শঙ্কা: গত বছর মণ্ডপে ঢুকতে না পারলেও এ ভাবেই বাইরে ভিড় করেছিলেন দর্শকেরা। একডালিয়া এভারগ্রিন। ফাইল চিত্র
এ বারেও পুজো মণ্ডপে দর্শকের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকছে। কোথাও প্রতিমা দর্শন করতে হবে পাঁচ মিটার দূর থেকে, কোথাও দর্শকদের থামিয়ে দেওয়া হবে মণ্ডপের ১০ মিটার আগেই!
পুজো নিয়ে রাজ্যের অবস্থান কী, জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট। যার উত্তরে শুক্রবার হাই কোর্টে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আদালতের গত বারের নির্দেশ মেনেই এ বার রাজ্যে দুর্গোৎসব হবে। এর পরেই আদালত জানায়, তা হলে তো গত বারের মতো মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখতে হবে। গত বছর মণ্ডপকে কোয়রান্টিন জ়োন ধরে পাঁচ মিটার এবং ১০ মিটার দূরে ‘নো এন্ট্রি’ করতে বলেছিল আদালত। কিন্তু পুজোর ক’দিন মণ্ডপ দর্শকশূন্য থাকলেও দেদার ভিড় দেখা যায় ব্যারিকেডের সামনে। প্রশ্ন উঠেছিল, মণ্ডপ দর্শকশূন্য রেখে লাভ হল কি?
হিন্দুস্থান পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুতপা দাস বলেন, “গত বছর তৃতীয়ার দিন পর্যন্ত দেখেছি, দূরত্ব-বিধি মেনে লোকে প্রতিমা দর্শন করেছেন। কিন্তু পরে ব্যারিকেডের বাইরে ভিড় জমে যায়। এখনও পর্যন্ত যা নির্দেশ, তাতে সেই ভিড় এড়ানো যাবে না বলেই মনে হচ্ছে। তা হলে এমন নির্দেশে কী লাভ!” বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজো উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিল বললেন, “আদালতের এমন রায়ে হতাশ হলাম। এ বার করোনার প্রকোপ অনেকটাই কম, তাই কিছুটা শিথিলতা আশা করেছিলাম। মণ্ডপে ভিড় না করতে দেওয়ার কথা হচ্ছে। কিন্তু বাইরে ভিড় হবেই।”
একই রকম চিন্তিত ত্রিধারা সম্মিলনী পুজোর কর্তা দেবাশিস কুমার। বললেন, “দূর থেকেই প্রতিমা দেখে বেরিয়ে যাওয়ার মতো রাস্তা অনেক ভেবেচিন্তে বার করা হয়েছে। তবু কী হবে, জানি না।” দেশপ্রিয় পার্ক আবার মণ্ডপের বাইরের ভিড় সামলাতে রোবট রাখার ভাবনাচিন্তা করছে। ওই রোবটই দেখবে কে মাস্ক পরেননি, কোথায় ভিড় হচ্ছে। পুজোর কর্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, “এতেও বাইরের ভিড়ের জ্বালা মিটবে বলে মনে হয় না। সবটাই মানুষের সচেতনতার উপরে নির্ভর করছে।” সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাসের অবশ্য দাবি, তাঁদের রাস্তা যথেষ্ট চওড়া। বাইরের ভিড় নিয়ে তেমন সমস্যা নেই।
৬৬ পল্লির পুজোকর্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়ে দিলেন, মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখতে বলা হয়েছে। পুজো কমিটির দায় সেই পর্যন্তই। বাকিটা প্রশাসন বুঝবে। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী যদিও বললেন, “কোনও ভাবেই মানুষের আবেগকে এ ভাবে বেঁধে রাখা যায় না। মণ্ডপে প্রবেশ বন্ধ হলে বাইরে ভিড় হবেই। প্রশাসনের পক্ষেও সেটা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নয়।” একই দাবি উত্তর কলকাতার বৃন্দাবন মাতৃ মন্দিরের পুজো উদ্যোক্তা শিবেন্দু মিত্রেরও। লেক শিব মন্দিরের পুজোকর্তা পার্থ ঘোষ আবার বলেন, “ব্যারিকেড করে আটকাতে গেলে পুজো উদ্যোক্তাদের লোকে মারতে আসেন। ফলে ভিড় দেখলেও দর্শক হয়েই আমাদের থাকতে হয়।” একটু অন্য রকম বক্তব্য বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর কর্তা গৌতম নিয়োগীর। তিনি বলেন, “ব্যারিকেডের বাইরের ভিড় এ ভাবে আটকানো মুশকিল। তবে এক দিকে ভাল। মণ্ডপের মধ্যে নিজস্বী তোলার হিড়িক বাইরের ভিড়ে অনেক কম।”
এ বারের পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে তাদের দিকে, এমনই মত কলকাতা পুলিশের একাংশের। কারণ, পুজোর পাঁচ দিন নাইট কার্ফু তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে পথে বেশি মানুষ নামার আশঙ্কা প্রবল। কিন্তু তাঁরা যদি মণ্ডপে ঢুকতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে ব্যারিকেডের সামনে ভিড় জমতে পারে। যা কালঘাম ছোটাতে পারে পুলিশের।
তবে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তার দাবি, দিন কয়েকের মধ্যেই পুলিশের তরফে পুজোর নির্দেশিকা প্রকাশ করা হবে। তার আগে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে। একই রকম নির্দেশিকা প্রকাশের দাবি প্রশাসনেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy