Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
board exam

পরীক্ষা হবে না, অনিশ্চয়তাই ভাবাচ্ছে পড়ুয়াদের

হিসেবে করোনা অতিমারি হারিয়ে দিল নকশাল আমলের সেই অস্থির সময়কেও।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৫:২৫
Share: Save:

সেটা ছিল সত্তরের দশকের নকশাল আমল। পরীক্ষা দু’বছর পিছিয়ে যাওয়া বা ফল প্রকাশে মাসের পর মাস দেরি হওয়াটা তখন নতুন কিছু ছিল না। কিন্তু পরীক্ষা বাতিলের মতো ঘটনা বোধহয় তখনও ঘটেনি। সেই হিসেবে করোনা অতিমারি হারিয়ে দিল নকশাল আমলের সেই অস্থির সময়কেও।

সত্তরের দশকে যাঁরা পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের অনেকেরই মনে পড়ছে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নকশাল আমলে পিছিয়ে গিয়েছিল দু’বছর। কিন্তু পরীক্ষা বাতিল হওয়ার মতো ঘটনা ঘটল করোনার হাত ধরে।

নকশাল আমলে, ১৯৭২ সালে পরীক্ষায় বসার কথা ছিল
সাহিত্যিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর। সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “১৯৭২ সালে আমার এমএ পরীক্ষায় বসার কথা ছিল। পরীক্ষা পিছিয়ে গিয়ে অবশেষে তা হল ১৯৭৪ সালে। ফল বেরোলো আরও পরে। চাকরি থেকে শুরু করে সব দিক থেকেই দু’বছর পিছিয়ে গিয়েছিলাম। তখন খুব খারাপ লেগেছিল। কিন্তু নকশাল আমলের থেকেও এই সময়ের অতিমারির পরিস্থিতি আরও খারাপ। কত মানুষ মারা যাচ্ছেন। গোটা বিশ্ব জুড়ে অতিমারির যে ঝড় বইছে, তাতে হয়তো পরীক্ষা পিছিয়েও দেওয়া যেতে পারত।”

সেই সময়ের আর এক পরীক্ষার্থী, বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক লালমোহন সামন্ত বলেন, “১৯৭১ সালে এমএ পরীক্ষা দিয়ে ’৭৩ সালে পাশ করলাম। পাশ করার আগেই অবশ্য চাকরি পেয়ে যাই। কারণ, যে সংস্থা আমাকে নিয়েছিল, তারা আমার আগের পরীক্ষার ফল দেখেই বুঝেছিল যে, এমএ পরীক্ষায় ফেল করব না।”

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আরও পিছিয়ে দেওয়ায় সায় ছিল না বেশির ভাগ পরীক্ষার্থীরই। লেক টাউন এলাকার বাসিন্দা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনির্বাণ মজুমদার বলল, “ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল, একটা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হোক। পরীক্ষা হবে না জেনে মনখারাপই লাগছে। এত দিনের পরিশ্রম কোনও কাজেই এল না হয়তো।” আবার টালিগঞ্জ এলাকার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিংশুক দাসের কথায়, “আইসিএসই বা সিবিএসই বোর্ডে যারা পড়াশোনা করছে, তাদের তো একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা পিছিয়ে পড়ছিলাম। পরীক্ষা বাতিল হওয়ায় আমরা এ বার মন দিয়ে একাদশ শ্রেণির পড়াশোনা করতে পারব।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে ই-মেল পাঠিয়ে যাঁরা পরীক্ষা নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৭৯ শতাংশই মাধ্যমিক পরীক্ষা না-নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। আর ৮৩ শতাংশ মানুষ উচ্চ মাধ্যমিক না-নেওয়ার পক্ষে সায় দেন।

তবে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষেও কিন্তু মত দিয়েছেন অনেকে। এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মতে, “এ বার পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সরকার থেকে আমাদের ট্যাব দেওয়া হয়েছিল। সেই ট্যাবের সাহায্যেই পরীক্ষা নেওয়া যেত। পরীক্ষা না-হওয়ায় মন ভেঙে গিয়েছে। সিবিএসই এবং সিআইএসসিই বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল
হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই দুই বোর্ড জানিয়েছে, যাদের মূল্যায়ন পছন্দ হবে না, তারা চাইলে করোনা কেটে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা দিতে পারবে। উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও এই সুযোগ থাকা উচিত।” এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক কৌশিক রায় মনে করেন, “এ বার কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে জটিলতা তৈরি হবে। আমার ছেলে ফিজ়িক্স নিয়ে পড়তে চায়। ভাল কলেজ কিসের ভিত্তিতে ওকে ফিজ়িক্স নিয়ে পড়ার সুযোগ দেবে?”

অন্য বিষয়গুলি:

board exam Pandemic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy