন্নাই-কলকাতা বিমানের কোড নম্বর) কলিং। প্লিজ় গিভ ক্লিয়ার টু ল্যান্ড।’’ ওইটুকু বলে ফোনের ও-পারে থাকা ব্যক্তি ফোন কেটে দেন।
অফিসার অবাক! একেবারে পাইলটের মতো ভাষা! আকাশে ওড়ার সময়ে প্রতি মুহূর্তে এটিসি অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন পাইলটেরা। বিমানবন্দরে নামার সময়ে শেষ মুহূর্তে ঠিক ওই ভাষাতেই পাইলট এটিসি অফিসারের কাছে জানতে চান ‘ক্লিয়ার টু ল্যান্ড?’ কিন্তু, তিনি তো আর ল্যান্ডলাইনে ফোন করে বলবেন না! এটিসি অফিসারের কানে গোঁজা হেডফোনে সেই বার্তা পাঠাবেন। বৃহস্পতিবার রাতে যে অফিসার ফোন ধরেন, তিনি খানিকটা হকচকিয়ে যান। সহকর্মীদের কাছ থেকে ওই বিমানের অবস্থান জানতে চান। জানা যায়, সেই বিমান তখনও কলকাতা থেকে কিছুটা দূরে। কোনও ভাবেই তখন তার নামার জন্য অনুমতি চাওয়ার কথা নয়। সেই বিমানের আগে নামার জন্য প্রস্তুত অন্য বিমানও।
মিনিট দুয়েকের মধ্যে আবার বেজে ওঠে ওই ল্যান্ডলাইন। একই পুরুষকন্ঠ ইংরেজিতে বলেন, ‘‘কী হল! আপনার কাছ থেকে নামার জন্য অনুমতি চাইলাম, আপনি দিলেন না কেন! এ বার কিন্তু আমি গো-অ্যারাউন্ড করতে বাধ্য হব।’’ বিমান নামার সময়ে কোনও কারণে সমস্যা হলে মুখ ঘুরিয়ে আবার আকাশে উড়ে যাওয়াকে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘গো-অ্যারাউন্ড’ বলা হয়।
সিনিয়র এটিসি অফিসারেরা জানিয়েছেন, রাতে ওই সময়ে একের পর এক বিমান নেমে আসছিল। এ রকম সময়ে এটিসি অফিসারদের প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হয়। সামান্যতম বিভ্রান্তিও মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিতে পারে। সময় বা হিসেবের সামান্য হেরফের থেকে বড়সড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। এমন সময়ে এই ধরনের বার্তা এলে তা থেকে ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। দ্বিতীয় বার ফোন আসার পরে অফিসার আবার ফিরে গিয়ে জানতে চান, পাইলট কি সরাসরি ল্যান্ডলাইনে ফোন করছিলেন! কারণ, বিমানের ভিতরে পাইলটের কাছে স্যাটেলাইট ফোন থাকে। সেই ফোন থেকে তিনি চাইলে সরাসরি ফোন করতে পারেন।
ওই বিমানের সঙ্গে যোগাযোগে থাকা এটিসি অফিসার পাইলটকে সে কথা জিজ্ঞাসাও করেন। পাইলট জানান, তিনি কাউকে ফোন করেননি। মিনিট কয়েকের মধ্যে যাত্রীদের নিয়ে নির্বিঘ্নে নেমে আসে বিমানটি। এটিসি-র একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএসএনএল-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে যে নম্বর থেকে দু’বার ওই কল এসেছিল, তা বার করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের হাতে তদন্তের জন্য ওই নম্বর তুলে দেওয়া হয়েছে।
এটিসি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এটিসি-তে এই ধরনের ভুয়ো ফোন এসেছে। সে সব ছিল ‘বিমানে বোমা রাখা আছে’ গোছের নাশকতায় সতর্ক করার ফোন। কিন্তু, এ একেবারে নতুন অভিজ্ঞতা। পাইলটের মতো ভাষায় ফোন করে অফিসারদের বিভ্রান্ত করার এই চেষ্টা সাংঘাতিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy