ছবি: সংগৃহীত
কোনও উদ্যোক্তা বাজেট ৮০ লক্ষ টাকা থেকে মাত্র পাঁচ লক্ষে নামিয়ে এনেছেন। কেউ জলসা ও ভোগের আয়োজন বাতিল করেও বুঝতে পারছেন না, কুলিয়ে ওঠা যাবে কি না! শহরের সব চেয়ে ‘বড় পুজো’ করে বিখ্যাত উদ্যোক্তারাও এ বার একেবারে ছোট কিছু করেই নিয়মরক্ষা করতে চাইছেন। দক্ষিণ কলকাতার কোটি টাকা বাজেটের একটি পুজোর কর্তারা আবার ভাবছেন, ব্যাঙ্ক থেকে নিজেরাই মোটা টাকার ঋণ নেবেন!
করোনার সংক্রমণ এবং তার জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর আকাশ এতটাই মেঘাচ্ছন্ন যে, ছোট-বড় সব উদ্যোক্তাকেই ব্যাপক হারে বাজেট কমানোর পথে হাঁটতে হচ্ছে। প্রায় ৯৯ শতাংশ উদ্যোক্তাই ঠিক করে রেখেছেন, খরচ বাঁচাতে থিম ছেড়ে ফিরে যাবেন সাবেক পুজোয়। এমনই এক উদ্যোক্তা বললেন, “একটি স্পনসরও জোগাড় হয়নি। এক ধাক্কায় তাই বাজেট একেবারে কমিয়ে দিতে হয়েছে। বাজেট এত কমছে জানলে নাম খারাপ হয়। তাই আপাতত চুপচাপ থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তাঁর মতে, “যে কোনও সংস্থাই বিজ্ঞাপন দেয় লোকে দেখবে বলে। দুর্গাপুজো সেই লোক দেখানোর বড় আসর। কিন্তু করোনার জন্য যদি লোকই না হয়, বিজ্ঞাপন দেবে কে?”
দীর্ঘদিনের পুজো উদ্যোক্তা তথা একডালিয়া এভারগ্রিনের প্রধান, রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় যদিও বললেন, “থিমের পুজোর টাকা তুলতে এ বার ভাল মতোই ভুগতে হবে। কিন্তু আমাদের চিন্তা নেই। সাবেক পুজো ছেড়ে আমরা কোনও দিনও ওই ভাবে টাকা খরচের পথে হাঁটিনি।” তাঁদের ৭৭তম বছরের পুজো নিয়ে তাঁর আরও দাবি, “অনেকে ভাবছেন, পুজো
হবে কি না! আমি বলছি, পুজো হবেই। পুজো করার জন্য জেলে যেতেও রাজি আছি। আমাদের বড় ভোগ হয়। দরকার হলে সেই ভোগ বাদ দেব। কিন্তু পুজো করবই।”
থিমের পুজোর খরচ তুলতে হিমশিম খাওয়ার কথা শোনা গেল ত্রিধারা সম্মিলনীর অন্যতম উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমারের গলাতেও। বললেন, “পুজোর কী হবে, সেপ্টেম্বরটা না কাটলে বলা মুশকিল। ঠিক করে রাখা থিমও বাতিল করতে হল। বাজেট কী দাঁড়াবে, তা-ই তো বুঝতে পারছি না!”
একই বক্তব্য নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “মে মাস থেকেই যেখানে আমাদের পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়, সেখানে এখনও পুজো নিয়ে বসতেই পারিনি। গত বছর থেকেই সর্বত্র স্পনসরের ঘাটতি চলছে। এ বার নমো নমো করেই সারতে হবে মনে হচ্ছে।” সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর সহ-সভাপতি জয়ন্ত ঘোষের মন্তব্য, “স্পনসর বা বিজ্ঞাপন, কিছুই এ বার পাব না। যা করার নিজেদেরই করতে হবে।”
খরচ বাঁচাতে কুমোরটুলি সর্বজনীন আবার ফিরে গিয়েছে ১৯৩১ সালে পুজো শুরুর বছরের থিমে। পুজো কমিটির আহ্বায়ক দেবাশিস ভট্টাচার্য বললেন, “এ বার আমাদের ৯০তম বর্ষ। ১৯৩১ সালে শুরুর বছরে যে ভাবে পুজো হয়েছিল, এ বার ঠিক সে ভাবে করব।” তিনি জানান, সে বার পঞ্চমীর দিন কুমোরটুলি সর্বজনীনের মণ্ডপে আগুন লাগে। তখন পুজোর সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু। আগুন নিভলে রাতারাতি আলাদা আলাদা কাঠামোয় প্রতিমা তৈরি করা হয়। সপ্তমী থেকে সকলে ঠাকুর দেখতে পেরেছিলেন। তাঁর কথায়, “শুরুর সেই সহজ কাজই করতে চাই এ বার।”
জগৎ মুখার্জি পার্কও ফিরে গিয়েছে সাবেক পুজোর পরিকল্পনায়। অন্যতম উদ্যোক্তা দ্বৈপায়ন রায় বললেন, “পুজো যদি হয়, তা হলে সাবেক পুজো করব আমরা। থিম এ বার পারব না।”
‘পুজো যদি হয়’ জাতীয় সংশয় আহিরীটোলা সর্বজনীন ও বাগবাজারের মতো পুজোর উদ্যোক্তাদের গলাতেও। বাগবাজারের পুজো কমিটির সম্পাদক সমর পাল বললেন, “রথের দিন আমাদের প্রতিমা বায়না দেওয়ার নিয়ম। সেটুকুই শুধু করতে পেরেছি। পুজো হবে কি না, সবটাই তো সরকারের সিদ্ধান্তের উপরে নির্ভর করছে। আগ বাড়িয়ে কিছু করতেও পারছি না।”
হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসুর আশ্বাস, “যত দূর জানি, সরকার পুজোর পক্ষে। কিন্তু কতটা জৌলুস থাকবে সেটা বলা যাচ্ছে না। অনেকেরই এ বার বাজেট শূন্যে নেমে গিয়েছে।”
দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমারের দাবি, “বড় পুজো করে বিখ্যাত হয়েছিলাম, এ বার না হয় ছোট করে হব। কম খরচ করে পুজোর টাকা আমরা আমপান বা করোনা মোকাবিলায় তুলে দিতে চাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy