ছট-দূষণ: ছটপুজোর জেরে জলে ভাসছে ফুল ও উপচার। রবিবার, রবীন্দ্র সরোবরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
চলতি বছরের অক্টোবরের মাঝামাঝিই রবীন্দ্র সরোবরের জলের মান পরীক্ষা করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী, সেই পরীক্ষায় জলের মান ‘সি’ এসেছিল। অর্থাৎ প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিশোধন ও জীবাণুনাশের পরে যে উৎসের জল (এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্র সরোবর) পানযোগ্য। সরোবরে ছটপুজো হওয়ার পরে সেই জলের মান কোন ‘ক্যাটেগরি’-তে যাবে, আপাতত তা নিয়েই চিন্তায় পরিবেশবিদেরা।
তাঁদের বক্তব্য, জাতীয় পরিবেশ আদালতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে যে হলফনামা জমা দিয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ), সেখানে উল্লেখ ছিল রবীন্দ্র সরোবরের জলের মান ‘সন্তোষজনক’। গত বছর ছটপুজো থেকে প্রতি মাসে এক বার করে সরোবরের জল পরীক্ষা করেছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তার উপরে ভিত্তি করেই কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ ওই রিপোর্ট দাখিল করেছিলেন। কিন্তু গত দু’দিনের দূষণে সরোবরের জলের মান খারাপ হয়েছে বলেই আশঙ্কা পরিবেশকর্মীদের।
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, গত অক্টোবরে সরোবরের জলের যে নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল, তাতে জলে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া ছিল ১১০০ এমপিএন (মোস্ট প্রোবাবেল নম্বর)। ফেকাল কলিফর্মের সংখ্যা ছিল ৪০০ এমপিএন। এখন জলের গুণগত মান ভাল, কী খারাপ তা নির্ধারণের অন্যতম মাপকাঠি হল জলে এই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি। বাকিগুলি হল জলে জৈবিক অক্সিজেন চাহিদা (বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড), লবণের হার, ক্ষারের হার-সহ একাধিক বিষয়।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মাপকাঠি অনুযায়ী, গুণগত মান ও ব্যবহার অনুযায়ী জলের পাঁচটি ‘ক্যাটেগরি’ রয়েছে।—‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’ এবং ‘ই’। ‘এ’ ক্যাটেগরির ক্ষেত্রে যেমন জলে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০ এমপিএন বা তার থেকে কম থাকার কথা। ক্যাটেগরি ‘বি’-এর ক্ষেত্রে মোট কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৫০০ এমপিএন বা তার কম থাকার কথা। ক্যাটেগরি ‘সি’-এর ক্ষেত্রে মোট কলিফর্ম আবার প্রতি মিলিলিটারে ৫০০০ এমপিএন বা তার কম থাকার কথা।
জলে ভাসছে পুজোর উপচার এবং প্লাস্টিক।
সরোবরের জলের ধারাবাহিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়ার উপস্থিতি পাঁচ হাজারের কম এসেছিল। ব্যতিক্রম চলতি অগস্টে। সে বার প্রতি ১০০ মিলিলিটারে সরোবরের জলে মোট কলিফর্মের উপস্থিতি ছিল ১৭ হাজার এমপিএন! আর ফেকাল কলিফর্মের সংখ্যা ছিল সাত হাজার
এমপিএন! এখনও পর্যন্ত সেটাই সর্বোচ্চ। সরোবরের জলে সর্বনিম্ন কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল চলতি মে-তে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, সে বার জলে মোট কলিফর্ম ছিল প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৮০০ এমপিএন ও ফেকাল কলিফর্মের উপস্থিতি ছিল ৪০০ এমপিএন।
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ফেকাল কলিফর্ম সাধারণত মানুষের মল-মূত্রেই থাকে। ফলে সরোবরের জলে ফেকাল কলিফর্ম কোথা থেকে এল? এ নিয়ে বিস্মিত তাঁরা। তা হলে কি নিকাশির জল মিশছে ওখানে? উত্তর এখনও জানা নেই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক তথা ‘এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ’-এর অধিকর্তা পঙ্কজকুমার রায় বলেন, ‘‘পুজোর উপকরণ ফেলার ফলে সরোবরের জল যে আরও দূষিত হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই দূষণের পরিমাণ কত, তা পরবর্তী পরীক্ষার পরেই বোঝা যাবে।’’
সরোবরের দূষণ নিয়ে রাজ্য সরকারকে বারবার সতর্ক করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। নিয়ম ভঙ্গ হলে এ বার বড় আর্থিক জরিমানা করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল আদালত। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দূষণের জল কত দূর গড়ায়, তা নিয়েই চিন্তিত পরিবেশবিদেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy