Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Drinking water

জলের বোতলের অতিরিক্ত দাম, হোটেলকে ভর্ৎসনা কোর্টের

জলপাইগুড়ির বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অভিমন্যু সিংহ ২০১৭ সালের জুন মাসে বন্ধুদের সঙ্গে ময়নাগুড়ি বেড়াতে যান। সেখানে এক দিন দুপুরের খাবার খেতে স্থানীয় একটি হোটেলে ঢুকেছিলেন।

অভিযোগ, তাঁরা তিনটি জলের বোতল কেনেন যার গায়ে মূল্য লেখা ছিল ১৮ টাকা। অথচ বিলে দেখা যায়, জলের বোতলপিছু ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ, তাঁরা তিনটি জলের বোতল কেনেন যার গায়ে মূল্য লেখা ছিল ১৮ টাকা। অথচ বিলে দেখা যায়, জলের বোতলপিছু ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। প্রতীকী চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৩৮
Share: Save:

বন্ধুদের সঙ্গে নতুন জায়গায় হোটেলে খেতে গিয়ে পানীয় জলের বোতল চেয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু খেয়াল করেন, জলের বোতলের গায়ে যে দাম লেখা রয়েছে, বিলে তার চেয়ে সাত টাকা করে বেশি দাম ধার্য করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এর বিরুদ্ধে মৌখিক প্রতিবাদ করে সে দিন লাভ হয়নি। তবে হাল ছাড়েননি জলপাইগুড়ির ওই বাসিন্দা। বছর চারেক আগের ওই ঘটনায় প্রতারিত হয়েছেন মনে করে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। ওই আদালত অভিযোগকারীর পক্ষে রায় দিলে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যায় বিরোধী পক্ষ। সম্প্রতি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতও জেলা আদালতের সেই রায়কেই বহাল রেখেছে।

জলপাইগুড়ির বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার অভিমন্যু সিংহ ২০১৭ সালের জুন মাসে বন্ধুদের সঙ্গে ময়নাগুড়ি বেড়াতে যান। সেখানে এক দিন দুপুরের খাবার খেতে স্থানীয় একটি হোটেলে ঢুকেছিলেন। অভিযোগ, তাঁরা তিনটি জলের বোতল কেনেন যার গায়ে মূল্য লেখা ছিল ১৮ টাকা। অথচ বিলে দেখা যায়, জলের বোতলপিছু ২৫ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কেন জলের বোতলপিছু ৭ টাকা করে বেশি নেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুললে হোটেলের কর্মীরা তাতে আমল দেননি বলে অভিযোগ। অভিমন্যুর কথায়, ‘‘প্রতিবাদ করতে গেলে হোটেলের কর্মীরা উল্টে আমায় অপমান করেন। বাধ্য হয়ে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করি।’’

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত রায়ে ওই হোটেলের সমালোচনা করে জানায়, এই ভাবে দাম বেশি নেওয়া আসলে এক প্রকার অসাধু ব্যবসা। আদালত এ-ও জানিয়েছিল, ক্রেতা ঠকানোর এমন ব্যবসা চলতে থাকলে ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট হোটেলমালিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হতে পারে। সেই রায়ে অভিযোগকারীকে সব মিলিয়ে ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সংশ্লিষ্ট হোটেলমালিককে নির্দেশ দিয়েছিল জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। কিন্তু সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন ওই হোটেলমালিক। হোটেলের তরফে যুক্তি ছিল, সার্ভিস চার্জ আদায়ের জন্যেই জলের বোতলপিছু সাত টাকা করে বেশি দাম নেওয়া হয়েছিল।

গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের বিচারকও অভিযোগকারী যুবকের পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তিনি ওই হোটেলমালিককে আরও কড়া ভাষায় সমালোচনা করে জানিয়েছিলেন যে, কোনও পণ্যের এমআরপি-র থেকে বেশি দাম নেওয়া খুবই অন্যায়। এই ধরনের মানসিকতা থাকলে সেই পণ্যের বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করা দরকার বলেও বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি জলপাইগুড়ি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কে পূর্ণ সমর্থন করে মামলাকারীকে আরও অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হোটেলমালিককে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

এই রায় প্রসঙ্গে ওই হোটেলমালিকের পক্ষের আইনজীবী অমিত নাথ বলেন, ‘‘আমরা এই রায়ে খুশি নই। রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করব।’’ আর লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পিছু হটতে রাজি নন অভিযোগকারী অভিমন্যুও। তিনি বলছেন, ‘‘আমার মতো কোটি কোটি মানুষ এই ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। এই মামলায় যত দূর যেতে হয় যাব।’’

রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এই রায় প্রসঙ্গে রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘এই রায় নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন, পণ্যের গায়ে যে দাম লেখা রয়েছে, বিক্রেতা তার চেয়ে বেশি দাম নিলে সরাসরি ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ করুন অথবা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করুন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy