ভিন্ রাজ্য থেকে প্রতি বছরই পুজোর আগে কলকাতায় আসে তারা। উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে বা ঠাকুর দেখতে নয়। উদ্দেশ্য, লোকের অন্যমনস্কতার সুযোগে নিজেদের কাজ হাসিল করা। ‘চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড় ধরা’— এই প্রবাদ বোধহয় তাদের ক্ষেত্রে যথার্থ। দলের সকলেই মহিলা। বছর দুয়েক আগে পুজোর মরসুমে পকেটমারি এবং ছিনতাইয়ের ঘটনায় সক্রিয় হয়েছিল এই মহিলা ‘ব্রিগেড’। তাদের ঠেকাতে গড়িয়াহাট, নিউ মার্কেট, শ্যামবাজার, হাতিবাগান থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন ব্যস্ত বাজারে মোতায়েন করা হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ। কিন্তু পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েই তারা নির্বিঘ্নে কাজ সেরেছিল।
এ বছরও পুজোর সপ্তাহ তিনেক আগে থেকে বাস, মেট্রো এবং শহরের বিভিন্ন বাজারে বেড়েছে চুরি, পকেটমারি। এতেই শেষ নয়। গাড়িতে বসে হয়তো মোবাইলে কথা বলছেন কেউ। হঠাৎই হেঁচকা টান পড়ায় তিনি দেখলেন, ফোন উধাও। লালবাজারের গোয়েন্দাদের অনুমান, এর পিছনেও রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসা ওই মহিলা গ্যাংয়ের মসৃণ ‘অপারেশন’।
মঙ্গলবার সকালে অফিস যাবেন বলে কালীঘাট থেকে মেট্রোয় চেপেছিলেন কল্যাণ চৌধুরী। চাঁদনি চক স্টেশনে নামতেই তিনি দেখেন, তাঁর প্যান্টের পকেটে থাকা দামি মোবাইল উধাও। ঘটনার পরে বৌবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কল্যাণবাবু। এ দিনই বিকেলে কসবা এলাকায় এক মহিলা মোবাইল চোরকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, হোমগার্ডের পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি এক মহিলার সঙ্গে কথা বলতে বলতে আসছিলেন। সে সময়ে পাশ দিয়ে যাওয়া আর এক জন হঠাৎই দেখেন, তাঁর ফোন উধাও। তিনি চিৎকার শুরু করায় ভিড় জমে যায়। পুলিশ এসে হোমগার্ডের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি এবং ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তখনই জানা যায়, ওই ব্যক্তি আসলে ভুয়ো পুলিশ!
সাবধান হোন
• ভি়ড়ে নিজের জিনিসপত্রের বিষয়ে সতর্ক থাকুন
• ঢিলেঢালা ট্রাউজার্সের পকেটে মোবাইল রাখবেন না
• ট্রাউজার্সের সামনের পকেটে রাখুন মানিব্যাগ, মোবাইল
• মহিলারা মোবাইল ব্যাগে ভরে গলায় ঝুলিয়ে রাখতে পারেন
• কাঁধে ব্যাগ থাকলে তার চেন বন্ধ কি না, মাঝেমধ্যেই খেয়াল রাখুন
• গাড়ির কাচ খোলা অবস্থায় মোবাইলে কথা বলবেন না
• যে কোনও সামগ্রী খোয়া যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী থানায় অভিযোগ জানান
শনিবার সন্ধ্যায় মহাত্মা গাঁধী রোডের অফিস থেকে বেরিয়ে হেঁটে বাস ধরতে যাচ্ছিলেন প্রণব বসু। পিছন থেকে এসে তাঁর মোবাইল ছিনিয়ে চম্পট দেয় দুই অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী।
তৃতীয় ঘটনাটি জুলাইয়ের শেষে। ডানলপ থেকে শ্যামবাজারগামী বাসে উঠেছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী অনন্যা বন্দোপাধ্যায়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে এসে তিনি হঠাৎই লক্ষ করেন, ব্যাগের চেন খোলা। ভিতরে থাকা মানিব্যাগ নেই। অনন্যার কথায়, ‘‘আমার দু’পাশে দাঁড়ানো দুই মহিলা বাসের সামনে থাকা দুই মহিলার সঙ্গে তেলুগু ভাষায় কথা বলছিলেন। আমার মনোযোগও ওই মহিলাদের দিকে ছিল। মানিব্যাগ বার করার সময়ে ওই মহিলারাও বাস থেকে নেমে পড়েন।’’ অনন্যার অভিযোগ, ‘‘তেলুগুভাষী ওই মহিলারাই এই চুরিতে জড়িত।’’
তিনটি ঘটনাতেই এখনও দোষীরা কেউ ধরা পড়েনি। চলতি বছরের শুরুতে চিড়িয়াখানায় ভিড়ে মিশে কারও মোবাইল, কারও মানিব্যাগ ছিনতাই করে দিব্যি কাজ হাসিল করছিল তিন মহিলা। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। ধরা পড়ে যায় নাগপুরের বাসিন্দা সীমা মারাঠি, নিমা মারাঠি ও সুমিকা মারাঠি নামে ওই তিন মহিলা। উদ্ধার হয় লুঠের একাধিক সামগ্রী। আবার চলতি বছরের জানুয়ারিতেই পকেটমারির অভিযোগে তিন গুজরাতি মহিলাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গ বলছেন, ‘‘পুজোর মরসুমে পকেটমারি, ছিনতাই রুখতে বিভিন্ন জায়গায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকে। সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রাস্তায় বেরোনোর সময়ে নিজের জিনিস হেফাজতে রাখতে সাধারণ মানুষকেও বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy