ফাইল চিত্র।
জলে ডুবে গেলে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে, যাঁরা রোয়িং করেন, তাঁদের কি সেই বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে? রবীন্দ্র সরোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে এমনই প্রশ্ন তুলে দিল জাতীয় বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি) স্বীকৃত সংস্থা ‘লাইফ সেভিং সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’ (এলএসএসআই)।
প্রসঙ্গত, পাঁচ বছর আগে কলেজ স্কোয়ারের জলে ডুবে এক সাঁতারুর মৃত্যুর পরে কলকাতা পুরসভা সুইমিং ক্লাবগুলিকে নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সেখানে এলএসএসআই পুরসভাকে সাহায্য করেছিল। সেই সঙ্গে পুরসভার অধীন সুইমিং পুলগুলিতে আপৎকালীন নিরাপত্তার কাঠামো ও ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে অডিটের ব্যবস্থাও করেছিল ওই সংস্থা।
ওই সংস্থার তরফে রবীন্দ্র সরোবরের ঘটনা প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলা হয়েছে। যেমন, সেফটি বোট ছাড়াই কেন সংশ্লিষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষ রোয়িংয়ের অনুমতি দিলেন? জলে পড়ে গেলেও বোট ধরে ভেসে বেঁচে থাকা যায়। এই সাধারণ শিক্ষাটি যাঁরা রোয়িং করেন, তাঁদের কি দেওয়া হয়? সংস্থার ম্যানেজিং ট্রাস্টি প্রদীপ্ত ঘোষাল জানাচ্ছেন, দুপুর ৩টের পর থেকে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার পূর্বাভাস ছিল। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস তো বটেই, সেই সঙ্গে টিভি, রেডিয়ো-সহ সমস্ত জায়গাতেই তার প্রচার করা হয়েছিল। সব থেকে বড় কথা, সাধারণ চোখেই দেখা যাচ্ছিল, কী ভাবে আকাশ কালো করে এসেছে। প্রদীপ্তবাবুর প্রশ্ন, ‘‘সেখানে দু’জনকে রোয়িং করার অনুমতি দিয়ে দেওয়া হল? এর দায় কার?’’
সংস্থার তরফে আরও জানানো হচ্ছে, হাওয়ার গতি ঘণ্টায় ১৫-২৪.৫ কিলোমিটারের বেশি থাকলে রোয়িং সম্ভব নয়। সেখানে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে হাওয়ার গতি ৫০-৬০ কিলোমিটার থাকার কথা বলা হয়েছিল। প্রদীপ্তবাবুর কথায়, ‘‘হাওয়ার ওই গতির মধ্যে রোয়িং কী ভাবে সম্ভব? কারও এতটুকু নজরে পড়ল না?’’ এ বিষয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে ‘লাইফ সেভিং সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’। তা হল, সাধারণ ধারণা বলে যে, যাঁরা সাঁতার জানেন, তাঁরা জলে ডুবে সচরাচর মারা যান না। কিন্তু এ বিষয়ে সমীক্ষা দেখিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে যত জনের ডুবে মৃত্যু হয়, তাঁদের ৫৩ শতাংশই কোনও না কোনও ভাবে সাঁতার জানেন। ফলে রোয়িং করলে, সাঁতার শিখলেই জলে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকা যায়, এই ধারণা যে প্রাণহানির কারণ হতে পারে, তা রবীন্দ্র সরোবরের ঘটনায় প্রমাণিত বলে জানাচ্ছেন সংস্থার কর্তারা।
অন্য দিকে, প্রাক্তন ও বর্তমান রোয়ারদের অনেকেরই মতে, এই খেলায় বিপদেও মাথা ঠান্ডা রাখাটা নৌকা বাইতে পারার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের বক্তব্য, সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা আর ঘূর্ণির মধ্যে সরোবরের জল সাঁতরে পেরোনোর মধ্যে অনেক তফাত। শনিবারের ওই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছিল, বিভিন্ন স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের রোয়িং প্রতিযোগিতায় পাঠানো হলেও যে প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ দরকার, তাদের তা থাকে কি?
এক প্রাক্তন রোয়ারের কথায়, ‘‘কেউ ভাল সাঁতার জানলে কিংবা জোরে দাঁড় টানতে পারলেই তিনি যে রোয়িংয়ে ভাল হবেন, তার মানে নেই। নৌকা উল্টে গেলে কেউ যদি সাঁতার কাটতে যান, তার অর্থ, প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হয়নি। সে দিনও ওই দুই ছাত্র সাঁতার কাটতে গিয়েছিল।’’
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দেড়েকের প্রশিক্ষণ পেয়েছিল ওই ছাত্রেরা। কিন্তু প্রশিক্ষিত রোয়ারেরা জানাচ্ছেন, শিকল বাঁধা নৌকায় দাঁড় টানা, সরোবরে একা ডিঙি বাওয়া বা ওই জলে সাঁতার কাটার মতো প্রশিক্ষণের অনেক ধাপ রয়েছে। আর এক প্রাক্তনীর মতে, ‘‘স্কুলের হয়ে যারা রোয়িংয়ে নামে, তাদের অত প্রশিক্ষণ থাকে না। তাই ক্লাবগুলির উচিত, নিরাপত্তায় জোর দেওয়া।’’
লেক ক্লাবের সাম্মানিক সচিব দেবব্রত দত্তের অবশ্য দাবি, ‘‘সকলেই সরোবরের কোনও না কোনও ক্লাবে প্রশিক্ষণ নেয়। ওরা ফাইনালে উঠেছিল মানে অনেকটা শিখে নিয়েছিল। এর পরে রাজ্য-সহ অন্যান্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যাওয়ার কথা ছিল। ওই চার জন আমাদের ক্লাবের সদস্যও হয়েছিল।’’ দেবব্রতবাবু জানান, তাঁদের মাঝিরা সকলেই দক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘আগে সাইকেলে ঘুরে প্রশিক্ষকেরা সবাইকে সতর্ক করতেন। কিন্তু পরে লেকে সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। তবে প্রশিক্ষকেরা সব সময়ে সতর্কই থাকেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy