ফাইল চিত্র।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল শহরের সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের। প্রয়োজন ছিল ‘একমো’ (এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেন) সাপোর্টের। কিন্তু শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে সমস্ত একমো-শয্যা ভর্তি। অগত্যা, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে একটি একমো যন্ত্র ওই বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাতেই চিকিৎসা চলছে ওই চিকিৎসকের।
এই ঘটনার পরেও কয়েক জন করোনা রোগীর ফুসফুসে সংক্রমণের চিকিৎসায় একমো-র প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু বেসরকারি-সরকারি কোনও হাসপাতালেই একমো শয্যা পাওয়া যায়নি। গত বছরও মালদহের এক চক্ষু চিকিৎসক ও শহরের দুই সরকারি হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে একমো সাপোর্টের জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। কারণ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দু’টি একমো যন্ত্র থাকলেও প্রশিক্ষিত কর্মী ছিলেন না। এখন সেখানে একটি যন্ত্রে পরিষেবা শুরু হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় একমোর গুরুত্ব বা চাহিদা বার বার করে সামনে আসার পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য ভবনও। সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যে ‘একমো-হাব’ গড়ে তোলা হবে। সেখানে সাতটি একমো যন্ত্র থাকবে। আর ওই হাবটি হবে এসএসকেএম হাসপাতালের অ্যানেক্স শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। স্বাস্থ্য শিবিরের কথায়, সঙ্কটজনক রোগীর চিকিৎসায় এমন ‘হাব’ রাজ্যে প্রথম।
কয়েক দিন আগেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের নতুন চারতলা ভবনের দু’টিতে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই হাসপাতালে বিশেষ কেয়ার ইউনিট তৈরি হচ্ছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের বেশ কিছু শয্যা থাকবে। সেখানেই সাতটি একমো যন্ত্র থাকবে। বিভিন্ন হাসপাতালের একমো যন্ত্রগুলি এক জায়গায় নিয়ে আসা হবে।’’ সূত্রের খবর, একমো-র চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি নিয়ে দিন পনেরো আগে স্বাস্থ্য ভবনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কেন্দ্রীয় ভাবে পরিষেবা দিতে এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ থেকে একমো যন্ত্র নিয়ে যাওয়া হবে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। সেই মতো সম্প্রতি পিজি-র প্রতিনিধিদল মেডিকা হাসপাতালে গিয়ে একমো ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করেন।
ভেন্টিলেশনে দেওয়ার পরেও অক্সিজেনের মাত্রা না বাড়লে একমো সাপোর্ট দেওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন একমো সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার সভাপতি, চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী। সরকারি স্তরে একমো-হাব তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটি অত্যন্ত কার্যকর হবে। কারণ, এই উদ্যোগকে সরকারি বা বেসরকারি বলে আলাদা করলে চলবে না। শুধু করোনা নয়, হার্ট অ্যাটাক, নিউমোনিয়া, অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য অপেক্ষমাণদেরও একমো সাপোর্ট লাগে। অসংখ্য রোগের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি কার্যকর।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরের রক্ত অক্সিজেনহীন হয়ে পড়ে। সেই রক্ত দেহ থেকে বার করে কৃত্রিম ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়। সেখানে কার্বন ডাইঅক্সাইড বাদ দিয়ে রক্তে অক্সিজেন যুক্ত করা হয়। তার পরে শুদ্ধ রক্ত বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে পুনরায় শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
আমরি, মেডিকা, অ্যাপোলো-র মতো বেসরকারি হাসপাতালে একমো পরিষেবা রয়েছে। সূত্রের খবর, পিজি-তে আগেই একটি একমো যন্ত্র ছিল। ২০২০-তে পোলবায় স্কুলগাড়ি দুর্ঘটনার পরে কাদাজল ফুসফুসে ঢুকে যাওয়া বালক ঋষভকে সেখানে একমো সাপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। তাতে ভাল কাজ হওয়ায় সেই সময়ে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওই যন্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে তা ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষিত ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক, ওই যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষিত কর্মী, প্রশিক্ষিত নার্স, সিসিইউ টেকনিশিয়ান ও কর্মী— এই চারটি বিভাগ মিলিয়ে তিন-চারটি শয্যার জন্য ১৫-২০ জনের একটি দল লাগে। এবং তা ২৪ ঘণ্টার জন্য। সূত্রের খবর, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় প্রতিটি হাসপাতালে একমো ব্যবস্থাপনার আলাদা দল রাখাটা কিছুটা সমস্যার। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, পিজির সিটিভিএস, সিটিভিএ, ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিভাগ-সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরাও থাকবেন ওই ‘একমো-হাব’-এর দায়িত্বে। স্বাস্থ্য ভবনও চিকিৎসক, নার্স, কর্মী পাঠাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy