দুরবস্থা: আবর্জনার স্তূপে প্লাস্টিকের পাত্রে জমে রয়েছে জল। বাগুইআটির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। নিজস্ব চিত্র
একটি ফাঁকা জমিতে জমছে আবর্জনার স্তূপ। অন্যটি ভরেছে ঝোপজঙ্গলে। বছর ঘুরলেও পাড়ায় একই ভাবে রয়ে গিয়েছে খাটালের ব্যবসা। আবর্জনার স্তূপে জল জমে মশা জন্মানোর আঁতুড়ঘরও তৈরি।
গত বছর নভেম্বরে বিধাননগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শচীন্দ্রলাল সরণির এই পাড়াতেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ বছরের শতাব্দী সাহার। তার পরে মশা এবং জল জমা ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। জঙ্গল সাফ করা, ফাঁকা জমির মালিককে নোটিস ধরানো, খাটালের মালিককে সতর্ক করা-সহ একাধিক পদক্ষেপ করে পুরসভা। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি ফের যে কে সেই!
সম্প্রতি শতাব্দীর বাড়ির সামনে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির পিছনের ফাঁকা জমিটি আস্তাকুঁড়ে পরিণত। প্লাস্টিকের কাপ, ডাবের খোলা, ভাঁড় থেকে শৌচাগারের ভাঙা জিনিস— কিছুই বাদ নেই। শতাব্দীর স্বামী সঞ্জীব সাহার কথায়, ‘‘ওই জমি পরিষ্কার করা নিয়ে আমি বহু বার বলেছিলাম। তখন বড় জঙ্গল ছিল। ডেঙ্গিতে স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে জঙ্গল কাটানো হয়। এখন পুরো এলাকার আবর্জনা ওখানে ফেলা হয়। ফলে আশপাশের এলাকায় দিনেও মশার কামড় খেতে হয়।’’
ওই জমির উল্টো দিকের জমিটিতে আবার গজিয়েছে জঙ্গল। সেখানে কোথায় মশা ডিম পারতে পারে, তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল। শচীন্দ্রলাল সরণির ওই পাড়ায় ডেঙ্গি-মৃত্যুর পরে সেখানে বেআইনি খাটালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিধাননগর পুরসভা। কিন্তু দেখা গেল, সেই খাটাল এখনও চলছে রমরমিয়েই। খাটাল ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ‘‘খাটাল তুলে দিলে না খেয়ে মরতে হবে।’’
অথচ দিনকয়েক আগেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে বিধাননগর-সহ বিভিন্ন পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। ফাঁকা জমি আবর্জনামুক্ত রাখার উপরে তিনি নির্দিষ্ট ভাবে জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু শচীন্দ্রলাল সরণির অবস্থা এখনও শোচনীয়। এ নিয়ে কথা বলতে স্থানীয় কাউন্সিলর জয়শ্রী বাগুইকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।
গত বছর শতাব্দীর মৃত্যুর কিছু দিন পরেই ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাহাপাড়ায় স্বপন মিস্ত্রি নামে এক ব্যবসায়ীরও ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবার অবশ্য সেই ঘটনা নিয়ে আর কথা বলতে চাননি। ওই ওয়ার্ডেরই দেশবন্ধুনগরের বাসিন্দা প্রশান্ত রাপ্তান জানাচ্ছেন, সপ্তাহখানেক আগেই তাঁর পরিবারের এক সদস্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাক্তন মেয়র পারিষদ প্রণয় রায়ের দাবি, তাঁরা এলাকায় নিয়মিত ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছেন। ফাঁকা জমির মালিকদের তালিকা করে নোটিস পাঠানো হচ্ছে।
গত দু’বছর করুণাময়ী বাসস্ট্যান্ড থেকেও ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে অবশ্য দেখা গেল, জল জমার উপযোগী জমানো টায়ার বাসস্ট্যান্ডে বিশেষ পড়ে নেই। তবে আনাচেকানাচে জমে রয়েছে জল ও আবর্জনা। এমনকি পাখিদের জন্য বাসস্ট্যান্ডের রাস্তায় রাখা জলভর্তি পাত্র। জঙ্গলে ভরে রয়েছে সল্টলেকের একাধিক পার্ক এবং খালপাড়ও।
বিধাননগরের কেষ্টপুর, অর্জুনপুর, দেশবন্ধুনগরের মতো জায়গা থেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। ডেঙ্গি-মোকাবিলায় সম্প্রতি প্রতিটি ওয়ার্ডে গাপ্পি মাছ ছেড়েছে বিধাননগর পুরসভা। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সল্টলেক বা তার বাইরে পুর এলাকারঅনেক জায়গায় এখনও জঙ্গল ও আবর্জনা জমে রয়েছে। ফলে বাড়ছে মশার উপদ্রবও।তবে পুরসভার মেয়র পারিষদ বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, বিধাননগরে এখনও ডেঙ্গি তেমন ভাবে ছড়ায়নি। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও লার্ভা পাওয়া গেলে বা ডেঙ্গির খবর এলে প্রয়োজনীয় সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। যে সব জায়গার কথা শুনছি, সেখানে দ্রুত পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy