বিপর্যয়ের মধ্যেই পুজোর আয়োজন। রবিবার, দুর্গাপিতুরি লেনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বরাবরই ধুমধাম করে কালীপুজোর আয়োজন করেন বাসিন্দারা। তার উপরে এ বছর পুজো পা দিয়ে ৭৫তম বছরে। তাই ছ’মাস আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল এ বারের কালীপুজোয় কী কী হবে। কথা ছিল দু’দিন ধরে হবে জলসা। শিল্পী নির্বাচন করে তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তাও হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু বিপর্যয় ঘটে গেল দুর্গাপুজোর ঠিক আগেই। ১৬ অক্টোবর নির্মীয়মাণ ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জেরে দুর্গা পিতুরি লেন এবং গৌর দে লেনে আচমকা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল একের পর এক বাড়ি। আপাতত সেই বাড়িগুলির আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভাঙাচোরা কিছু কাঠামো কোথাও কোথাও দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওই সব বাড়ির বাসিন্দারাও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। কারও ঠাঁই হয়েছে হোটেলে। কেউ থাকছেন আত্মীয়ের বাড়িতে। কিন্তু তা বলে তো পুজো একেবারে বন্ধ করা যায় না। তাই এই দুঃসময়েও নিজের মতো করে যে যা পেরেছেন, সেই টাকা দিয়েছেন যাতে পুজোটা হয়। সকলের চেষ্টায় রবিবার ভগ্নস্তূপেরই এক ধারে ছোট মণ্ডপে এসেছেন বামাকালী। দীর্ঘ ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও রকমে প্রতিমা এনে পুজো সারলেন দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দারা।
৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম প্রতিমার গায়ে থাকছে না সোনা-রূপোর কোনও অলঙ্কার। এ নিয়ে আক্ষেপ করলেন এলাকার বাসিন্দা ও পুজোর উদ্যোক্তা সৌরভ লাহা, গৌতম লাহা থেকে শুরু করে কৃষ্ণপ্রসাদ গোস্বামীরা। ভগ্নস্তূপের সামনে এক ফালি জায়গায় ছোট করে মণ্ডপ করে প্রতিমা এনেছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, এ রাজ্যের খুব কম জায়গায় বামাকালীর পুজো হয়। তাঁরা প্রথম থেকে বামাকালীরই পুজো করে আসছেন। তাঁদের আরও দাবি, মানত করে অনেকেই সোনার বা রূপোর গয়না দিয়ে পুজো দেন। শুধু গয়না নয়, কালীর হাতের খড়্গ থেকে শুরু করে জিহ্বা, মুণ্ডমালা, শিবের গয়নাও সোনার। হোটেল, আত্মীয়ের বাড়ি অথবা ভাড়া নেওয়া বাড়ি থেকেই দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দারা আয়োজন করেছেন পুজোর। ফলে ফাঁকা জায়গায় প্রতিমার গয়না পরাতেও আর সাহস পাচ্ছেন না কেউ।
পুজোর উদ্যোক্তারা ঠিক করেছিলেন, এ বার ঢাকিও আনবেন না।কিন্তু বাচ্চারা নিজেরাই চাঁদা তুলে দিয়েছে। তবে আট-দশ জন ঢাকির বদলে আনা হয়েছে দু’জন। অন্য বার প্রায় হাজার দুই লোকজনের জন্য থাকে অন্নকূটের ব্যবস্থা। এ বার সেই সংখ্যাটাও কমে দাঁড়িয়েছে ২০০। আর জলসার তো পুরোটাই বাতিল করেছেন তাঁরা। এ বছরের কালীপুজোয় তাই দুধের স্বাদ কোনও রকমে ঘোলে মেটাচ্ছেন দুর্গা পিতুরি লেনের বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy