ফাইল চিত্র।
এটাই পদ্ধতি!
প্রতিটি নির্বাচনের আগেই তোলাবাজি, কাটমানি ও সিন্ডিকেট নিয়ে হুঁশিয়ারি দেবে প্রশাসনের শীর্ষ মহল। বিরোধীরাও গলা চড়াবেন। ঠিক যেমন গত বুধবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ভাবী কাউন্সিলরদের সিন্ডিকেট ও তোলাবাজি নিয়ে হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি বদলাবে কি? আরও এক নির্বাচনের আগে সেটাই প্রশ্ন।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, গত ভোটে মমতা কাটমানির টাকা ফেরত দিতে বলার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। দিনকয়েক চুপ ছিলেন নেতা-দাদারা। শোরগোল থিতিয়ে যেতেই যে কে সে-ই! পুরভোটের পরেও তেমনটাই হতে পারে। তাঁদের অভিযোগ, পুর পরিষেবার মাধ্যমেই বছরভর সব চেয়ে বেশি টাকা কামানোর কারবার চলে। মমতাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর অজানা নয়। জনসভায় তিনি বলেন, ‘‘আমার এলাকায় কেউ ঘরবাড়ি করলে সমস্ত কিছু আমার থেকে কিনতে হবে, তা হবে না। কেউ ঘরবাড়ি করলেই আমাকে এত টাকা দেবে, তা-ও হবে না।’’
রাজনৈতিক দাদাদের তোলাবাজি সব চেয়ে বেশি চলে আবাসন ও ফ্ল্যাট তৈরির নামে। শুধু বালি-পাথরকুচি-ইট কেনাই নয়, তাঁদের ‘দাক্ষিণ্যে’ তৈরি হয় পুরো আবাসনই। ভাগের টাকা বুঝে নিয়ে তবেই প্রোমোটারের হাতে ফ্ল্যাটের চাবি দেন তাঁরা। সেই ভাগের হার কোথাও বর্গফুটে ৮০০ টাকা, কোথাও হাজার ছুঁইছুঁই। সল্টলেক, নিউ টাউনে আবার নির্মাণ সামগ্রীর জন্য এক-একটি নির্মাণ সংস্থার থেকে এক-এক রকম টাকা তোলা হয়। এ ছাড়াও আছেন ‘সেটিং দাদা’রা। যাঁরা মোটা দক্ষিণা নিয়ে নকশা অনুমোদন থেকে জলের ব্যবস্থা— সব করিয়ে দেন। দক্ষিণা না দিলে? কাজই হবে না।
নিউ আলিপুরের এক বাসিন্দাকে ছ’মাস ছুটে বেড়াতে হয়েছিল নিজের বাড়ির কাজ করাবেন বলে। এলাকার কয়েক জন তাঁকে বলেন, ‘‘এখন সর্বত্র কাজ বন্ধ। কাজ শুরু হলে প্রথমে প্রোমোটারদের কাজই হবে। কারণ, আমরাই বছরভর নেতাদের দেখি। আমাদের কাজ না দিলে আপনার বাড়ি ভাঙাই পড়ে থাকবে।’’ হুমকির পরে কয়েক মাস জুতোর সুখতলা খইয়েও কাজ করানো যায়নি। শেষে ভোটের দেড় মাস আগে সেই কাজ করান তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওই দেড় মাসে হঠাৎ সর্বত্র বাড়ি তৈরির কাজে ছাড় দেওয়া হয়। নিজেরা পারব না বুঝেই এলাকার ছেলেদের কাজ দিতে হল। দু’লক্ষ টাকার কাজে তিন লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। ওই অতিরিক্ত টাকাটাই নাকি ভোটের ফান্ড!’’
দক্ষিণ কলকাতার এক প্রোমোটার আবার বললেন, ‘‘পুর অনুমোদন নিয়েই কাজ করছিলাম। স্থানীয় এক নেতা জানালেন, পুরসভার ব্যাপারটা তিনি দেখে দেবেন। কিন্তু একতলার গ্যারাজ ও দুটো গুদামঘর তাঁর লাগবে! স্পষ্ট জানাই, সাহায্য লাগবে না। তখন ওই নেতা বলেন, আমার সাহায্য ছাড়া আবাসনে জলই ঢুকবে না।’’ বাধ্য হয়েই গ্যারাজ ও গুদাম লিখে দিই।
থানায় বা মুখ্যমন্ত্রীর চালু করা গ্রিভান্স সেলে অভিযোগ জানানো যায়। তবে তা করতে গিয়ে কী মাসুল দিয়েছেন, জানালেন এক ব্যবসায়ী। বেলেঘাটার অবিনাশচন্দ্র ব্যানার্জি লেনে প্রোমোটিংয়ের কথা ছিল তাঁদের। পুর অনুমোদনও ছিল। তবে দু’বছরেও কাজ শুরু করা যায়নি। উল্টে, এলাকার নেতার স্নেহধন্য কয়েক জন জমি তাঁদের নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। অভিযোগ, থানায় গিয়েও লাভ হয়নি। উল্টে অভিযুক্তদের ডেকে বলা হয়, ‘‘তোমাদের নামে এই ব্যক্তি অভিযোগ করতে এসেছেন। কথা বলে মিটিয়ে নাও। তোমরা বছরভর আমাদের দেখ, তাই কিছু বললাম না। এর পরে জমি লিখে দিতেই হল।’’ অভিযোগ, ওই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জমির দখল নেওয়া, ক্লাবে বিস্ফোরক রাখা-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
ওই দাদারাই এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বোঝাচ্ছেন, কারা ভোট দিতে যাবেন, কারা নয়! বন্দর এলাকার এক নেতার স্নেহধন্যের মন্তব্য, ‘‘কোথাও বড় প্রজেক্ট হলে দাদা আমাদের পাঠান। আমরা গিয়ে ঝামেলা পাকাই। আমরাই ঝামেলা মেটাতে দাদার কাছে প্রজেক্ট-কর্তাদের নিয়ে যাই। দাদা সব সেট করে দেন। ভোটও সেট আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy