শুটআউটের ২৪ ঘণ্টা পরেও থমথমে নিউ টাউনের আবাসন। পর্দার ফাঁকে কৌতূহলী চোখ। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
ভাড়াটে-আতঙ্কে ভুগছে শহরের একাধিক আবাসন। নিউ টাউনের একটি আবাসনে লুকিয়ে থাকা পঞ্জাবের দুই গ্যাংস্টারের সঙ্গে এসটিএফের গুলির লড়াইয়ের ঘটনার পরে বহু জায়গাতেই পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন বহুতলের আবাসিকেরা। নিজেদের আবাসনের ভাড়াটেদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের অনুরোধ জানাচ্ছেন পুলিশকে। সেই সঙ্গে বহুতলের নিরাপত্তা আরও কঠোর করার কথাও ভাবছেন তাঁরা। এমনই একটি আবাসনের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘দিনেদুপুরে যে ভাবে গুলি চলেছে, তাতে ঘরেই শত্রু বসে আছে কি না, তা জানব কী করে? এই নিরাপত্তাহীনতা থেকেই সব ঢেলে সাজানো হবে।’’
শহরের অনেক বহুতলেরই নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার হাতে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ফ্ল্যাটের মালিক বা ভাড়াটেরা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে চান না। ফলে নিরাপত্তার দিকটি কার্যত উপেক্ষিত থেকে যায়। কম খরচে পাওয়া সংস্থার কর্মীদের ভাল প্রশিক্ষণ বা জরুরি সময়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা— কোনওটাই প্রায় থাকে না। এর সঙ্গে রয়েছে অভিজাত আবাসনে ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার সময়ে ভাড়াটের নথি ঠিকমতো পরীক্ষা না করার অভিযোগ। কত হাত ঘুরে, কার কাছে কোন ফ্ল্যাট পৌঁছচ্ছে, তা বহু আবাসন কমিটিরও অজানা থেকে যায়। ফ্ল্যাটে কাদের আনাগোনা রয়েছে, সেই তথ্য সংরক্ষণেও খামতি থাকে বহু জায়গায়। বহু আবাসনে দিনের পর দিন সিসি ক্যামেরা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ। তবে নিউ টাউনের ঘটনার পরে অবশ্য হুঁশ ফিরেছে বহু আবাসন কমিটির।
যেমন, বৃহস্পতিবারই শ্যামপুকুর থানায় যান এলাকার বেশ কয়েকটি বহুতলের আবাসিকেরা। ওই সব আবাসনে থাকা ভাড়াটেদের সম্পর্কে যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করার অনুরোধ করেছেন তাঁরা। যাদবপুর থানায় নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় এক আবাসনের তরফে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে।
কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের পাশে একটি বড়সড় আবাসনের আবাসিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীলাঞ্জন দাস বলেন, ‘‘আমরা তো ভাড়াটেদের পরিচয়পত্র পরীক্ষা করতে পারি না। তাই পুলিশকে বলেছি। তবে আমাদের আবাসনে ভাড়াটেদের চুক্তিপত্র সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা রাখা হয়। আগামী দিনে ভাড়াটেদের পুলিশি যাচাইয়ের (ভেরিফিকেশন) কাগজ রাখাটাও আমরা বাধ্যতামূলক করতে চলেছি।’’
ইএম বাইপাসের ধারে একটি বহুতল আবাসনের রেসিডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রাহুল গুপ্ত বলেন, ‘‘আবাসনের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশিক্ষণের মান কেমন, তা সব সময়ে জানা সম্ভব হয় না। তবে নতুন ভাড়াটে এলে তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র পুলিশের কাছে পাঠানো হয়।’’
মুকুন্দপুরের একটি বড় আবাসনের অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোমা ঘোষ জানাচ্ছেন, নতুন ভাড়াটে এলে অ্যাসোসিয়েশনকে সে সম্পর্কে জানানো হয়। নিউ টাউনের ঘটনার পরে ফের ভাড়াটেদের তথ্য যাচাইয়ের উপরে জোর দিয়েছেন তাঁরা। ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপত্তায় আর কী কী বন্দোবস্ত করা যায়, সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছি। পুলিশের তরফে আমাদের সাহায্য করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’’— বলছেন সোমা।
পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আবাসন কমিটিগুলিকে নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিতে অনুরোধ করেছি। পুলিশকে আরও কড়া হতে বলব।’’ আর কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকার বলেন, ‘‘আবাসনগুলির নিরাপত্তার বিষয়টি সারা বছরই পুলিশ নজরে রাখে। এ বার এই বিষয়ে আরও জোর দিতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy