শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল ছবি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে মঙ্গলবার যে ঘটনা ঘটেছে, তা সেখানকার পরিবেশের পক্ষে বেমানান বলে মন্তব্য করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই ঘটনার পিছনে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। কী করে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানতে তদন্ত হবে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার সরস্বতী পুজো উপলক্ষে জড়ো হওয়া পড়ুয়ারা করোনা-বিধির কোনও রকম তোয়াক্কা না করেই অনেকে মিলে হাল আমলের জনপ্রিয় ‘টুম্পা সোনা’ গানের সঙ্গে নাচানাচি করেন বলে অভিযোগ। ওই পুজোর উদ্যোক্তা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সদস্য-সমর্থকেরা।
উপাচার্য আগেই জানিয়েছিলেন, কোভিড-পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস চলছে বলে পুজোর আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেখানে এখন কোনও ছাত্র সংসদও নেই। তাই পুজোর টাকা কাকে দেওয়া হবে, তা নিয়েও ধন্দ ছিল। টিএমসিপি-র তরফে পুজো করার আর্জি জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় কোভিড-বিধি মেনে পুজো করার কথা বলেছিলেন। গত শনিবার তিনি জানিয়েছিলেন, কোভিড-বিধি মেনে সরস্বতী পুজো হলে কোনও সমস্যা নেই। তাঁর যুক্তি ছিল, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিস তো খোলা থাকছে। পুজোয় আপত্তি কোথায়?
এর পরেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে নিজেদের খরচে পুজো করে টিএমসিপি। সেখানে রাজ্য সরকারের সাফল্যের কথাও তুলে ধরা হয়। কোথাও আবার কৃষি আইনের বিরোধিতাও ছিল পুজোর অনুষঙ্গ।
ক্যাম্পাসে সে দিনের নাচ-গানের প্রসঙ্গে বুধবার পার্থবাবু বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যে চটুল নৃত্য হয়েছে, তা সময় ও পরিবেশের সঙ্গে মানানসই নয়। আমি খবর নিয়ে জেনেছি যে, এর পিছনে প্রাক্তন কয়েক জন ছাত্র আছেন। আমি সংগঠনকে বলব তাঁদের চিহ্নিত করতে। এখনকার কোনও ছাত্র এতে জড়িত কি না, তা-ও দেখতে বলেছি। তাঁদের চিহ্নিত করে সতর্ক করে দিতে বলেছি।’’
ওই দিন পুজোর অঞ্জলির সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা মণিশঙ্কর মণ্ডল। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অঞ্জলির সময়ে আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিমা দর্শন করতে গিয়েছিলাম। প্রতিমা দেখেই ফিরে আসি। নাচ-গান কখন হয়েছে, জানি না।’’
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি ইউনিয়নের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তবু সেখানে তারা পুজো করছে কী ভাবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (কুটা) সাধারণ সম্পাদক সাংখ্যায়ন চৌধুরী এ দিন জানান, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর রেওয়াজ কোনও কালেই ছিল না। বছর কয়েক ধরে ছাত্র সংসদের পরিচালনায় পুজো হচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে ছাত্র সংসদই নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোনও ছাত্র গোষ্ঠীকে পুজো করার অনুমতি দেননি। সাংখ্যায়নবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।’’
শিক্ষামন্ত্রী এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সে তো সব জায়গাতেই ইউনিয়নের মেয়াদ ফুরিয়েছে। তা বলে কি ছাত্রেরা সরস্বতী পুজো করবে না? পুজো হবে, কিন্তু কোনও ভাবেই বিধি ভাঙা যাবে না। এটা তো আমি আগেই বলেছি।’’ শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘আমি এসএমএস করে পুরো বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছি।’’
টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য শনিবারই জানিয়েছিলেন, রাজ্যের প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজো হবে। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়েই সরস্বতী পুজো ভাল ভাবে হয়েছে। কিন্তু কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে যা হয়েছে, তা না হলেই ভাল হত। ওটা পড়ুয়াদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy