মঞ্চের যুক্তি, এখনও পর্যন্ত কোনও সবুজ বাজি রাজ্যে স্বীকৃতি পায়নি। ফাইল ছবি
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অস্তিত্ব-ই স্বীকার করতে নারাজ পরিবেশকর্মীদের একাংশ। শব্দবিধি পালনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিষ্ক্রিয়তা যার অন্যতম কারণ।
শব্দদূষণের বিরোধিতা করা পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘শব্দদূষণ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ পেলেই পর্ষদ নিজেদের দায়িত্ব অস্বীকার করে। পুলিশের কোর্টে বল ঠেলে দেয়। তাই পর্ষদের অস্তিত্ব আমরা গ্রাহ্যই করি না। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানাব।’’ যদিও পর্ষদের এক কর্তার দাবি, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সব পদক্ষেপই করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, শব্দদূষণ সংক্রান্ত এক মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি বন্ধের দায়িত্ব পুলিশের। কোথাও সেই নির্দেশ লঙ্ঘিত হলে এবং শব্দদূষণ হলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-র উপরে সেই দায় বর্তাবে। তাঁকে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভাবে দায়বদ্ধ করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করা হবে। এই নির্দেশের প্রসঙ্গ টেনে পরিবেশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, বিশ্বকর্মা পুজোয় দেখা গিয়েছে, নির্দেশ অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন জায়গায় বাজি ফেটেছে এবং সঙ্গে তারস্বরে মাইক এবং ডিজে বেজেছে।
এই প্রসঙ্গে নব বলছেন, ‘‘কয়েকটি থানা এলাকায় পুলিশ সক্রিয় হলেও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সার্বিক সক্রিয়তা চাইছি। না হলে চলতি বছরের পুজোতেও শব্দ-তাণ্ডবের হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই।’’ তাই ‘সবুজ মঞ্চ’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, পুজোর মরসুমে যে সব থানা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ভাল কাজ করবে, তাদের প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দেবে সংগঠন। এবং যে সমস্ত থানা দূষণ নিয়ন্ত্রণে গা-ছাড়া মনোভাব দেখাবে, তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবে তারা।
পাশাপাশি, সবুজ বাজির বিরোধিতাও করেছে সবুজ মঞ্চ। মঞ্চের যুক্তি, এখনও পর্যন্ত কোনও সবুজ বাজি রাজ্যে স্বীকৃতি পায়নি। নবর দাবি, ‘‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরীক্ষায় সবুজ বাজি পাশ করার মূল্যই নেই। কারণ, সবুজ বাজির অনুমোদন দেবে রাজ্য পরিবেশ দফতর। বৈঠকে দফতর জানিয়েছে, তারা এখনও কোনও বাজির অনুমোদন দেয়নি।’’
সব ধরনের শব্দযন্ত্রে শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘সাউন্ড লিমিটর’ লাগানো বাধ্যতামূলক, ডিজে নিষিদ্ধ করার নির্দেশ মানা এবং শব্দবাজি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবেশকর্মীরা। যদিও পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোল নেই। কারণ, জনপ্রতিনিধিদের মদতেই তো শব্দবিধি ভাঙা হয়। ফলে নিয়মটা মানবে কে?’’ যদিও রাজ্য পরিবেশ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘শব্দবিধি পালনে পরিবেশ দফতর এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে সব চেষ্টা হচ্ছে। তবে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের সদিচ্ছা এবং সচেতনতাও চাই।’’
রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, ইতিমধ্যেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সঙ্গে কথা হয়েছে অন্য দফতরের। কথা হয়েছে পুলিশ এবং পুজো কমিটিগুলোর সঙ্গেও। যাঁরা শব্দযন্ত্র ভাড়া দেন, তাঁদের সাউন্ড লিমিটর বাধ্যতামূলক করতে বলা হয়েছে। পরিবেশমন্ত্রীর আশ্বাস, ‘‘শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সবাইকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘিত হলে আইনি পদক্ষেপও করা হবে। সব স্তরে সচেতনতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে পুজোয় শব্দতাণ্ডবের থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy