Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Hotels

খালি ঘর, নিস্তব্ধ ব্যাঙ্কোয়েট, করোনাকালে শহরের বড় হোটেলগুলোর ভরসা এখন বিকল্প আয়

এক সময়ে হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটের ঠিকরে পড়া আলো এখন ম্রিয়মাণ, ঘর কার্যত খালি। এরই মধ্যে বিকল্প আয়কে হাতিয়ার করে ভেসে থাকার চেষ্টা করছে তারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৭:০২
Share: Save:

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে আপাতত বন্ধ কলকাতার হোটেল-রেস্তরাঁ, বার, স্পা ও জিমগুলি। এক সময়ে হোটেলের ব্যাঙ্কোয়েটের ঠিকরে পড়া আলো এখন ম্রিয়মাণ, ঘর কার্যত খালি। তবে এরই মধ্যে শিবরাত্রির সলতের মতো বিকল্প আয়কে হাতিয়ার করে ভেসে থাকার চেষ্টা করছে তারা।

নামী হোটেল-রেস্তরাঁর খাবার আগ্রহীদের দরজায় পৌঁছনোর যে পরিষেবা গত বছর শুরু হয়েছিল, এ বারেও তা শুরু হয়েছে। তেমনই করোনা-কালে ঘরে থাকার একঘেয়েমি কাটাতে অনেকেই হোটেলে কয়েক দিনের অতিথি হতে চাইছেন। ন্যূনতম আয় ধরে রাখতে তাঁদের সেই ‘স্টেকেশন’ ব্যবসাও আঁকড়ে ধরছেন বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ।

গত বছর লকডাউনে ধাক্কা খাওয়ার পরে নিয়ম শিথিল হওয়ায় ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছিল হোটেল-রেস্তরাঁগুলি। শহরের নামী পাঁচতারা হোটেলগুলি সূত্রের খবর, সেখানে সব চেয়ে বেশি ব্যবসা আসে ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়া থেকে। বিয়ের পাশাপাশি সেখানে ‘মাইস’ (মিটিং-ইনসেন্টিভ-কনফারেন্স-এগজ়িবিশন) ব্যবসাও ভাল চলে। হোটেলের একাধিক ব্যাঙ্কোয়েটে দিনে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন রোজকার ব্যাপার ছিল। ঘর ভাড়া আয়ের অন্যতম বড় উৎস হলেও সেই দৌড়ে ব্যাঙ্কোয়েট ভাড়াই সব চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু বিভিন্ন হোটেল-বেস্তরাঁয় সেই কর্পোরেট বৈঠকে আপাতত দাঁড়ি টেনেছে কোভিড পরিস্থিতি। তার বদলে প্রাধান্য পাচ্ছে ভার্চুয়াল বৈঠক। কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের চলও ভালই, যাতে ব্যাঙ্কোয়েট এবং হোটেলের ঘর, দু’টোই লাগে। গত বছরের শেষ থেকে সেই চেনা ছবি ফিরতে শুরু করলেও ফের তাতে থাবা বসিয়েছে কোভিড।

দ্য পার্ক, কলকাতার এরিয়া জেনারেল ম্যানেজার প্রমোদ ভাণ্ডারী জানাচ্ছেন, সেখানে সামাজিক ও কর্পোরেটের অনুষ্ঠান প্রায় বন্ধ। ভার্চুয়াল বৈঠকের জন্য ভবিষ্যতে কর্পোরেট অনুষ্ঠানে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানের বহরও কমেছে। আগের বুকিং অনেকেই বাতিল করছেন।

প্রায় একই সুর জে ডব্লিউ ম্যারিয়টের জেনারেল ম্যানেজার সুমিত সুরির গলায়। সেখানে সরকারি বিধি মেনে জনা পঞ্চাশেক অতিথিকে নিয়ে বিয়ের আয়োজন হলেও তা গত বছরের মতো নয়।

আর ঘরের বুকিং? জে ডব্লিউ ম্যারিয়টে ঘরের সংখ্যা ২৮১টি। সুমিত জানাচ্ছেন, গত জানুয়ারি-মার্চে প্রায় ৩৫ শতাংশ ঘর ভর্তি ছিল, দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যা নেমে এসেছে ১০ শতাংশের নীচে। প্রমোদের দাবি, আগে ৭০-৭৫ শতাংশ ঘর ভর্তি থাকলেও এখন তা নেমেছে ১৮-২০ শতাংশে। ফলে কমেছে ঘরের ভাড়াও।

তবে করোনার একঘেয়েমি কাটাতে হোটেলে থাকতে আসা অতিথিরাই আপাতত অক্সিজেন জোগাচ্ছেন জে ডব্লিউ ম্যারিয়ট, দ্য পার্ক কলকাতা, আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গল বা হায়াত রিজেন্সি কলকাতার মতো হোটেলগুলির ব্যবসায়।

তবে ‘স্টেকেশন’-এর সেই পরিষেবা নিতে অতিথিদের মানতে হচ্ছে বহু সরকারি বিধিনিষেধ। ঘরে বসেই মিলছে খাবার, ওয়াইফাই পরিষেবা। ঘর থেকে বেরোতে মানতে হচ্ছে নিয়মকানুন। কেউ কেউ অতিথিদের জন্য প্যাকেজ-ও তৈরি করেছে। আইটিসি জানাচ্ছে, গাড়ি চালিয়ে অন্য শহর থেকে অনেকেই ছুটি কাটাতে আসছেন শহরের পাঁচতারা হোটেলে। প্রমোদ জানান, তাঁদের হোটেলের পুরনো অতিথি ও বিমানকর্মীদের জন্যেও কিছু ঘরের বুকিং রয়েছে।

আর রয়েছে পাঁচতারার ‘হোম ডেলিভারি’ ব্যবসা। দীর্ঘদিনের অতিথিদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি এ বার নতুন ক্রেতা টানতেও ঝাঁপাচ্ছে তারা। তাই কেউ ‘অন হুইলস’ পরিষেবার মেনুতে যোগ করেছে নতুন পদ, আবার কেউ চালু করেছে নিজস্ব অ্যাপ।

তবে কোভিড পরিস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠানের বহর কমলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য আশাবাদী সব হোটেল কর্তৃপক্ষই। তাই এ বছরের শীতের মরসুমে বিয়ের বুকিং পেতে এখন থেকেই ঝাঁপাচ্ছেন বহু হোটেল কর্তৃপক্ষ। নতুন নতুন বিকল্পকে সঙ্গে নিয়ে আপাতত স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় শহরের পাঁচতারা হোটেলগুলি।

অন্য বিষয়গুলি:

Business Hotels
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy