Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

সংক্রমণের আশঙ্কা নিয়ে কমবয়সিদের স্রোত নবমীতেও

ভিড়ের বয়স কত? পুজোমুখী জনস্রোত ধরে কোনও বারই সেই পরিসংখ্যান খোঁজার চেষ্টা হয় না।

হিড়িক: কুমোরটুলি এলাকায় একটি মণ্ডপের সামনে দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখে ভিড় কমবয়সিদের। রবিবার।  নিজস্ব চিত্র।

হিড়িক: কুমোরটুলি এলাকায় একটি মণ্ডপের সামনে দূরত্ব-বিধির বালাই না রেখে ভিড় কমবয়সিদের। রবিবার। নিজস্ব চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০১:২০
Share: Save:

সুরুচি সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপে প্রবেশের মুখেই রাস্তায় টেবিল-চেয়ার পেতে বসেছিলেন পুলিশ আধিকারিকেরা। মাস্ক ছাড়া কেউ ভিড়ে ঢুকছেন কি না, এক পুলিশকর্মী নজর রাখছিলেন সেই দিকে। মাস্কহীন এক যুবককে সতর্ক করে মাস্ক পরিয়ে ছেড়ে দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু যুবকটি বলে উঠলেন, ‘‘বয়স কত বলুন তো আমার? ২৯। ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের সে ভাবে তো করোনা হচ্ছে না!’’ কড়া ধমক দিয়ে ওই যুবককে কিছু ক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখে পুলিশ। শেষে অতিমারি-বিধি লঙ্ঘনকারীর তালিকায় তাঁর নাম-ঠিকানা, ফোন নম্বর লিখে নিয়ে ছাড়া হয়।

ভিড়ের বয়স কত? পুজোমুখী জনস্রোত ধরে কোনও বারই সেই পরিসংখ্যান খোঁজার চেষ্টা হয় না। কারণ, ভিড়ে মিশে থাকেন সব বয়সের মানুষ। কিন্তু করোনা-কালের পুজোয় সেই ‘রীতি’ বদলেছে।

উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশের পরেও এ বার কারা পুজো দেখতে বেরোন, সে দিকে নজর ছিল। ষষ্ঠী থেকে অষ্টমী পর্যন্ত ভিড়ের নিরিখে দেখা গিয়েছে, প্রায় সব মণ্ডপেই ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সিদের ভিড়। ৪৫-৬০ বছর বয়সির সংখ্যা হাতেগোনা। আর ৬০-এর উপরে দর্শনার্থী নেই বললেই চলে। ‘ট্রেন্ড’ বদলায়নি নবমীর সন্ধ্যাতেও। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘দিন যত এগিয়েছে, মানুষের ভয় ততই যেন কমেছে। সব চেয়ে বেশি আসছেন কমবয়সি ছেলে-মেয়েরা। মনে হচ্ছে, ওঁদের করোনার ভয় একেবারেই নেই!’’

আরও পড়ুন: লন্ডন ফেরত যাত্রী সংক্রমিত করোনায়, বাড়ল উদ্বেগ

শাশ্বতবাবুর মন্তব্যের প্রতিচ্ছবিই এ দিন দুপুর থেকে দেখা গিয়েছে হাতিবাগান, বাগবাজার, কাশী বোস লেন, একডালিয়া, দেশপ্রিয় পার্ক, নাকতলা উদয়নের মতো পুজোয়। চেতলা অগ্রণীর সামনে এ দিন এতই ভিড় ছিল যে, মাস্ক খুলে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত কমবয়সি পুজো-জনতাকে সামলাতে হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে আবার সন্ধ্যায় ভিড়ের মধ্যে একদল যুবকের সঙ্গে তর্ক বাধল কয়েক জন উদ্যোক্তার। এক পুজোকর্তা পরে বললেন, ‘‘ওঁদের মধ্যে তিন জন নাকি করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাই যুক্তি দিচ্ছেন, মণ্ডপে ঢুকতে দিতে হবে। বলছেন, এক বার করোনা হলে তো কিছু দিনের মধ্যে আর হয় না!’’ বাগবাজারের এক পুজোকর্তার আবার অভিযোগ, ‘‘সব চেয়ে নাজেহাল হলাম কমবয়সিদের নিয়ে। নিজস্বী ওঁরা প্রতি বারই তোলেন। এ বার দেখলাম, খুবই বেপরোয়া। মাস্ক পরে থাকার কথা বার বার জানিয়ে হাঁফিয়ে গিয়েছি।’’

চিকিৎসক কুণাল সরকার বললেন, ‘‘আনন্দ-উৎসবে এত দিন ভাটা পড়েছে ভেবেই হয়তো কমবয়সিরা এমন বেপরোয়া। সামনে কালীপুজো। তখন নিয়ন্ত্রণ রাখা আরও কঠিন হবে। মনে রাখতে হবে, আনন্দে মাততে গিয়ে নিজেরা আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের বয়স্কদের জন্যও বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারেন ওঁরা। সেই অভিজ্ঞতা একেবারেই সুখকর নয়।’’

আরও পড়ুন: করোনার গ্রাসে পুজো, অপেক্ষা আগামী শারদীয়ার

চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর মন্তব্য, ‘‘কে বলেছে, ২০ থেকে ৪৫ বছরের মানুষের বিপদ কম? কো-মর্বিডিটি শুধু বয়সের উপরে নির্ভর করে না। যাঁরা বিপদ বুঝে বাড়িতে কাটাচ্ছেন, মাত্র এক জন বেপরোয়া লোকের জন্যই তাঁদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। এই পুজোটা তাই সকলের জন্যই বাড়িতে কাটানোর পুজো হয়ে ওঠা দরকার ছিল।’’

নবমীর রাত যত বেড়েছে, কমবয়সিদের উচ্ছ্বাসে ততই যেন পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে এই ‘দরকারি কথাগুলো’! দশমীর প্রতিমা-দর্শন বা বিসর্জনে হুঁশ ফিরবে কোন জাদুবলে? উত্তর নেই কারও কাছেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy