সঙ্কটে: নিমতার বাড়িতে কৃষ্ণ আচার্য। (পাশে) কৃষ্ণের পায়ের অবস্থা। নিজস্ব চিত্র
কতটা ক্ষত হলে তবে সরকারি হাসপাতাল ভর্তি নেবে?
নিমতার ঠাকুরতলা বাঁশবাগানের বাসিন্দা, বছর কুড়ির কৃষ্ণ আচার্য গত ১৪ জুলাই বি টি রোডে সাইকেল থেকে পড়ে যান। তাঁর ডান পায়ের পাতার উপর দিয়ে চলে যায় গাড়ির চাকা। খাবলা হয়ে মাংস উঠে গর্ত হয়ে যায় পায়ে। সেই পা নিয়েই ১৪ জুলাই থেকে এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চক্কর কেটে যাচ্ছেন তিনি। সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল তাঁর দায়িত্ব নিতে চায়নি। আর আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতি সপ্তাহে ‘রিগ্রেট, নো বেড’ লিখে ফেরত পাঠাচ্ছে। কৃষ্ণর ডান পায়ের পাতা এখন কার্যত পচনের আগের অবস্থায় পুঁজ-রক্ত-মাংসের একটা গর্ত।
এই অবস্থায় আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আউটডোর থেকে ভর্তির সম্মতির বদলে তিনি প্রতি সপ্তাহে পাচ্ছেন একটা ‘তারিখ’। প্রথমে ১৭ জুলাই, তার পরে ২৪ জুলাই আর এ বার ৭ অগস্ট। কৃষ্ণর অভিযোগ, সেই তারিখ লেখার সময়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক আবার ‘পরামর্শ’ দিচ্ছেন, ‘‘সকাল সাতটার আগে এসে লাইন দেবে। আমাদের ‘ফার্স্ট কাম ফার্স্ট সার্ভ’। প্রথম আট জনকে নেওয়া হবে। মিস হলে তোমার পায়ের যা অবস্থা তাতে পা কাটতে হবে!’’
আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য কৃষ্ণকে দেখছেন। তাঁর অবশ্য দাবি, ‘‘এখনও গ্যাংগ্রিন হয়নি। এটা নন-হিলিং আলসার। আমরা এই সব কেস জলভাত হিসেবে দেখি। ভর্তি নেওয়া হয় না। রোগীর স্বাস্থ্য ভাল। স্টেডি আছে। এখানে মাত্র ৪০টা বেড। খুব টানাটানি। এর থেকে অনেক খারাপ রোগী আসেন। তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।’’
আর জি করে শয্যা ফাঁকা না থাকার কথা লিখে দেওয়া হয়েছে।
ভর্তি প্রয়োজন না হলে হাসপাতালের কাগজে ‘রিগ্রেট, নো বেড’ লেখা হল কেন? তাঁর জবাব, ‘‘ওটা জুনিয়র ডাক্তার ভুল করে লিখেছে। আউটডোরে সব রোগী তো আমি নিজে দেখতে পারি না। কাগজে আমার নাম থাকলেও জুনিয়রেরা দেখে। ওরা না বুঝে লিখেছে। এই রোগীকে বাড়িতে স্যালাইন ওয়াটারে ড্রেসিং করতে হবে।’’
আগামী ৭ অগস্ট তা হলে রোগীকে ভর্তির জন্য সকাল থেকে লাইন দিতে বলা হল কেন? রূপনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘ওটাও কোনও জুনিয়র ভুল করে বলেছে। এ রকম কিছু হয় না। আমি ওদের সতর্ক করে দেব।’’
তিনি অবশ্য একই সঙ্গে রোগীর অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেছেন। অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি হিসেবে অনেক পরীক্ষাও করাতে দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষত আরও শুকোলে তবেই অস্ত্রোপচার হবে। কিন্তু কৃষ্ণর বাড়ির লোকের অভিযোগ, গত কয়েক সপ্তাহে ক্ষত আরও মারাত্মক আকার নিয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, বাড়িতে বসেই পাটা এ বার পচে যাবে। রূপনারায়ণবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ভাল ভাবে ড্রেসিং করলে পচন ধরার প্রশ্নই নেই। শুধু ড্রেসিংয়ের জন্য তো একটা লোককে হাসপাতালের বেড দেওয়া যায় না।’’ বস্তি এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণ ব্যাগের কারখানার কর্মী। লেখাপড়া বেশি নয়। মা লোকের বাড়ি কাজ করেন। তাঁরা ড্রেসিং বিষয়টাই ঠিকঠাক বুঝতে পারছেন না।
প্রশ্ন উঠছে, আঘাতপ্রাপ্তকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ক্ষত আরও বিষিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করাটা কেমন চিকিৎসাপদ্ধতি? বিশেষ করে পথ দুর্ঘটনার রোগী কেন আলাদা গুরুত্ব পাবেন না?
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এটা একটা গুরুতর সমস্যা। অতি জটিল রোগীকে আগে ভর্তি করা উচিত। কিন্তু শয্যার অপেক্ষায় থেকে অপেক্ষাকৃত কম জটিল রোগীর সমস্যাও ক্রমশ জটিল হচ্ছে। আমরা এর একটা সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy