Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Fire

Fire: অগ্নিকাণ্ডের বছর ঘুরলেও ‘সবই চলছে পুরনো নিয়মে’

বহুতলের দেওয়ালে এক বছর আগের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি এখনও টাটকা।

(বাঁ দিকে) নিউ কয়লাঘাটা ভবনের গায়ে পড়েছে নতুন রঙের প্রলেপ। (উপরে) ভবনের ভিতরে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে এমনই তারের জট। মঙ্গলবার।

(বাঁ দিকে) নিউ কয়লাঘাটা ভবনের গায়ে পড়েছে নতুন রঙের প্রলেপ। (উপরে) ভবনের ভিতরে ইতিউতি ছড়িয়ে রয়েছে এমনই তারের জট। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী, নিজস্ব চিত্র

ফিরোজ ইসলাম  এবং চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২ ০৬:১২
Share: Save:

বহুতলের দেওয়ালে এক বছর আগের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি এখনও টাটকা। ভস্মীভূত চোদ্দোতলার ধ্বংসাবশেষ ঢাকতে গোটা ভবনে রং হলেও তা কার্নিসের পোড়া কালো দাগকে ঢাকতে পারেনি। আগুন লাগার মাস দুই পরে ধাপে ধাপে প্রায় ৪৯ বছরের পুরনো নিউ কয়লাঘাটা ভবনের অফিস চালু হলেও এখনও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। গোটা ভবনে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার কাজ করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই দাবি কর্মীদের একাংশের।

গত বছরের ৮ মার্চ সন্ধ্যায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল স্ট্র্যান্ড রোডে, পূর্ব রেলের নিউ কয়লাঘাটা ভবনে। সেই আগুনে রেল, আরপিএফ, দমকল ও পুলিশের কর্মী-সহ ন’জনের মৃত্যু হয়। ঘটনার রাতে তাঁদের মধ্যে ছ’জনকে শনাক্ত করা গেলেও বাকি তিন জনের পরিচয় পরে জানা যায়। সেই অগ্নিকাণ্ডের পরে জরুরি ভিত্তিতে ভবনের দ্বিতীয় তলে কিছু কাজ চললেও প্রায় দু’মাস বন্ধ ছিল বাকি অফিস। তার পরে ধাপে ধাপে ভবনের দফতরগুলি ফের চালু করা হয়।

মঙ্গলবার সেই ভবনে গিয়ে দেখা গেল, বাইরে রঙের পোঁচ পড়েছে। বিভিন্ন তলে একাধিক দফতরে কাজ চলছে আর পাঁচটা কর্মব্যস্ত দিনের মতোই। তবে আজও বন্ধ ১৪তম তলটি, যেখানে সে দিন প্রথম আগুন লেগেছিল। ভস্মীভূত ওই তল এখন পরিষ্কার করে চলছে রং ও মেঝে তৈরির কাজ। জানা গিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের আগে সেখানেই ছিল সার্ভার রুম, সিগন্যাল ও টেলি কমিউনিকেশনসের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কার্যালয়। সার্ভার রুম থেকেই প্রাথমিক ভাবে আগুন ছড়িয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে কী ভাবে আগুন লেগেছিল, তা আজও স্পষ্ট নয়। এমনকি, অগ্নিকাণ্ডের সময়ে কেন লিফট ব্যবহার করা হয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি। ওই তলেই রেলের তথ্যপ্রযুক্তির শাখা (সেন্টার ফর রেলওয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম বা ক্রিস) ছিল। পূর্ব ভারতের অন্তত পাঁচটি জ়োনের টিকিট সংরক্ষণের বিষয়টি ওই কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হত। এখন ওই ভবনের অন্য তল থেকে সেই কাজ করা হলেও আগের জায়গায় বিভাগটিকে এখনও সরানো যায়নি।

ওই ঘটনার পরে রেল কর্তৃপক্ষ দেশের সমস্ত পুরনো অফিসভবনের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থার খোলনলচে বদলানোর নির্দেশ দেন। সেই মতো ওই ভবন থেকে কাঠের পার্টিশন, ফলস সিলিং খুলে ফেলা হয়। ভবন চত্বরে দমকলের গাড়ি ঢোকায় সমস্যা হয়েছিল বলে অস্থায়ী নির্মাণ ভাঙারও নির্দেশ দেওয়া হয়। আলাদা জলাধার তৈরির পাশাপাশি ফায়ার অ্যালার্ম ও স্মোক অ্যালার্ম বসানোর নির্দেশ আসে। পাশাপাশি বাতানুকূল যন্ত্র থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিজে থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সমস্ত আধিকারিক এবং কর্মীকে অগ্নি-নির্বাপণ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও বলা হয়। এখনও পর্যন্ত ওই ভবনে জলাধার, ফায়ার অ্যালার্ম ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলেও বিশেষ বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাটি চালু করা যায়নি। রেল সূত্রের খবর, সেই কাজ সম্পূর্ণ হলে মাস দেড়েকের মধ্যে ১৪তম তলটি খুলে দেওয়া হতে পারে।

তবে কর্মীদের অভিযোগ, এত বড় ভবনের অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা এখনও পর্যাপ্ত নয়। এখনও ওই বহুতলের বহু জায়গায় ফায়ার অ্যালার্ম নেই বলে তাঁদের দাবি। আগুন নেভানোর প্রশিক্ষণও হয় না। তার পাশাপাশি, গোটা ভবনে আগের মতোই রয়ে গিয়েছে তারের জট। এ দিনও সেখানে কার্যত প্রতিটি তলেই তারের জটের ছবি দেখা গিয়েছে। ওই ভবনের একটি দফতরের এক কর্মীর কথায়, ‘‘অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা তো নামমাত্র, যেমন হওয়া প্রয়োজন, তার তো প্রায় কিছুই নেই। তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর জন্য কিছু অগ্নি-নির্বাপণ সিলিন্ডার আছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় প্রতি তলে তার সংখ্যা খুবই অল্প। অগ্নিকাণ্ডের পরে আগুন নেভাতে এখানকার কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণটুকুর ন্যূনতম ব্যবস্থাও হয়নি। সবই চলছে সেই পুরনো নিয়মে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy