শূন্যস্থান: পুজোর হোর্ডিং লাগাতে ঢাকুরিয়া সেতুতে বাঁধা হয়েছিল বাঁশ। কিন্তু বাজেট-ঘাটতির কারণে ফাঁকাই পড়ে সেই কাঠামো। ফাইল চিত্র
জমজমাট পুজোর দিনেও রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে দেশপ্রিয় পার্কের দু’টি বিজ্ঞাপনী গেট ভরেনি। ওই পুজোর উদ্যোক্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতি হবে আঁচ করে গত বারের ১৬টি গেটের বদলে এ বার প্রথমেই আটটি গেট করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। একই অবস্থা লেক ভিউ রোডে। সেখানকার বালিগঞ্জ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের পুজোর চারটি গেট মহালয়া থেকে দশমী ফাঁকাই থেকে গিয়েছে! পুজো শেষ হওয়ার আগে আবার হাতিবাগান সর্বজনীনকে কোনও মতে বিধান সরণির কয়েকটি ফাঁকা গেট কম পয়সায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ভরাতে হয়েছে।
দেশ জোড়া আর্থিক মন্দার কারণে শহরের প্রায় সব পুজো ঘিরেই এ বার এমনই বাজেট-ঘাটতির হাহাকার চলেছে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তাঁদের কেউ গত বারের পরিস্থিতি বুঝে এ বার প্রথমেই বাজেট কমিয়ে এনেছিলেন। কারও আবার মন্দার এমন হাল বুঝতেই অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। যতক্ষণে বুঝেছেন, তখন পুজোর মাত্র এক মাস বাকি। এক পুজো উদ্যোক্তা জানালেন, তাঁরা সদস্যেরা মিলে সাধারণত মণ্ডপে বাঁশ পড়ার আগেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে নেন। ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে স্পনসর টাকা দিলে সেই ঋণ মেটান। কিন্তু এ বার সেই ঋণের বোঝা সদস্যদেরই টানতে হবে বলে আশঙ্কা তাঁর। দর্শনার্থীদের আবার অনেকের দাবি, মণ্ডপে ঢুকে এমন বাজেট ঘাটতির হাহাকার তো বুঝতেই পারেননি তাঁরা!
বালিগঞ্জ কালচারালের পুজো উদ্যোক্তা অঞ্জন উকিল বললেন, “আমাদের পুজোয় দারুণ জলসা হয়। এ বার প্রথমেই সেই জলসা বাতিল করেছি। এ ভাবে খরচ কাটছাঁট করে কোনওমতে সামাল দেওয়া গিয়েছে।” একডালিয়া এভারগ্রিনের অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা, রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “অনেক স্পনসর যেমন হাত তুলে নিয়েছে, তেমন অনেকে আবার হাত বাড়িয়েও দিয়েছে।” শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দিব্যেন্দু গোস্বামীও বললেন, “কেউ না কেউ বন্ধু হয়ে ঠিকই পাশে দাঁড়ায়। এ বারও তাই হয়েছে।”
পুজোকর্তারা জানান, দুর্গাপুজোর বাজেটের বেশিরভাগটাই নির্ভর করে থিম এবং তৈরি করার খরচের উপরে। যে শিল্পীকে দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করানো হচ্ছে, তাঁর বাজারদরের উপরে পুজোর বাজেট অনেকখানি হেরফের হয়। ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার উপরে নানা আইনি মোকদ্দমা শুরু হওয়ায় পুজোর জৌলুস ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে বছর দুয়েক ধরে ‘চিন্তা’য় ছিলেন অনেক পুজো উদ্যোক্তা। তবে কর্পোরেট স্পনসরের জোরে সমস্যা হয়নি কোনও বারই। এর সঙ্গেই পাড়ার পুজোয় অনেকে গোপনে অর্থসাহায্য করেন। কেউ হয়তো পাড়ায় ব্যবসা করতে হয় বলে টাকা দেন, কিন্তু জানাজানি হলে টাকা নিতে অনেক ক্লাবই হাজির হবে ভেবে বিজ্ঞাপন দেন না। যদিও এ বার বড় ঘাটতি দেখা গিয়েছে কর্পোরেট বিজ্ঞাপনেও। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক নীতিকেও দায়ী করেছেন অনেকে। কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার যেমন বলেন, “গাড়ি এবং অনুসারী শিল্পে প্রবল মন্দা। যার প্রভাব পড়ছে টিভি, ফ্রিজ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবসায়। এর সঙ্গে নানা কেন্দ্রীয় নীতি বাজারের শিরদাঁড়াই ভেঙে দিয়েছে। কর্পোরেটের হাতে তো টাকাই নেই।’’ ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোকর্তা দেবাশিস কুমারের আবার সংযোজন, “কর্পোরেট সংস্থা ভাবছে, অকারণ বিজ্ঞাপন দিয়ে খরচ বাড়িয়ে লাভ কী? গত বছর যখন বাজেট করেছিলাম তখনও মন্দা এই পর্যায়ে যায়নি। এ বার পুজোর এক মাস আগে দেখি, বিজ্ঞাপনের টাকাই আসছে না। সামনের বছর বাজেট কমাতেই হবে।”
এ বছরই অবশ্য বাজেট কমানোকে একমাত্র পথ ভেবেছিল সুরুচি সঙ্ঘ। ওই পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, “মণ্ডপে ঢুকে সে ভাবে কেউ কিছু বুঝতে পারেননি। তার কারণ, বাজেট কমিয়েই যা করার করা হয়েছে। আমাদেরও বাজেট ৩০-৪০ শতাংশ কমাতে হয়েছে।” একই দাবি নাকতলা উদয়নের পুজো উদ্যোক্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তেরও। তিনি বলেন, “খরচ কমানোই এ বারের পুজোর একমাত্র পথ ছিল। দেখবেন, কালীপুজোতেও একই অবস্থা থাকবে।” এর মধ্যেই অবশ্য হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীনের উদ্যোক্তা সুতপা দাস জানালেন, তাঁদের পুজোর যা বাজেট ছিল তা এ বার শেষ পর্যন্ত ১০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। ফলে তাঁদেরও ঘাটতি থেকেই যাবে।
হাতিবাগান সর্বজনীনের পুজোকর্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, “কিছু এলাকা থাকে, যেখানে তবু বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়। যেমন হাতিবাগান, গড়িয়াহাট, কসবা। এখানকার পুজোগুলো তবু বিজ্ঞাপন পেয়েছে। বাকিদের তো তেল-সাবানের বিজ্ঞাপনে পুজো করতে হয়েছে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy