অস্থায়ী ঠিকানায় দত্তাবাদের বাসিন্দারা। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে
শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে জট কাটল। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে দত্তাবাদের ৬০টি পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে আগামী সপ্তাহে শুরু হতে চলেছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। উদ্যোগ ছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র তরফ থেকেও। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারই শুরু হয়ে গিয়েছে এই পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া।
এই পর্বের সূচনা গত শনিবার, যে দিন প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় ছিলেন। রাজভবনে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে এই প্রসঙ্গ তোলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পরদিন বার্নপুরে ইস্কোর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সামনেই মুখ্যমন্ত্রীকে ফের বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বাবুল।
সরকারের এক মুখপাত্র শনিবার জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাঁরা বাড়িওয়ালা, তাঁদের জন্য দু’টি করে এবং অন্যদের একটি করে ফ্ল্যাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আপাতত প্রতিটি পরিবারকে সল্টলেকের অস্থায়ী ঠিকানায় রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। দত্তাবাদ এলাকায় মেট্রোর রুটে যে স্কুলটি রয়েছে, তা অন্যত্র তৈরির জন্য জমি দেবে নগরোন্নয়ন দফতর। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি কোনও আর্থিক সাহায্য পাবে না।’’ খুব শীঘ্রই অসমাপ্ত এই মেট্রো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানান মন্ত্রী।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমি ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর জট কাটাতে উদ্যোগী হই। প্রথমে আমার ডাকা বৈঠকে রাজ্য সরকার প্রতিনিধি পর্যন্ত পাঠায়নি। শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের যে বোধোদয় হয়েছে, তা আখেরে সকলের জন্যই ভাল। আশা করি, এর পরে পরবর্তী কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এ ভাবেই সহযোগিতা করবে রাজ্য।’’
বাম আমলে শুরু হয় এই ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্পের কাজ। নকশা অনুযায়ী, সেই সময়ে ১৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা হয়। নকশা বদলের পরে দেখা য়ায়, মেট্রোর রুটের জন্য দত্তাবাদের ৬০টি পরিবারকে সরাতে হবে। কিন্তু এর পরেই ওই পরিবারগুলিকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তৎপর হয়ে ওঠে। শুরু হয় অস্থিরতা। এক দিকে বামেরা দাবি করে, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে পুনর্বাসন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ দিকে বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকারের কেউ কথা বলেননি। বাসিন্দাদের এই বক্তব্যকে সামনে রেখে পথে নামে বর্তমান শাসক দল তৃণমূলেরই একাংশ। রাজারহাট-নিউ টাউনের বিধায়ক তথা বিধাননগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তের নেতৃত্বে দত্তাবাদে বৈঠক হয়। সেখানে দাবি ওঠে, সার্বিক ভাবে দত্তাবাদের উন্নয়ন না করে মেট্রোর কাজ করা যাবে না। পাশাপাশি, আলোচনার ভিত্তিতে পুনর্বাসন ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এর বিরোধিতায় নামেন বিধাননগরের তৃণমূল বিধায়ক সুজিত বসু ও তাঁর দলবল। এ নিয়ে প্রকাশ্যে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়। দত্তাবাদের দাবিকে সামনে রেখে পথে নামেন বিজেপি-সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়, বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহেরা। বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ ছিল, ভোটের দিকে তাকিয়েই তৃণমূল মেট্রো প্রকল্পের কাজ করতে দিচ্ছে না।
দীর্ঘ এই দড়ি টানাটানির পরে সম্প্রতি বরফ গলে। মেট্রোর জট কাটাতে হস্তক্ষেপ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সূত্রে খবর, গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য সফরের দিন রাজভবনের পথে একই গাড়িতে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। পথে, ভিক্টোরিয়ার সামনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভেলপুরি খাওয়ার পরে রাজভবনে গিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রসঙ্গ তোলেন বাবুল। দত্তাবাদের জট কাটাতে ‘দিদি’-কে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানান তিনি। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। মুখ্যমন্ত্রীও সঙ্গে সঙ্গেই পুরমন্ত্রীকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেন।
নবান্ন সূত্রে খবর, এর পরেই দলের দুই বিধায়ক সুজিত বসু ও সব্যসাচী দত্ত এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমকে নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। কথা বলেন নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গেও। তিনি দ্রুত জটিলতা কাটানোর নির্দেশ দেন। জট কাটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় সুজিত বসুকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে সল্টলেকের সিটি সেন্টারের কাছে একটি বাড়িতে প্রশাসনের সঙ্গে দু’দিন বৈঠক করেন সুজিত। সেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজনদের সঙ্গেও কথা হয় তাঁর। তার ভিত্তিতেই পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত হয়। সুজিত জানান, সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই পরিবারগুলি পুনর্বাসনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। দত্তাবাদের জট যে কেটেছে, শুক্রবার কয়লা ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাবুলকে সে কথা জানিয়েও দেন মুখ্যমন্ত্রী।
সেই সূত্রেই শনিবার দশটি পরিবারের হাতে অস্থায়ী ঠিকানার চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে অন্য পরিবারগুলিও চাবি পেয়ে যাবে বলে দাবি প্রশাসনের। তবু এলাকায় কিছু প্রশ্ন এখনও ঘোরাফেরা করছে। যেমন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রকাশ, যাঁদের বৈধ জমির কাগজ রয়েছে তাঁদের বিকল্প জমিতে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া ইত্যাদি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy