Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Durga Puja 2020

মঞ্চের আলোকভাষ্যে মণ্ডপে বাজিমাত

দুর্বিপাকে কেউ বাড়ি-বাড়ি চালডাল পৌঁছচ্ছেন, কেউ বা হকারি কি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজও বেছে নিয়েছেন সংসার টানতে।

ঠাকুরপুকুরে এসবি পার্ক সর্বজনীনের পুজো। নিজস্ব চিত্র

ঠাকুরপুকুরে এসবি পার্ক সর্বজনীনের পুজো। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

স্থায়ী মণ্ডপ ততটা নয়। যেন নাগরিক-যাপনেরই একটা ক্যানভাস। চারপাশের চেনা চরিত্রেরাই তাতে নড়েচড়ে।

শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তের কাছে থিমের ভাবনা শুনতে শুনতে থিয়েটারের আলেকশিল্পী সৌমেন চক্রবর্তী যেন কত কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন। সাত মাস আগে ৪৩টা নাটকের দল, নাচের অনুষ্ঠান, গুয়াহাটির পুতুল মিউজিয়মের মতো নানা কাজের ব্যস্ততা থেকে রাতারাতি বেকার-যন্ত্রণায় প্রবেশের মধ্যে জীবনেরই এক পর্বান্তর দেখছিলেন শ্যামনগরের মফসসলি যুবক। ঠাকুরপুকুরে এসবি পার্ক সর্বজনীনের থিম-ভাবনা তাঁর কাছে নিজের বা চারপাশের জীবনেরই আরশি হয়ে উঠল।

লকডাউন-পর্ব শুরু হতেই থইহারা থিয়েটারের হোলটাইমার অজস্র অভিনেতা, কলাকুশলী। দুর্বিপাকে কেউ বাড়ি-বাড়ি চালডাল পৌঁছচ্ছেন, কেউ বা হকারি কি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজও বেছে নিয়েছেন সংসার টানতে। এই পুজো তাঁদের কাছেও বাঁচবার খড়কুটো হয়ে উঠেছে।

থিমপুজোয় আলোর গুরুত্ব অবশ্য নতুন নয়। বেশ কয়েক বছর ধরেই মণ্ডপ-পরিভ্রমণ একটা লাইট অ্যান্ড সাউন্ড অভিজ্ঞতা। তবু এ বার প্রথম থেকেই আলোর ভূমিকাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল পার্থ দাশগুপ্তের। "পুজো কত জন দেখবে তাতো জানতাম না। তবে প্যান্ডেলে ভিড়টা ভাল হবে না, এটাও শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম। তাই এই পুজোয় ভার্চুয়াল দর্শনই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভেবেই থিমটা সাজাই।"- বলছিলেন পার্থ।

অন্য বারের পুজোর থিমে বুদ্ধি করে মণ্ডপের কোনখানটা আলো, কোনখানটা ছায়ায় মোড়া হবে ভেবে অভিঘাত তৈরি করে। এ বার ঠাকুর দেখার অভিজ্ঞতাটাই পার্থ একটা স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি দেখা কিংবা ছোট্ট মিউজিক ভিডিয়োর আমেজ আনতে চাইলেন।

বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতার পুজোর আলোর জন্যও সুদীপ সান্যাল, উত্তীয় জানা, দীনেশ পোদ্দারদের পরিচিতি ছড়িয়েছে। পার্থ খুঁজছিলেন কাউকে যিনি নিজে দরকারে

সারা সন্ধে, রাত মণ্ডপে মাটি কামড়ে থাকতে পারবেন। থিমের সঙ্গে সম্পৃক্ত কবিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে থিয়েটারের সেটের মতো মণ্ডপের কোনও না কোনও কোণ জ্বলে উঠবে, নিভে যাবে। মঞ্চে সুমন মুখোপাধ্যায়, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, অর্পিতা ঘোষ, গৌতম হালদার, সুজন মুখোপাধ্যায় অনেকের সঙ্গেই কাজ করা হয়ে গিয়েছে সৌমেনের। তবে এখনকার ব্যস্ততম অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদারের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। এই পুজোর থিমে সৈকত কুণ্ডুর একটি কবিতা আবৃত্তিতে দেবশঙ্করের কণ্ঠটাই কাজে লাগানো হয়েছে।

এক জীবনের মধ্যে লুকোনো হাজার জীবনের যুদ্ধের কথা বলছে দেবশঙ্করের কণ্ঠ আর মণ্ডপে আতিপাতি খুঁজছে সৌমেনের আলো। মণ্ডপের একধারে হাওড়া ব্রিজের মাথায় চাঁদের আভাস বা গেরস্থালির খুপরিতে আলো জ্বলছে, কবিতায় ঘরে বাইরে যুদ্ধের রকমফেরের গল্পে। সপ্তমীতে সৌমেন বলছিলেন, ‘‘পার্থদার সঙ্গে গল্প করতে করতেই কাজটা হল। এই ভার্চুয়াল ঠাকুর দেখায় আমাদের, আলোকশিল্পীদের গুরুত্বও বেড়ে যাচ্ছে।’’

ডায়মন্ড হারবার রোডের ধারের মণ্ডপে তখন জীবনযুদ্ধের প্রতীক লাল আলোর দিকে তাকিয়ে থমকে নিত্য যাত্রীরা। দেবশঙ্করের কণ্ঠ বলছে, ‘বাঁচতে চাওয়ার চাইতে বড়, যুদ্ধ বল আর কী আছে...!’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Thakurpukur SB Park
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy