যাদবপুরকাণ্ডে ধৃত ন’জন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা সকলেই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ন’জনের বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। এক এক জন এক এক রকম কথা বলছেন বলে দাবি পুলিশের। কে সঠিক কথা বলছেন? সত্যের খোঁজে তাই এ বার ধৃত ন’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, এই ঘটনায় আরও কয়েক জন পড়ুয়া জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তাঁদের বিষয়েও খোঁজ চালানো হচ্ছে।
গত ৯ অগস্ট, বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর বাড়ি নদিয়ায়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। র্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু বলে অভিযোগ করে ছাত্রের পরিবার। ছেলের মৃত্যুতে হস্টেলের আবাসিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রের বাবা। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ।
এই ঘটনায় গত শুক্রবার প্রথম গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরীকে। রবিবার সকালে আরও দু’জনে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন দুই পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। তাঁদের জেরা করে বুধবার আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাকিরা, জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) এখনও পড়াশোনা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় দু’টি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল থেকে। ওই জোড়া ডায়েরিও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত ১০ অগস্ট হস্টেলে তল্লাশি চালিয়ে ৬৮নং ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই ঘরেই থাকতেন নিহত ছাত্র। তবে সেই ডায়েরিতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সৌরভকে গ্রেফতারের পর তাঁকে জেরাপর্বে একটি চিঠির বিষয় উঠে আসে। সেই চিঠির সূত্র ধরেই গত ১২ অগস্ট রাতে ওই ১০৪ নম্বর ঘরে তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। তার পরই উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় ডায়েরি। ডায়েরির ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় ওই চিঠির উল্লেখ রয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন ধৃত পড়ুয়া মনোতোষ। ওই ঘরেই গত ৯ অগস্ট রাত ৯টার পর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নির্যাতিত ছাত্রকে। সেখানে চিঠি লেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ধৃত সৌরভ এবং সপ্তক। যদিও সৌরভ দাবি করেছিলেন, চিঠি লেখার সময় তিনি ছিলেন না। তদন্তকারীদের দাবি, চিঠির ছবি তুলে এক জনকে তা পাঠিয়েছিলেন সৌরভ। ধৃত পড়ুয়া দীপশেখর জেরায় দাবি করেছেন, চিঠিটি তাঁর লেখা। মৃত ছাত্রের হয়ে দীপশেখরই চিঠিটি লিখেছিলেন। এই চিঠি এবং ডায়েরি নিয়ে ধৃতদের দাবির কতটা সত্যতা রয়েছে, তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি ৯ অগস্ট রাতে হস্টেলে ঠিক কী ঘটেছিল? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতেই এখন তদন্তে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy