প্রতীকী চিত্র।
অষ্টমীর সন্ধ্যায় অাত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করলেন এক প্রৌঢ় দম্পতি। পঞ্চসায়র এলাকার নয়াবাদের ফ্ল্যাট থেকে বুধবার রাতে ওই দম্পতিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে, স্ত্রীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। স্বামী এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দম্পতি থাকতেন নয়াবাদের প্রফুল্ল অ্যাপার্টমেন্টে। সেখানে ৬৫ বছরের তপন চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী অরুণা দেবী (৫৫) একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে থাকতেন। তাঁদের একমাত্র ছেলে বছর তেইশের অর্পণ চট্টোপাধ্যায় কমার্শিয়াল পাইলটের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। সেই প্রশিক্ষণের জন্য তিনি দিল্লিতে থাকতেন। প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে, ওই দম্পতি ছেলেকে পাইলট বানানোর জন্য প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তপনবাবু ফ্ল্যাট কেনাবেচার ব্যবসা করতেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বুধবার বিকেলে ওই অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, ওই দিন বিকেলে অর্পণ দিল্লি থেকে আসেন। তিনি বার বার কলিং বেল বাজানোর পরেও দরজা খোলেননি তাঁর বাবা-মা। তিনি বার বার ফোনও করেন। কিন্তু ফোনও কেউ ধরেননি। তখনই প্রতিবেশীদের খবর দেন অর্পণ। তাঁরাও বার বার ধাক্কা দিলেও ভেতর থেকে কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না। তার পরেই খবর দেওয়া হয় পুলিশে।
আরও পড়ুন: বিসর্জনের শোভাযাত্রায় ডিজে নিষিদ্ধ! প্রতিমা নিরঞ্জন চলবে চার দিন
তদন্তকারীরা বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। সেখানেই শোওয়ার ঘরে গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলতে দেখা যায় অরুণা দেবীকে। পাশের ডাইনিং রুমের মেঝেতে পাওয়া যায় তপনের সংজ্ঞাহীন দেহ। ঘরে একটি হাতে লেখা চিঠি পাওয়া যায়। দম্পতির ছেলে লেখাটি অরুণার বলে শনাক্ত করেন।
আরও পড়ুন: জয় পুরুষতন্ত্রেরই, কোনও মহিলা শবরীমালায় ঢুকতে পারলেন না
চিঠির বয়ান অনুযায়ী, ওই দম্পতির বাজারে অনেক টাকা দেনা হয়ে গিয়েছিল। কার্যত তাঁরা কপর্দকশূন্য হয়ে গিয়েছিলেন। ওই নোট দেখে তদন্তকারীদের প্রাথমিক অনুমান, অর্থনৈতিক কারণেই তাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে অবসাদে ভুগছিলেন। সেই অবসাদ থেকেই আত্মঘাতী হয়েছেন দম্পতি। অরুণা দেবী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এবং তপনবাবু বিষ খেয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুমান পুলিশের। দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণটা ঠিক কী, তা জানতে তদন্তকারীরা অর্পণের সঙ্গে কথা বলছেন। তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, ছেলে অর্পণ কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। সেই প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা জোগাতে ঋণ করেন তপন। সেই টাকা শোধ করতে না পেরে তাঁদের মধ্যে অবসাদ বাড়তে থাকে। তারই জেরে এই ঘটনা মনে করছেন তদন্তকারীরা। তপন এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি।
(এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশের সময়, দম্পতি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে লেখা হয়েছিল। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যু হলেও স্বামী এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত)
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy