Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
RG Kar Incident

তিন শর্তে বৈঠকে রাজি জুনিয়র ডাক্তারেরা, রাজ্যের ইমেল এলেই রওনা দেবেন, এ বার কি অচলাবস্থা কাটবে?

চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে পাল্টা ইমেল করা হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, জনসাধারণের স্বার্থে আজ বৈঠকে যাচ্ছেন তাঁরা। এ-ও জানানো হয়েছে, স্বচ্ছতার দাবিতে তাঁরা এখনও অনড়।

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা।

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৩৫
Share: Save:

সোমবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠকের ডাক পেয়েছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুপুর পর্যন্ত বৈঠকের পর আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এ বার জানিয়ে দেওয়া হল, বৈঠকে তাঁরা যেতে ইচ্ছুক।

দুপুর ৩টে ৫৩ মিনিটে চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে পাল্টা ইমেল করা হয়। সেখানে জানানো হয়েছে, জনসাধারণের স্বার্থে আজ বৈঠকে যেতে ইচ্ছুক তাঁরা। এ-ও জানানো হয়েছে, স্বচ্ছতার দাবিতে তাঁরা এখনও অনড়। বৈঠকে যেতে রাজি হলেও তিনটি শর্ত সরকারকে দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আন্দোলনকারীরা ইমেলে বলেছেন, ‘‘টালা থানার ওসি গ্রেফতার হওয়ার ফলে বৈঠকের স্বচ্ছতা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র দাবি, দু’পক্ষই ভিডিয়ো করুক। সেটা সম্ভব না হলে আমাদের দ্বিতীয় দাবি, সরকার ভিডিয়ো করুক। বৈঠক শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিডিয়ো আমাদের হাতে দিক। সেটাও সম্ভব না হলে তৃতীয় দাবি, দু’পক্ষই বৈঠকের কার্যবিবরণী লিখবে। আমরা কার্যবিবরণী লেখার লোক নিয়ে যাব। সকলে সই করার পর তা আমাদের হাতে তুলে দিতে হবে। পাঁচ দফা দাবি নিয়েই আমরা আলোচনা করতে চাই। আমাদের শর্তে রাজি হলে সরকার অবিলম্বে জবাব দিক। আমরা বৈঠকে হাজির হওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব।’’

সোমবার সকালেই আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের আবার ডাকা হয় বৈঠকের জন্য। সোমবার বিকাল ৫টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে ডাকা হয় তাঁদের। এই মর্মে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থের তরফ থেকে সকাল ১১টা ৪৮ মিনিটে ইমেল পান জুনিয়র ডাক্তারেরা। ইমেলে জানানো হয়, সরকারের তরফ থেকে এটিই ‘পঞ্চম এবং শেষতম চেষ্টা’।

ইমেলে আরও বলা হয়, ‘‘গত ৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টা থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে। নাগরিক হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পালন করা আমাদের কর্তব্য। তাই এটা আপনাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক করানোর জন্য আমাদের তরফে পঞ্চম এবং শেষতম চেষ্টা। খোলা মনে আলোচনার জন্য কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী বাড়িতে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, সুচিন্তার জয় হবেই।’’ এও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আগের দিনের শর্ত অনুযায়ী এই বৈঠকেরও কোনও ভিডিয়োগ্রাফি বা সরাসরি সম্প্রচার হবে না কারণ, বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। পরিবর্তে বৈঠকের পুঙ্খানুপুঙ্খ কার্যবিবরণী প্রকাশ করা হবে, তাতে দু’পক্ষেরই সই থাকবে। ইমেল পেয়ে যদিও সুর নরম করেননি ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘‘খোলা মনে’ বৈঠকের জন্য শুরু থেকেই রাজি ছিলাম। এখনও রাজি। আমাদের পাঁচ দফা দাবি নিয়েই আমরা বৈঠকে যাব।’’

শনিবার ডাক্তারদের যে প্রতিনিধিরা বৈঠকের জন্য কালীঘাটে এসেছিলেন, সোমবারও তাঁদেরকেই আসতে অনুরোধ করা হয়েছে ইমেলে। অর্থাৎ সোমবারও চিকিৎসকদের ৩০ জন প্রতিনিধিকেই ঢুকতে দেওয়া হতে পারে। বিকাল ৪টে ৪৫ মিনিটের মধ্যে তাঁদের কালীঘাটে পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে। যদিও সকাল থেকে ইমেল পাওয়ার পর প্রাথমিক ভাবে ডাক্তারদের প্রতিক্রিয়া কিংবা পরবর্তী পদক্ষেপ জানা যায়নি। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অনিকেত মাহাতো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, আপাতত সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিরা বৈঠকে বসছেন। বৈঠকের পর তাঁদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। দুপুর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত সেই বৈঠক চলে। এর পরেই কথা মতো নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন তাঁরা।

উল্লেখ্য, আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নায় বসেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সোমবার তাঁদের ধর্নার সপ্তম দিন। এর মাঝে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করা হলেও প্রতি বারই ভেস্তে গিয়েছে সব আয়োজন। প্রথম থেকেই ডাক্তারেরা বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারের দাবিতে অনড় ছিলেন। আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের প্রথমে নবান্নে ডাকা হয়েছিল। সে দিন মুখ্যমন্ত্রী দু’ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করলেও বৈঠক হয়নি। সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হয়নি সরকার। তার পর শনিবার আচমকা সল্টলেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চে পৌঁছে যান মমতা। ডাক্তারদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। সে দিনই আবার বিকালে তাঁদের কালীঘাটে ডাকা হয়। কিন্তু সে দিনও সরাসরি সম্প্রচার এবং বৈঠকের ভিডিয়োগ্রাফির দাবি নিয়ে মতানৈক্যে আবার ভেস্তে যায় বৈঠক। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অপেক্ষা করেছিলেন ডাক্তারেরা। মমতা নিজেও বেরিয়ে এসেছিলেন। বৈঠক না করতে চাইলে তাঁদের অন্তত চা খাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও রাজি হননি জুনিয়র ডাক্তারেরা।

কালীঘাট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডাক্তারেরা জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো নিজেদের সব শর্তই ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। সরাসরি সম্প্রচার এবং ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই বৈঠক করতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু শেষে তাঁদের বলা হয়, তিন ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করেছেন। আর বৈঠক সম্ভব নয়। আবার সল্টলেকের ধর্নামঞ্চে ফিরে আসেন ডাক্তারেরা। তার পর সোমবার আবার তাঁদের বৈঠকের জন্য ডাকা হল। এ বার কী হয়, সেই আশাতেই ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্য বাসী।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy