প্রতীকী চিত্র।
কলেজ স্ট্রিট যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করেছিলেন পাটুলির এক যাত্রী। ফোন করে অ্যাপ-ক্যাব চালক মিলনকুমার দাস জানতে পারেন, আপৎকালীন কারণ নয়, বরং বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইছেন ওই যাত্রী। চিকিৎসা, অসুস্থতা, জরুরি পরিষেবা, ট্রেন বা বিমানে সফর-সহ যে সব ক্ষেত্রে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র মিলছে, তা ছিল না ওই যাত্রীর কাছে। মিলন যেতে আপত্তি করলে সোজা ক্যাব সংস্থার কাছে তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের করেন ওই যাত্রী।
এখানেই শেষ নয়। পরের দিন বাঘা যতীন থেকে বেহালায় আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য মিলনের ক্যাব ভাড়া করেন এক যাত্রী। গড়িয়ার বাসিন্দা মিলনের কথায়, ‘‘দুপুরের দিকে ওই যাত্রী আত্মীয়ের বাড়ি যেতে চাইলে বিধিনিষেধের কথা জানাই। তাতে উল্টে তিনি আমাকেই বকাঝকা শুরু করেন এবং আমার নামে অভিযোগ করবেন বলে জানান।’’ বাধ্য হয়ে মিলন ওই সফর বাতিল করার পরে তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের করেন সেই যাত্রী। আরও দুই অভিযোগের পরে মিলনের অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয় ক্যাব সংস্থা।
তিনি একা নন, করোনা পরিস্থিতিতে কড়াকড়ির সময়ে এক শ্রেণির যাত্রীদের কারণে অ্যাপ-ক্যাব চালকেরা সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। উপযুক্ত কারণ ছাড়া গন্তব্যে যেতে চাওয়া যাত্রীদের কাছে ই-পাস বা অন্য প্রমাণ না থাকায় চালক সফর বাতিল করলে সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করছেন তাঁরা। আর সংস্থাও একতরফা ভাবে চালকের আইডি ব্লক করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
যেমন, দিন কয়েক আগে বাগুইআটির তরুণী সল্টলেকে বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার জন্য বিরাটির অ্যাপ-ক্যাব চালক প্রলয় লাহিড়ীর গাড়ি বুক করেন। কিন্তু ই-পাস না থাকায় প্রলয় যেতে অস্বীকার করলে তাঁর নামে অভিযোগ দায়ের করেন যাত্রী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই প্রলয়ের অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।
দিন কয়েক আগে, এসএসকেএমের এক চিকিৎসক হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার জন্য অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করলে তাঁকে পরিচয়পত্র হোয়াটসঅ্যাপ করতে বলেন চালক। কিন্তু অপরিচিত কাউকে পরিচয়পত্র পাঠাতে চাননি চিকিৎসক। রাস্তায় পুলিশ আটকালে সরাসরি যাত্রীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেওয়ার পরে সমস্যায় পড়তে হয়নি চালককে।
এ দিকে অভিযোগ, বিধিনিষেধের মধ্যে এই সমস্যা মেটাতে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলি যাত্রীদের কাছে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ ও তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করেনি। শুধু অ্যাপে যাত্রীকে ই-পাস সংক্রান্ত সতর্কবার্তা দিয়েই দায় সারছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘অ্যাপে যাত্রীকে সতর্কবার্তা দেখিয়েই দায় সারছে ক্যাব সংস্থাগুলি। যাত্রী সফরের শর্ত পালন করছেন কি না, তা দেখার ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তায় বেরিয়ে পুলিশের মোকদ্দমার মুখে পড়তে হচ্ছে চালকদের।’’ ক্যাব সংস্থাগুলি সূত্রের খবর, অনলাইনে যাত্রীর থেকে নথি সংগ্রহ এবং তা খতিয়ে দেখার মতো ব্যবস্থা তাদের নেই। অদূর ভবিষ্যতে এমন ব্যবস্থা চালু করা যাবে কি না, সেই প্রশ্নেরও উত্তর নেই আধিকারিকদের কাছে। ফলে চালকদের সমস্যা বাড়ছে। এক অ্যাপ-ক্যাব চালক বলেন, ‘‘এমনিতেই রোজগার নেই। তার পরে সরকারি বিধিনিষেধ ভাঙার জন্য পুলিশ মামলা করলে খাব কী?’’ তবে গিল্ডের সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সমস্যার কথা জানিয়ে তাঁরা ইতিমধ্যেই রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তাতে সরকারের কাছে আর্থিক সাহায্য চাওয়া ছাড়াও ক্যাব সংস্থার নানা অনিয়মের কথা তাঁরা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy